সরকারকে চাপে রাখতে যে সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৯:২৬ এএম

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে এবং তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি। এদিকে সমাবেশকে সামনে রেখে আরও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানা যায়।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সমাবেশের কথা জানান দলটির মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেবে বলে তিনি আশা করেন।

পরে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করতে পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ওইদিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চান তারা। এ জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

&dquote;&dquote;

এদিকে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন দিক থেকে সরকারকে চাপে রাখার জন্য মাঠের আন্দোলনের সঙ্গে কূটনীতিক পর্যায়ে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ইতোমধ্যে পশ্চিমা রাষ্ট্র ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নেতারা।

তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায় দলটি। যদিও দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে সরকারকে চাপে রাখতে এবং দেশি-বিদেশি শক্তিকে বার্তা দিতেই এ জমায়েতের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

কারণ ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের দিন যে সমাগম হয়েছে তাতে দলের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। এত নেতাকর্মীর সমাগম হবে তা ভাবতে পারেনি সরকার ও প্রশাসন।

বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করাই আমাদের সংগ্রাম। দেশনেত্রীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, দেশনেত্রীকে নিয়েই আমরা আগামী নির্বাচনে যাব। দেশনেত্রী ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

&dquote;&dquote;

দলটির নেতাদের ভাষ্য, দেশের মানুষ বিশ্বাস করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাকে কারাবন্দি, বিলম্বে ডিভিশন দেওয়া, রায়ের সার্টিফায়েড কপি এখন পর্যন্ত না দেওয়াসহ নানা কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। খালেদা জিয়ার রায়ের পর প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের অনুকুলে আছে। সরকারের কয়েকটি ভাবনা ইতোমধ্যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি বড় কর্মসূচি দিলে সরকার মামলা দিয়ে ধরপাকড় করত, কিন্তু এতে পা দেয়নি দল। খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হবে; বাস্তবতা হলো এখন পর্যন্ত অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে দল ঐক্যবদ্ধ আছে।

এছাড়া, তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হলে তার নেতৃত্ব কেউ মানবে না, এখানেও বাস্তবতা; এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। বরং তার নেতৃত্বে দল আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দলের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে পরামর্শ করেই নেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, জিয়া অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হতে পারে এই শঙ্কা নিয়ে আগেভাগেই সিনিয়র নেতারা নিজেদের বিভেদ মিটিয়ে এক টেবিলে বসেন। সময়টিকে ‘ক্রান্তিকাল ধরে’ খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ স্ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তারেক রহমানসহ বাকিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই কড়া নিরাপত্তায় খালেদা জিয়াকে ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

মামলার অভিযোগে যা আছে: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ পরিচালক হারুন-অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলায় আসামি যারা: এ মামলায় আসামি সংখ্যা ছয়জন। ওই মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে। অন্য আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সম্প্রতি জনমনে গুঞ্জন ওঠে। তবে রায় যেহেতু বিচারিক আদালত দিয়েছে তাই একে পূর্ণাঙ্গ রায় বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পেলেই রায় স্থগিত ও খালেদা জিয়ার জামিনে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানাচ্ছেন বেগম জিয়ার আইনজীবীরা।

যদিও সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের অধিক সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন- এই হল বিধান। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান। তবে আপিলের মধ্য দিয়ে ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকছে বিএনপি চেয়ারপারসনের সামনে।


বিডি২৪লাইভ/এএইচাআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: