স্কুলের চার পাশে পানি, শিক্ষককে হুমকি

প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:১৩ এএম

নেত্রকোনা সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মেয়ারগাতী গ্রামে কালভার্টের মূখ বন্ধ করায় সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের জলাবদ্ধতা সৃষ্টির বিষয়টি শেষ হয়েও শেষ হল না। প্রশাসনকে জানানোর কারনে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. পারভেজ উদ্দিনকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে কালভার্টের মূখ বন্ধকারী ফিসারীর মালিকের লোকজন।

বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) শিক্ষক পারভেজ উদ্দিন জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় হুমকিদাতা বুলবুল, ফিসারীর মালিক সাদেক মিয়া ও মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে জিডি এবং সদর ভূমি কর্মকর্তা ও অতিরেক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মেয়ারগাতী গ্রামে কেন্দুয়া- নেত্রকোনা সড়কের পাশে সুরাইয়া আব্বাস ডিএমসি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে ষষ্ট শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ২৬৫জন এলাকার ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে। শিক্ষক রয়েছেন ১২জন। গত দুই বছর ধরে বিদ্যালয়টির বেহালদশা বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য সড়কের কালভার্টের মূখ বন্ধ করে গত প্রায় তিন বছর আগে এলাকার জনৈক প্রভাবশালী মাহফুজুর রহমান ও সাদেক মিয়া ফিসারী স্থাপন করেন।

এতে করে গত দুই বছর ধরে সামান্য বৃষ্টি হলেই মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয়ের চলাচলের রাস্তা, দক্ষিন পাশের টিন সেডে ষষ্ট, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠদান কক্ষ, শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পানিতে ডুবে যায়। পানি কমলেও টিন সেড কক্ষ স্যাতস্যাতে অবস্থায় থাকে। এতে করে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়। খেলার মাঠ পানিতে ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা করতে পারে না। এই অবস্থা বর্ষকালে প্রায় ছয় মাস ধরে থাকে।

এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারনে ইউনিয়নের মেয়ারগাতী, চন্দনকান্দি, ধাওয়াপাড়া গ্রামের বিস্তৃর্ণ এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে করে ওই তিনটি গ্রামের ৫শতাধিক একর জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

জলাবন্ধতার কারনে এলাকার কৃষকরা বীজতলা তৈরী করতে পারছেন না। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাক সবজি ও মওসুমি ফসল। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি প্রবেশ করছে এলাকার বাড়িতে। পানি না সরার কারনে তিন গ্রামের মানুষের চলাচলে অনুবিধে হচ্ছে। বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের টনক নড়ে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কালভার্টের মূখে বাধ খুলে দেয়া হয়। প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার সাথে সাথে ফের কালভার্টের মূখ বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সময় বিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. পারভেজ উদ্দিনকে ফিসারীর মালিক সাদেক মিয়ার ভাগ্নে বুলবুল প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর জন্য অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং মারতে উদ্যত হয় এবং প্রাণনসাশের হুমকি দেয়। এলাকাবাসী তার হাত থেকে শিক্ষক পারভেজ উদ্দিনকে রক্ষা করে।

সরজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে হাটু পানি, খেলার মাঠে পানিতে থৈ থৈ করছে। হাটু পানি মাড়িয়ে কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের দক্ষিনপাশে জরজীর্ণ টিনসেড ঘর। বিদ্যালয়ের খেলার মমাঠ দিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় করে চলাচল করছে এলাকার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।

সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. পারভেজ উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের লোকজন বাধ কেটে দেয়ার পরপরই আবার বাধ দেয়া হয়েছে। বুলবুল আমাকে মারধর করতে চায় এবং মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।

এ ব্যাপারে আমি থানায় জিডি করেছি এবং প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আহমাদুল্লাহ বলেন, বারবার বলার পরও বাধের মূখ খুলে দেয়া হচ্ছেনা।

প্রশাসনের লোকজন বাধ খুলে দিলেও আবার কালভার্টের মূখে বাধ দেয়া হয়েছে। ফিসারীর মালিকের লোকজন শিক্ষকে হুমকি দেয়। এতে করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং লেখাপড়ার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

ফিসারীর মালিক মাহফুজুর রহমান বলেন, কালভার্টের মূখ খুলে দেয়াতে আমার কোন আপত্তি নেই। এ ব্যাপারে আমি বা আমার লোকজন তিকছু করেনি। এখানে আরও ফিসারী আছে। কালভার্টের মূখ কে বন্ধ করেছে তা আমার জানা নেই।

নেত্রকোনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন খান মজিডি কারার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিদ্যালয় এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে জিডি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: