ভিজিএফের চালে নয়ছয়

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০১৮, ১১:২২ পিএম

জামালপুরের সরিষাবাড়িতে ঈদ উপলক্ষে সরকারের বিশেষ বরাদ্দের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি’র অভিযোগ পাওয়া গেছে। কামরাবাদ ইউনিয়নে ২৬ বস্তা ভিজিএফের চাল জব্দ করেছে প্রশাসন। রোববার (১৯ আগস্ট) উপজেলার আওনা ও কামরাবাদ ইউনিয়নে দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে ঈদুল আজহার বিশেষ বরাদ্দের চাল বিতরণে উপকার ভোগীরা এ অভিযোগ করেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ঈদ উল আযহা উপলক্ষে দুস্থদের জনপ্রতি ২০ কেজি করে চাল দেয়ার নির্দেশ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়।

এ লক্ষ্যে সাতপোয়া ইউনিয়নে উপকার ভোগী ২ হাজার চারশ ৭৬ জন, পোগলদিঘা ইউপিতে ৩ হাজার নয়শ ৩৬ জন, ডোয়াইল ইউপির ৩ হাজার দুইশ, আওনাতে ২ হাজার দুইশ ১০জন, পিংনা ইউনিয়নে ২ হাজার একশ ১০জন, ভাটারায় ২ হাজার চারশ ৭৬ জন, কামরাবাদে ১হাজার তিনশ ৫৩ জন। উপজেলায় মোট ২০ হাজার দুইশ ৭৬ জন উপকারভোগীদের জন্য চারশ ৬৮ দশমিক ৩০০ মে.টন বরাদ্ধ আসে।

উক্ত বরাদ্ধকৃত চাল উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রকৃত দুস্থদের মাঝে বিতরণ না করে নাম মাত্র তালিকা তৈরী করে সরকার দলীয় নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ চাল ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করে দিয়েছে বলে বঞ্চিতরাসহ অনেকেই অভিযোগ করেন।

আওনা ইউনিয়নের ভিজিএফ বিতরণকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ২০ কেজির স্থলে প্রত্যেক উপকারভোগীকে ৫ থেকে ১৬ কেজি চাল ভাগ করে বিতরণ করা হচ্ছে।

কতিপয় চিহ্নিত ব্যক্তি স্লিপ নিয়ে চাল উত্তোলন করছেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের ভেতর থেকে হাতে গোনা কয়েকজন চাল নিয়ে আসা উপকারভোগী নারী পুরুষ এ অভিযোগ করে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানান।

উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের হেলেঞ্চাবাড়ীর সুলতানের বাড়ীর পার্শ্বে শনিবার রাত দেড়টার দিকে ২৬ বস্তা ভিজিএফের চাল জব্দ করেছে প্রশাসন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের তার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শনিবার দিনব্যাপী দুস্থঃদের মাঝে ঈদ উল আজহা উপলক্ষে ভিজিএফ বরাদ্দের চাল বিতরণ করেন। বিতরণ স্থলের পার্শ্ববর্তী কামরাবাদ ইউনিয়নের হেলেঞ্চাবাড়ীর সুলতানের বাড়ির পার্শ্বে খড়ের খাদার নিচে চালের বস্তা দেখে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে খবর দেয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে চাল জব্দ করে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশের জিম্বায় দেন। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।

চাল বিতরণকারী ট্যাগ অফিসার উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সেলিম আহাম্মেদ বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতারা ও ভিজিএফ উপকারভোগীরা চাল না নিয়ে চাল বেপারীর নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। তাই তারা পরিষদ থেকে চাল উত্তোলন করে নিয়েছে।

আওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেল্লাল হোসেন জানান, ২২শত ১০ কার্ডের মধ্যে আমি সাতশটি কার্ড পেয়েছি। কিন্তু উপকার ভোগী সংখ্যায় বেশি হওয়ায় ২০ কেজি চাল দিয়েছি। আবার একটি কার্ড ২জনকে ভাগ করেও দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন পরিবহন ও শ্রমিক খরচ সরকারি ভাবে বরাদ্ধ না পাওয়ায় তা সম্বন্বয়ের জন্য কিছু চাল বিক্রি করা হয়েছে তা পত্রিকায় দিয়েন না।

কামরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনছুর আলী খান বলেন, ১৩৫৩ কার্ডের মধ্যে দলীয় নেতাদের ছয়শ, জাতীয় পার্টির একশ ৫৩টি, পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার সাতশ কার্ড ভাগ করা হয়েছে। কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধি প্রকৃত দুস্থদের মাঝে বিতরণ না করে বেপারীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।

উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ নুর মামুন জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চাল উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ না করলে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান জানান, আইনগতভাবে উপকারভোগীদের তালিকার বাইরে কাউকে ২০ কেজির কম-বেশি বা অতিরিক্ত কোনো লোককে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি নির্দেশনার বাইরে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: