আমেরিকার হাত থাকার কথা স্বীকার করল সৌদি আরব

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০১৮, ০১:০০ এএম

সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন, "আমেরিকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রিয়াদ বিশ্বব্যাপী উগ্র ওয়াহাবি মতবাদ বিস্তারের কাজ করছে।" তিনি বলেন, " শীতল যুদ্ধকালীন সময়ের প্রাচ্য ব্লককে মোকাবেলা করা ছিল ওয়াহাবি মতবাদ বিস্তারের উদ্দেশ্য।"

সৌদি যুবরাজ বিশ্বব্যাপী ওয়াহাবি মতবাদ বিস্তারে তার দেশের অর্থ সহায়তার কথা স্বীকার করে বলেছেন, "সেদেশে তৎপর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে মূলত: এসব অর্থের যোগান আসে।" এ খবর দিয়েছে পার্সটুডে।

প্রকৃতপক্ষে, উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর চিন্তা-চেতনার উৎসমূল হচ্ছে ধর্মের নামে সৃষ্ট বিকৃত ওয়াহাবি মতবাদ। এই মতবাদ মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রেরণা হয়ে উঠেছে এবং এর পেছনে রয়েছে সৌদি আরবের ভূমিকা। মুসলিম দেশগুলোতে উত্তেজনা, আতঙ্ক ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি এবং মুসলিম দেশগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো ওয়াহাবি মতবাদের প্রধান উদ্দেশ্য। উগ্র ওয়াহাবিরা মুসলমানদের সব মাজহাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং একমাত্র তারা ছাড়া অন্য সব মুসলমানকে বাতিলযোগ্য এমনকি কাফের বলে মনে করে।

ওয়াহাবিরা যেহেতু কোনো ভৌগোলিক সীমা-রেখা মানে না তাই তারা সারা বিশ্বে বিকৃত এই মতবাদ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। ওয়াহাবি মতবাদ ব্যবহার করে তাফকিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টিতে সৌদি আরবের ভূমিকা এতটাই স্পষ্ট যে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে, উগ্র ওয়াহাবি চিন্তা-চেতনাকে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছে। দৈনিকটি আরো লিখেছে, মধ্যপ্রাচ্যে তৎপর উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের আদর্শিক চিন্তা-চেতনার উৎপত্তি স্থল হচ্ছে ওয়াহাবি মতবাদ এবং সৌদি আরব এর মূল কেন্দ্র।

যাইহোক, দায়েশ ছাড়াও জাবহাতুন নুসরা, আল কায়েদা, তালেবান প্রভৃতি গোষ্ঠীগুলোর আদর্শিক চিন্তা-চেতনার উৎসভূমি হচ্ছে সৌদি আরব। এই গোষ্ঠীগুলোর নেতাকর্মীরা সৌদি আরবের বিভিন্ন ধর্মীয় স্কুল বা মাদ্রাসা থেকে ওয়াহাবি মতবাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন দেশে তা বাস্তবায়ন করছে। সন্ত্রাসীদের উৎসই হচ্ছে ওয়াহাবি মতবাদ এবং সৌদি আরব হচ্ছে এ মতবাদের রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর ওয়াহাবি মতবাদ বিস্তারে মার্কিন কর্মকর্তারাও যুক্ত হওয়ায় সারা বিশ্বের নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে রয়েছে।

আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল অটোয়াড মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে দায়েশ সন্ত্রাসীদের বিস্তারে আমেরিকা ও সৌদি আরবের হাত থাকার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সন্ত্রাসীরা মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। মার্কিন দৈনিক হাফিংটন পোস্টও লিখেছে, বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের প্রধান উৎস ওয়াহাবি মতবাদ এবং এর সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে সৌদি আরব। দৈনিকটি আরো লিখেছে, আমেরিকার উচিত এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোকে সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকা।

যাইহোক, সৌদি সরকার বিশ্বজুড়ে উগ্র সন্ত্রাসীদের সবচেয়ে বড় সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক। আর রিয়াদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রেখে ওয়াশিংটনও নিজের অশুভ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে।    

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: