স্কুল ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালো শিক্ষক

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ০৮:৪৮ পিএম

ঝিনাইদহে শিক্ষক কতৃক ছাত্রকে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। আহত ৪র্থ শ্রেণির মেধাবী সাইমুন হক ওরফে ইফতি নামের ওই ছাত্রকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। গ্রামীণ ফোনে কর্মরত আজমল হক ঝান্টু ও সেলিনা আক্তারের এক মাত্র ছেলে সাইমুন হক। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার বাম পায়ের হাটুতে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। 

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা ১২ টা ১০ মিনিটের সময় ঝিনাইদহ কাঞ্চননগর স্কুল এন্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে। জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আলমগীর হোসেন বিকেলে আহত ছাত্রকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। সে সময় ঘটনাটি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে হাসপাতালে ভর্তি আহত ছাত্র সাইমুন হক ওরফে ইফতি জানায়, বেলা ১২ টা ১০ মিনিটের সময় ক্লাসের অংক শিক্ষক কবীর উদ্দিন তাকে কাঠের তৈরি স্কেল দিয়ে বেদম ভাবে মারপিট করতে থাকে। সে আরো জানায় কাঠের স্কেল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়ে তাকে। মারপিটের এক পর্যায়ে তার বাম পায়ে আঘাত করতে থাকেন ওই শিক্ষক। এতে সে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তাকে বসিয়ে রাখা হয় ক্লাস রুমে। কেন তাকে মারপিট করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সে জানায় সব গুলো অংক হওয়ার পরেও স্যার তাকে মেরেছে। 

ইফতি আরো জানায় পরবর্তীতে খায়রুল ইসলাম নামের অন্য এক শিক্ষক ক্লাসে আসেন। তাকে দেখে অন্য সব ছাত্র উঠে দাঁড়িয়ে সন্মান জানালেও ইফতি উঠে দাঁড়াতে পারে না। এরপর ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়ে।

ইফতির বাবা আজমল হক ঝান্টু অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে মারপিট করে আহত করার পরেও স্কুল কতৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি। তিরন আরো অভিযোগ করেন ঘটনার প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টা পরে তাকে ফোনে খবর দেয়া হয়। তখন তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারে ছিলেন এবং সেখান থেকে ফিরে বেলা ২টার দিকে আহত ছেলেকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন তিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক কবীর উদ্দিন সরাসরি বলেন, ইফতি ৪র্থ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ও ক্লাস ক্যাপটেন। ক্লাসে দুষ্টুমি করার কারণে তাকে কাঠের স্কেল দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। সে আরো জানায় ছাত্র-ছাত্রীদের চড়থাপ্পড় মারার অপরাধে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮ বার তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। একবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলেও অকপটে স্বীকার করেন তিনি।

বিলম্বে খবর পেয়ে স্কুলটির অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমারসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত ওই ছাত্রকে হাসপাতালে দেখতে যান। এ সময় অধ্যক্ষ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্কুলের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে ঘটনার সাথে জড়িত খন্ডকালীন ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অধ্যক্ষর ভাষায় একই ধরনের ঘটনায় এর আগে কয়েক দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং এক দফায় সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানান অধ্যক্ষ। এই রিপোর্ট পাঠানোর সময় স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এ্যাড আজিজুর রহমান খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি সংবাদ প্রকাশে আপত্তি জানিয়েছেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেছেন খন্ডকালীন ওই শিক্ষককে চাকরি থেকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো: জাকির হোসেন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক আসাদুজ্জামান বিডি২৪লাইভকে জানান, অসুস্থ্য ছাত্রের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে এবং জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয়, হরিনাকুন্ডুর মোকিমপুর হাইস্কল, ঝিনাইদহ শিশুকুঞ্জু স্কুল এন্ড কলেজে ছাত্র পেটানোর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে করে অভিভাবক মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: