মিয়ানমারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় রুখতে হবে

প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:৫১ পিএম

ইতিহাসের লোমহর্ষক, ভয়াবহ, নিষ্ঠুরতম, বর্বরতম ও পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞকেও হার মানিয়েছে মিয়ানমারে চলমান রোহিঙ্গা নিধন অভিযান। ভাবতে অবাক লাগে, স্বয়ং সে দেশের সরকার এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার, সরকার প্রধান অং সান সুচী একজন নোবেলবিজয়ী। এক সময় ভাবা হচ্ছিল, তিনি ক্ষমতায় এলে রোহিঙ্গা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান হবে। এখন দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। হাজার হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী, নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষকে।

বিদ্রোহ দমনের নামে কুখ্যাত সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে অং সান সুচী মানুষ খুন করে নোবেল পুরস্কারকে কলংকিত করেছে। তিনি আবার এই জঘন্য সেনাবাহিনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং আরো লক্ষাধিক অপেক্ষমান সীমান্তে। নৌকাডুবিতে শত শত মানুষের সলিলসমাধি হয়েছে। বাকি মানুষেরা এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে জীবন বাঁচানোর জন্য। এক বিভীষিকাময় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। অং সান সুচীর নির্লজ্জ হায়ানারা নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে, শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, নৃশংসভাবে শত শত মানুষের গলা কেটে হত্যা করছে আর নির্যাতনের ভয়াল চিত্র দেখা যাচ্ছে যা বর্ণনাতীত। এই অসহায় মানুষগুলোর কী অপরাধ!

তারা মিয়ানমারে অবহেলিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত সংখ্যালঘু এক জনগোষ্ঠী। দীর্ঘদিন ধরে তারা নাগরিক সুবিধা পায়নি,অন্ধকারে থেকেই জীবন চলছিল। আজ তাদের বাঁচার অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে সুচী’র বর্বর সরকার। কোথায় আজ বিশ্ববিবেক? মানবতা আজ ভূলুণ্ঠিত মানবদরদীরা কথা বলছে না কেন? কেউ কেউ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, আবার কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন বলছে। এটাকে শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেই শেষ করা যায়? এ এক মানবিক বিপর্যয় শুধু প্রতিবাদ-নিন্দা করেই এর সমাধান সম্ভব নয়।কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এমনকি নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি পর্যন্ত নেই। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই এই জনগোষ্ঠী বিলীন হয়ে যাবে আর সবাই প্রত্যক্ষ করবে এক নির্মম-নিষ্ঠুর পরিণাম।

এ বীভৎস হত্যাযজ্ঞ আর চলতে দেয়া যায় না। এ পশুত্ব থেকে ওদের নিবৃত্ত করতে হবে। এজন্য বিশ্বমোড়লদের হস্তক্ষেপ চাই। শুধু প্রতিবাদ-নিন্দা নয়, প্রয়োজনে সামরিক অভিযান চালাতে হবে।   জাতিসংঘকে এগিয়ে আসতে হবে এই বিপর্যস্ত জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে। শুধু তাই নয়, অং সান সুচী ও তার জল্লাদবাহিনীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। জাতিসংঘের সামরিক বাহিনী মিয়ানমারে স্থায়ীভাবে অবস্থান নিতে হবে। শুধু হুঁশিয়ারি,সতর্কতা, হুমকি-ধমকি দিয়ে নরপিচাশদের দমানো যাবে না। ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’ প্রয়োজন হবে এ সমস্যা সমাধানে। যেহেতু বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাই বাংলাদেশ সরকারকেই বিশ্বজনমত অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

রাখাইন বা আরাকান রাজ্য রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি। এখানে শান্তিতে বসবাস করার অধিকার শুধু রোহিঙ্গাদেরই। মিয়ানমার সরকার ন্যাক্কারজনকভাবে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে মেতেছে। তারা জানে না , কোন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে যে কোন মূল্যে।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে এর শান্তিপূর্ণ  সমাধানে।কিন্তু মিয়ানমার সরকারের যুদ্ধংদেহী ভাব দেখে মনে হয় তারা কোন শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় না। তারা অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে এর পরিণাম ভয়াবহ।

লেখক,
মোঃ আবুল বাশার হাওলাদার,
সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি।

খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই।

বিডি২৪লাইভ/এএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: