রমজানের আগের দিনও বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম

প্রকাশিত: ০৬ মে ২০১৯, ০৮:২০ পিএম

মঙ্গলবার (৭ মে) পবিত্র রমজান। আজ সোমবার থেকে আবারও দ্বিতীয় দফায় নিত্যপণ্যর দাম বেড়েছে। রমজানের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রথম দফায় একবার নিত্যপণ্যর দাম বেড়েছিল। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এই সময়ে নিত্যপণ্যসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বাড়লেও বাজারে যোগানের কমতি থাকে না।

সরকারের সংস্থাগুলোর হিসাবে এসব পণ্যের আমদানি আর এলসিও খোলা হয়েছে চাহিদা অনুযায়ী। তারপরও কেন দাম বাড়ে এ নিয়ে মতবিরোধ ক্রেতা বিক্রোদের। অনেক পন্যের দাম নাগালের বাইরে থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় বাজার মনিটরিং এমন অভিযোগ ক্রেতাদের আর বিক্রেতারা বলছেন এই সময়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব শুধু ঢাকাতেই নয় খুলনাতেও এর প্রভাব পড়েছে।

আমদানি আর এলসির পরিসংখ্যান বলছে, বাজারে পণ্যের সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। এমনকি কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে চাহিদার চেয়ে বেশি সরবরাহ আছে।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিকটন। আর শুধু রোজায় চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিকটন। গেল অর্থবছরে ভোজ্যতেল আমদানি হয় ২১ দশমিক ১৬ লাখ মেট্রিকটন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৬৯ লাখ মেট্রিকটন তেল আমদানি করা হয়েছে। আলোচ্য সময়ে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৬ লাখ মেট্রিকটন।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ৮০ থেকে ৮৪ টাকা, বোতলজাত তেলের ১০০ থেকে ১০৬ টাকা এবং পাম অয়েলের ৬০ থেকে ৬৬ টাকা।

বছরে চিনির চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ টন হলেও রোজায় চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিকটন। আর এ চাহিদা মেটানোর লক্ষে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ১০ দশমিক ৭৩ লাখ মে. টন চিনি আমদানি করা হয়েছে। একই সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৭ লাখ মেট্রিকটনের। রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা ৫ লাখ মেট্রিকটন। এ চাহিদা পূরণের লক্ষে আমদানি করা হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ লাখ মেট্রিকটন। আর আমদানির লক্ষে ৮ লাখ মেট্রিকটনের এলসি খোলা হয়েছে। দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিকটন। বাকি চাহিদা পূরণ হয় দেশীয় উপাদানে।

বছরে ছোলার চাহিদা এক লাখ মেট্রিকটন হলেও শুধু রমজানেই এ চাহিদা ৮০ হাজার মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে ৮৯ হাজার মেট্রিকটন। একই সময়ে আমদানির লক্ষে ৮৪ হাজার মেট্রিকটনের এলসি খোলা হয়েছে। ৭৫ থেকে ৯০ টাকা দরে খুচরা বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে।

খেজুরের চাহিদা বছরে ২৫ হাজার মেট্রিকটন হলেও শুধু রোজাতেই এ চাহিদা ১৮ হাজার মেট্রিকটন। চাহিদা মেটানোর জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিকটন আমদানি করা হয়েছে। আর এলসি খোলা হয়েছে ২১ হাজার মেট্রিকটন। মসুরডালের বার্ষিক চাহিদা ৪ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিকটন। আর রোজাতে চাহিদা ৮০ হাজার মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিকটন মসুর ডাল আমদানি করা হয়েছে। আর এলসি খোলা হয়েছে ১ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিকটন।

চাহিদার বিপরীতে সরবরাহের এমন হিসাবের সঙ্গে মিল নেই বাজারে। সোমবার কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা মাসুক বলেন, মাস দুয়েক আগে ভারতীয় পেয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। এখন কিছুটা বেড়েছে। আর দেশি পেয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। মূলত রমজানের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বাড়ে। একই কথা জানালেন কারওয়ান বাজারের আরেক বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, রমজানে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় পেয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। ক্রেতারাও বেশি ক্রয় করেন। মূলত এ কারণেই দামের উপর প্রভাব পরে। এই সময়ে বেড়েছে রসুনের দাম। পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহ আগে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজিতে। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি রসুন ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে আদা ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে দাম পড়ছে ১৩০ টাকা। রোজার অন্যতম ভোগ্য পণ্য ছোলার কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। সপ্তাহ খানেক আগে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। মসুর ডাল ৬০ থেকে ৯০ টাকা, মটর ৪০ টাকা, বেসন ৬৫ থেকে ১০০ টাকা ও চিনি (সাদা) ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খেজুর প্রকার বেধে ২২০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারে ধানমন্ডি থেকে আসা সিদ্দিকুর রহমান জানান, স্থানীয় বাজারগুলোতে পণ্যের দাম অনেক বেশি। কারওয়ান বাজারে যে পণ্য ৫০ টাকায় পাওয়া যায় স্থানীয় দোকান বা বাজারে তা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কম দামের আশায় কারওয়ান বাজারে আসলেও এখানে অনেক পন্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম বেশি বেড়েছে। এমন অনেক পণ্য আছে সেগুলোর দাম এখনই নাগালের বাইরে।

তিনি বলেন, এই সময়টিতেই বাজারে পণ্যের দাম বাড়ে। সরকার এ বিষয়ে অবগত থাকলেও কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন না। এমনকি বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণেরও কোন উদ্যোগ দেখা যায় না।

বিডি২৪লাইভ/আরএইচ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: