খাবারের সঙ্গে মেশানো হতো নেশার ওষুধ, এরপর...

প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৩৪ এএম

ভারত শাসিত কাশ্মীরে একটি অনাথ আশ্রমে শিশুদের ওপরে যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসন ওই আশ্রম থেকে ৮টি কন্যাশিশু সহ ২০জন আবাসিককে উদ্ধার করেছে।

জম্মু অঞ্চলের কাঠুয়ায় অবস্থিত ওই আশ্রমটি বেআইনীভাবে চালানো হচ্ছে, এমন খবর পেয়েই সেখানে হানা দেন কর্মকর্তারা। আশ্রমটির পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শিশু-কিশোর আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে যৌন নির্যাতনের ঘটনা সম্প্রতি সামনে আসছে। জম্মু অঞ্চলের কাঠুয়া জেলা প্রশাসন বলছে, একটি অনাথ আশ্রম বেআইনীভাবে চালানো হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তারা সেখানে হানা দেন।

ওই আশ্রমটির পরিচালক নিজেকে একজন খ্রিষ্টান মিশনারি বলে পরিচয় দিলেও কোনও নথি দেখাতে পারেন নি। তিনি যে খ্রিষ্টান মিশনের অধীনে রয়েছেন বলে দাবী করেন, তারাও জানিয়ে দেয় যে ওই আশ্রমটি তাদের পরিচালনাধীন নয়।

প্রশাসনের তরফ থেকে যিনি ওই আশ্রমে গিয়েছিলেন, সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জিতেন্দ্র মিশ্র তল্লাশি অভিযানের পরে বলছিলেন, "বেআইনীভাবে একটি অনাথ আশ্রম চালানো হচ্ছে, এরকম খবর পাই আমরা। তারপরেই অভিযান চালানো হয়। সত্যিই দেখা যায় এই আশ্রমটির কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই। যিনি পরিচালনা করেন, তিনি কোনও নথিই দেখাতে পারেন নি আমাদের।"

২০ টি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই আশ্রম থেকে, যার মধ্যে ৮জন কন্যাশিশু। এরা মূলত জম্মুর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছিল, বেশ কয়েকজন পাঞ্জাবের কিশোর-কিশোরীও আছে।

এদের বেশীরভাগই সম্পূর্ণ অনাথ নয় - বাবা অথবা মা কেউ একজন আছেন বলে বাচ্চারা জানিয়েছে।

"পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানোর যেমন ব্যবস্থা হবে, তেমনই কী ভাবে তারা ওই আশ্রমে এল, সেটারও তদন্ত হবে," বলছিলেন কাঠুয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জিতেন্দ্র মিশ্র।

উদ্ধার হওয়া শিশুদের কাছ থেকেই প্রশাসন অভিযোগ পেয়েছে যে আশ্রমটির পরিচালক তাদের ওপরে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালাতেন।

কন্যাশিশুদের খাবারের সঙ্গে নেশার ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হত বলেও বাচ্চারা অভিযোগ করেছে।

শিশু-কিশোরীরা ওই আশ্রমে বসবাস করলেও কোনও নারী সেখানে দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন না বলেও কর্মকর্তারা অভিযান চালানোর সময়ে জানতে পারেন।

পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের পরে শিশু যৌননির্যাতন রোধ আইন - 'পস্কো'র বেশ কয়েকটি ধারায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জেলাশাসক রোহিত খাজুরিয়া জানিয়েছেন, "তল্লাশী অভিযান চালানোর পরে শিশু-কিশোরদের দুটি আলাদা আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। একজন ব্যক্তি, যিনি ওই আশ্রমটি পরিচালনা করতেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে।"

ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে সম্প্রতি অনাথ আশ্রম বা শিশু-কিশোরদের জন্য পরিচালিত সরকারী আশ্রয়গুলিতে যৌন নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা।

ওই প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়, বিহার রাজ্যে এরকমই একটি ঘটনায় একজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা সামনে আসার পরে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ওই মন্ত্রী সমাজকল্যান দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন, যে দপ্তরটি সরকারী শিশু-কিশোর হোমগুলির দেখভাল করে।

তামিলনাডুতেও একটি শিশুকিশোর আশ্রয় কেন্দ্রের প্রায় ৪০জন ছাত্রছাত্রী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ জানালে দুজন পরিচালককে গ্রেপ্তার করে ওই শিশুদের অন্যত্র পাঠানো হয়েছে।

&dquote;&dquote;উদ্ধার শিশু-কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন রাজ্যের সরকারী বা বেসরকারী শিশু-কিশোর আশ্রয়গুলিতে এধরণের যৌন নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসায় চিন্তিত সুপ্রীম কোর্টও।

তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে যে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০১৫ সাল থেকে ১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার শিশু-কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে।

সেখানেও তাদের ওপরে আবারও যৌন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে কী না তা দেখা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতিরা।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: