ভাসানচরে যেতে রোহিঙ্গাদের অনীহা

প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:১৮ পিএম

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিপীড়ন ও মানবাধিকার চরম লঙ্ঘনের পর প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩০টি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। প্রায় ১১ লাখের চেয়ে বেশি রোহিঙ্গার চাপ রয়েছে কক্সবাজারে। তাই শিগগিরই এক লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শিবির থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরিত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সরকার।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে এ দেশে আশ্রয় দিয়েছে। স্থানীয় জনগণও তাদেরকে খুব সহযোগীতা করেছেন। মিয়ানমার যতদিন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে না নেয়, ততদিন উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি ভাসানচরে তাদের জন্য অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কথা রোহিঙ্গারা জানে। তবুও তারা ভাসানচরে যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

রোহিঙ্গা নেতা মোরশেদ আলম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, জনমানবহীন ভাসানচরের দ্বীপটি শরণার্থীদের অন্যান্য আশ্রয় শিবির থেকে অনেক দূরে। বন্যায় তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেখানে। এমন জনমানবহীন একটি দ্বীপে আমাদের নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।

&dquote;&dquote;

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মী বলেন, ঠেঙ্গারচর স্থানীয়ভাবে ভাসানচর নামেও পরিচিত। এ চরটি দৃশ্যমান হয় ১১ বছর আগে। বর্ষার মওসুমে তা মারাত্মকভাবে বন্যাকবলিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তাছাড়া নিকটবর্তী বসতি থেকে এই দ্বীপে সময় লাগে দুই ঘন্টা। তাই রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে।

২০১৬ সালে অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ অগ্নিসংযোগের কারণে তারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

উখিয়া-টেকনাফের অধিকাংশ রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে আগ্রহী নন।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এই দূরবর্তী দ্বীপে ভবিষ্যত ত্রাণ এবং ওষুধ পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। এছাড়াও ক্যাম্পে তাদের আত্মীয়-স্বজন থেকে আলাদা হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তারা যেতে অনাগ্রহী বলে জানিয়েছেন, আরেক রোহিঙ্গা মাঝি আলী আকবর।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। একা মানুষ। মিয়ানমার সেনারা আমার স্ত্রী-সন্তানকে পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের সমাধিস্থ করার ভাগ্য হয়নি আমার। আমার মতো হাজারো রোহিঙ্গা নির্যাতনের ক্ষত শরীর নিয়ে পালিয়ে এসেছি। গত বছরের ২৫ আগস্টে বিভীষিকাময় পরিক্রমা পার করে আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি।

উখিয়ার কুতুপালং এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। পৃথিবীর ইতিহাসে বড় ধরনের মানবিক এই বিপর্যয় বুঝতে পেরে সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। খাবার দিয়েছে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবারও কমতি নেই। আন্তর্জাতিক দাতারাও দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের পাশে।

রোহিঙ্গাদের বাসস্থানের জন্য বনভূমিসহ প্রায় ছয় হাজার একর জমি বরাদ্ধ দিয়েছে বাংলাদেশ। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গাদের রেজিস্টার ক্যাম্প ছিল আগে থেকেই। ধীরে ধীরে এটি বিস্তৃত হয়েছে বালুখালী, হাকিমপাড়া, জামতলী, শফিউল্লার কাটা, গয়ালমারা, বাঘঘোনা, ময়নাঘোনা, তাজনিমারঘোনা, মধুরছড়া, থাইংখালী।

টেকনাফের প্রকৃতি ঢাকা পড়েছে হোয়াইক্যং, লেদা, উনছিপ্রাং, নয়াপাড়া, মুসুনি, হ্নীলার অস্থায়ী শিবিরের কারণে। এসব এলাকার অসমতল ভূমি তাঁবুর শহরে রুপ নিয়েছে। এখানেই গাদাগাদি করে ঠাঁই নিয়েছে বাস্তুহারা মানুষ।


বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: