‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণে অজ্ঞান, জ্ঞান ফিরতেই দেখি প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ’
রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভয়াবহতার কথা কমবেশি সবার জানা। সেনাবাহিনীর ‘ভয়ঙ্কর নির্যাতনে’র শিকার হয়েছে রোহিঙ্গা নারী-শিশু। মায়ানমার সেনাবাহিনীর ‘ভয়ঙ্কর নির্যাতনে’র শিকার হয়ে দলে দলে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে তারা।
সাধারণত সাংবাদিক দেখলে রোহিঙ্গাদের আগ্রহ বাড়ে। এজন্য যে হয়তো তাদের জন্য কোন সাহায্য সহযোগিতা যদি আশে। তাদের মনে আকুলতার কথা প্রকাশ করতে পারবে।
তেমনি এক দুপুরে কথা হচ্ছিল কক্সবাজারে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-ব্লকের কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে।কথপোকথনের সময় দেখা গেল পাশেই বসা রোহিঙ্গা এক তরুণী।
নাম হাসনা হেনা (ছদ্মনাম)। পোশাক, চুলের বিনুনি–ঠিকঠাক, বেশ পরিপাটি। তবে কী এক গভীর বিষাদ ভর করে আছে চোখে-মুখে। সে অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খুব একটা মেশে না; একা একা থাকে এবং যখন-তখন হাউমাউ করে কাঁদে।
তবুও তার সম্পর্কে একটু জানা। তার দুঃখটাকে ভেতর থেকে অনুভব করা। তাই তাকে প্রশ্ন করতেই জানায়, এখনও তার বয়স ১৮ পূর্ণ হয়নি।
মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু উপজেলার আরকান রাজ্যের শীলখালী গ্রামে সে বেড়ে উঠেছে। তার ধারণা, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। মরতে মরতে বেঁচে গেছে সে।
যদিও প্রথমে নিজের বর্বরতার স্বীকারের কথা বলেতে চাইনি সে। রোহিঙ্গা মাঝি মোক্তারের কথায় অভয় পেয়ে কথা বলতে শুরু করে।
হাসনা হেনা জানায়, ‘সেদিন ছিল শনিবার। সেনাবাহিনী গ্রামে আসার খবরে ভয়ে শীলখালীর মানুষ এদিকে-ওদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। তখন আমিও দিগ্বিদিক ছুটতে থাকি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে যাই সেনাবাহিনীর ৮ জনের একটি দলের হাতে।’
‘তাকে ধরার পরই বন্দুক দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকে’ জানিয়ে হাসনা হেনা বলে, ‘আমাকে ধরার পর পরই বন্দুক দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে তারা। একপর্যায়ে আমার মুখের ভেতর বন্দুকের নল ঢুকিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। কিন্তু কেন যেন শেষপর্যন্ত মারেনি। পরে আমাকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে একটি খালি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আমার ওপর জুলুম (সংঘবদ্ধ ধর্ষণ) করা হয়। এরই একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
এমন দৃশ্যপটের কথা বলতে নিজ অজান্তে চোখ বেয়ে বেয়ে অশ্রু চলে আসে তার। অশ্রুসজল চোখে সে জানায়, ‘জ্ঞান হারালেই, মরে গেছি ভেবে তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়। এরপর পাড়া-প্রতিবেশীরা আমাকে উদ্ধার করে। জ্ঞান ফিরতেই দেখি, আমি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে। টের পাই, আমার খুব রক্তক্ষরণ হচ্ছে; উঠে দাঁড়াতে পারছি না। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই আবার জ্ঞান হারাই।’
সে জানায়, ‘রাতের অন্ধকারে নৌকা যখন বাংলাদেশের নাফ নদী অতিক্রম করছিল, তখন ফের জ্ঞান ফিরে আমার। বেঁচে থাকাটা অর্থহীন মনে হওয়ায় নৌকা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিই। কিন্তু আমার আত্মহত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নৌকার মাঝি ও আমার আত্মীয়-স্বজনেরা আমাকে বাঁচায়।’
বাংলাদেশে আসার পর আত্মীয়-স্বজনেরা কিছু টাকা তুলে তাকে ইউএনএইচসিআর হাসপাতালে ভর্তি করে জানিয়ে সে বলে ‘বাংলাদেশে আসার পর কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক আত্মীয়ের ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেই। এর একদিন পর আমার আত্মীয়-স্বজনেরা কিছু টাকা তুলে আমাকে ক্যাম্পের পাশে ইউএনএইচসিআর হাসপাতালে (জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা চালিত হাসপাতাল) ভর্তি করে। সেখানে আমি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। এখন আমি অনেকটাই সুস্থ।’
‘অন্যান্যের মতো তাকেও গুলি করে মারতে চেয়ে ছিল’ সে জানায়, ‘ওই দিন অন্যান্যের মতো আমাকেও গুলি করে মারতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু মারেনি। কেন মারেনি? এর চেয়ে তো মৃত্যুই অনেক ভালো ছিল।’
মেয়েটি বলে, ‘আমার বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা জানি না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অনেক খুঁজেছি, পাইনি। বোধহয় তারা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) বাবা-মাকে মেরেই ফেলেছে।’
এখন সে ক্যাম্পে নিরাপদে আছে, সে জানায়, ‘এখন আমি ক্যাম্পে নিরাপদেই আছি। কিন্তু ঘুমাতে পারি না। চোখ বন্ধ করলেই সেই বর্বরতার ঘটনাগুলো ভেসে আসে; ঘুম ছুটে যায়। কষ্টে কুঁকড়ে যাই আমি।’
শুধু কী হাসনা হেনা। তার মত এমন বহু মেয়ে আছে যার এই বর্বরতার স্বীকার। রোহিঙ্গা মাঝি মোক্তারসহ কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-ব্লকের অনেকে জানায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগরা গতবছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালায়। আগুন দিয়ে একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অনেককেই আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়, অনেককে মারা হয় গুলি করে। ধর্ষণের শিকার হন অনেক কিশোরী-তরুণী-নারী। তাদের একজন মিনু আরা। টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার মতো আরও শত শত কিশোরী-তরুণী-নারী রয়েছেন।
বিডি২৪লাইভ/এএইচ/ওয়াইএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: