‘আমার মা’র টুকরো মরদেহ বুকে নিয়ে আমি ঘুমাবো’
ব্যাগের ভেতর ১২ টুকরা লাশ! চলতি মাসের ৫ জুলাই লাশটি উদ্ধার হলেও কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। মুহূর্তের মধ্যেই সেই খবরটি পৌঁছে যায় সবখানে। সুদূর মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ সর্বত্রই খবরটি পৌঁছে যায়।
মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও ছবি দেখে গত ১১ জুলাই নিহতের স্বজনরা শনাক্ত করেছেন ওই নারীর লাশ। নিহত সাজেদা-ই বুলবুল (২৯) বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি পটুয়াখালী জেলার পুরাতন আদালত পাড়ার ৯৯ বড় মসজিদ মহল্লার আনিস হাওলাদারের (ফিটার) মেয়ে।
মালায়শিয়ার কুয়ালামপুরে বাংলাদেশি সাজেদা-ই বুলবুল নামের ওই গৃহবধূকে কেটে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, মেয়ের মরদেহ পেতে এখন আহাজারি করছেন বাবা মো: আনিস হাওলাদার (ফিটার)।
আনিস হাওলাদার বলেন, ‘তোমরা আমার জীবিত মেয়েকে এনে দাও। যদি নাও পারো, তবে মরদেহ এনে দাও। আমার মা’র টুকরো টুকরো মরদেহ বুকে নিয়ে আমি ঘুমাবো।’
নিহত সাজেদা-ই বুলবুলের বাবার এমন আহাজারিতে পটুয়াখালীর পুরাতন আদালত পাড়ার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। আকুতি জানাতে জানাতে এখন পাগল প্রায় অবস্থা তার।
মালায়শিয়ার কুয়ালামপুরে গত ৫ জুলাই এ হত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ঘটনার ৮ দিন পরও বুলবুলের মরদেহ বাংলাদেশে আসেনি। বুলবুলের হত্যার পর থেকেই বাবার এই আকুতি। তার বর্তমান অবস্থা দেখে আত্মীয়-স্বজন থেকে প্রতিবেশীরা অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ সুবিধাখালীর ঘটকের আন্দুয়া এলাকার সোহরাফ ফকিরের ছেলে শাহজাদা সাজুর সঙ্গে বিয়ে হয় সাজেদা-ই বুলবুলের। তাদের সংসারে মুগ্ধ (৭) নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
বাংলাদেশে থাকাকালীন অবস্থায় বিয়ের পর বুলবুলকে নির্যাতন করায় ঢাকায় একটি এজহারও দায়ের হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর তাকে মালেয়েশিয়ায় নিয়ে যায় তার ঘাতক স্বামী শাহজাদা।
নিহত সাজেদা-ই বুলবুলের বোন খাদিজা পারভিন উপমা জানান, বুলবুল বেসরকারি প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাস করেন। উচ্চতর পড়াশোনা করার প্রলোভন দেখিয়ে বুলবুলকে ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মালেয়েশিয়ায় নিয়ে যায় শাহজাদা। সেখানে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করা হতো বুলবুলের ওপর। এমনকি ২-৩ দিন পরপর তাকে খাবার দেয়া হতো। এসব ঘটনা বুলবুল তার বাবা-মাকে মাঝে মধ্যেই জানাতো। এক পর্যায় গিয়ে বুলবুলকে অমানবিক নির্যাতন করতে শুরু করে তার স্বামী শাহজাদা। বাংলাদেশ থেকে বুলবুলের ওপর নির্যাতনের জন্য শাহজাদাকে উসকে দিতেন তার মা, বোন, মামাসহ অন্যান্যরা এমন অভিযোগ করেন উপমা।
উপমা আরো জানান, স্বামী শাহজাদার অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বুলবুল এক আত্মীয়ের বাসায় পালিয়ে যায়। ওই আত্মীয়ের বাসায় দুই তিন দিন থাকার পর শাহজাদা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় বুলবুলকে নিজ বাসায় ফিরিয়ে আনেন। এর পর পরই নির্মম খুনের শিকার হন বুলবুল।
তিনি আরো জানান, শাহজাদা খুনের পর বুলবুলের মরদেহ একটি লাগেজে ভরে কুয়ালামপুরের এক জঙ্গলে ফেলে দেয়। মালয়েশিয়া পুলিশ সেখান থেকে লাগেজ ভর্তি মরদেহটি উদ্ধার করে।
নিহত বুলবুলের ভাই ফারুক বোনের শোকে যেন তাকে নির্বাক করে দিয়েছে।
বুলবুলের মা মমতাজ বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ছয় ছেলে মেয়ের মধ্যে বুলবুল সবার ছোট ও অনেক আদরের মেয়ে আমার। উচ্চতর পড়াশোনা করার প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়েকে বিদেশে নিয়ে গেছে জামাই (শাহাজাদা)। আজ আমার মেয়ে মারা গেছে কিন্তু ওর মরদেহ টা পর্যন্ত দেখতে পাইনি বলে আকুতি জানান তিনি।
যদিও এ বিষয়ে খুনি শাহজাদার বড় ভাই শহিদ ফকির জানান, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর ১০ বছর ধরে শাহজাদার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। এখন আমরা সবাই আলাদা। এ ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই যানি না।’
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: