থমথমে পরিস্থিতি পাহাড় জুড়ে 

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০১৮, ০৯:৪৩ পিএম

নানিয়ারচরে ব্রাশ ফায়ারে ৬ জন নিহত হওয়ার ক্ষত এখনো শুকায়নি। আর এরই মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভরে আবারো উপজাতি সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে ৭টি লাশ পড়ল। এছাড়া গত সাত মাসে থেমে থেমে পাহাড় জুড়েই আরও প্রায় ৩২টি লাশ পড়েছে। রক্তের পিপাসা যেন মিটছেইনা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর। পাহাড়ের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কেউ যেন নিরাপদ নয়।

পাহাড়ে বিবদমান পাহাড়ি সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তার লড়াই, চাঁদাবাজি, খুন-অপহরণ এখন নিত্য দিনের ঘটনা। পাহাড়ে বিবদমান সংঘাতে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সচেতন মহল  উদ্বেগ-উৎকন্ঠা প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কয়েকশ সন্ত্রাসীর হাতে জেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। এর অবসান হওয়া দরকার।

এ দিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্বার, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ও এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় রবিবার (১৯ আগস্ট) থেকে খাগড়াছড়িতে যৌথ চিরুনী অভিযান শুরু হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহমদ খাঁন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আমর্ড পুলিশ অভিযানে থাকবে। যত দিন সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব হবে না ততদিন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে ব্রাশফায়ারে হতাহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইউসুফ আলীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাহাড়ে চলমান সংঘাত-সংঘর্ষের অবসান ও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি  চায় এলাকার শান্তি প্রিয় মানুষ।

অপরদিকে সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জন নিহতের প্রতিবাদে সোমবার খাগড়াছড়িতে অর্ধবেলা সড়ক অবরোধ ডেকেছে ইউপিডিএফ (প্রসীত) সমর্থিত তিন পাহাড়ি সংগঠন।

আধিপত্য বিস্তারের জেরে গেল শনিবার সকালে খাগড়াছড়িতে স্বর্নিভর বাজারে বিবদমান দুই পাহাড়ি গ্রুপের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী বন্দুক যুদ্ধে ৭ জন নিহত হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পর সর্বত্র থমথমের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো: সাহাদাত হোসেন টিটু জানান, সংঘর্ষের হতাহতের ঘটনায় এখনো কোন পক্ষ মামলা করেনি।

ব্রাশফায়ারে নিহতরা হচ্ছে, ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি সভাপতি তপন চাকমা, সহ-সম্পাদক এল্টন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি পলাশ চাকমা, রূপম চাকমা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ধীরাজ চাকমা, ও মহালছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা। নিহতদের লাশ ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তানস্তর করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে চারটি আঞ্চলিক দল সক্রিয় রয়েছে। এগুলো এখন চার ভাগে বিভক্ত। ২০০৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তিকে কেন্দ্র করে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লার্মা ওরফে সন্তু লার্মা’র নেতৃত্বাধীন পার্বত্য জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সাথে বিরোধের ফলে সৃষ্টি হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং জেএসএস (জেএসএস-এমএন লারমা) দুটি সংগঠন। গত নভেম্বরে ইউপিডিএফ-(গণতান্ত্রিক) নামে আরো ১টি গ্রুপ গঠিত হয়েছে। এদের সকলেরই রয়েছে সশস্ত্র ক্যাডার।

শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর এসব সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে আত্মঘাতী সংঘর্ষে ৯০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এ বছরের প্রথম ৬ মাসে মারা গেছেন ৩০ জন।

গত মে মাসে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং জেএসএস-এমএন লারমার গ্রুপের সহসভাপতি শক্তিমান চাকমাকে তার নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন তার শেষকৃত্যে যাওয়ার পথে খুন হন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৫ জন। এবার সে খুনের পাল্লায় যুক্ত হল আরো ৭ জন।

 বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: