নিঝুম দ্বীপে খনিজ ও তেজস্ক্রিয় বালুর সন্ধান, অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪১ এএম

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ সমুদ্রসৈকতে পরমাণু গবেষণা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়ক তেজস্ক্রিয় বালু, উড়োজাহাজের পাখা তৈরিতে ব্যবহৃত জিরকোনিয়াম ও গ্ল্যাস তৈরির কাঁচামাল সিলিকা বালুর সন্ধান পেয়েছেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) বিজ্ঞানীরা।

পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে উচ্চমাত্রার মিনারেল ও রঞ্জক শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত রুটাইল, ইলমেনাইট ও গ্রানাইটসহ অন্তত ১৫ ধরনের ধাতব অক্সাইডের সন্ধান পাওয়া গেছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিঝুম দ্বীপ ও এর আশেপাশের কয়েকটি সমুদ্রসৈকতে পরিচালিত এক জরিপে এসব খনিজ বালুর সন্ধান পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। 

বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিসিএসআইআরের ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড
মেটালার্জির (আইআইআইএম) পরিচালক ড. নাজিম জামান (প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা)।

ড. নাজিম জামান বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিঝুম দ্বীপে একটি গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণা করে আমরা সেখানে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ পেয়েছি, যা অনেক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ইলমেনাইট, রুইটাইল, জিরকোনিয়াম ও গ্রানাইটস অন্যতম। এগুলো দিয়ে বিমানের ডানা, গ্ল্যাস ও সিমেন্ট তৈরি হয়। আমাদের প্রকল্পটি চালু হয়েছে মাত্র কয়েক মাস হয়েছে। পুরোপুরি চালু হতে আরও বছর দুয়েক লাগবে। এরপর আমরা প্রতি ঘণ্টায় ২০ টন বালু প্রসেসিং করতে পারবো। এর মাধ্যমে কোন অঞ্চলে কি পরিমাণ খনিজ পদার্থ রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। 

বিসিএসআইআরের এই গবেষণার সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন, বিসিএসআইআরের আইআইআইএম পরিচালক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান ও ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল এনালিটিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড সার্ভিসের রিসার্চ কেমিস্ট মো: রিপাজ উদ্দিন।

এসব বিজ্ঞানী জানান, ৯১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নিঝুম দ্বীপে ১২ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসৈকত রয়েছে। এছাড়া দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বদিকে দমারচর নামে আরও একটি নতুন চর জেগে উঠেছে। এই চরেও নিঝুম দ্বীপের মতো একটি সমুদ্রসৈকত আছে। এছাড়া হাতিয়ার কাজিরবাজারেও দুটি সমুদ্রসৈকত রয়েছে। এসব সৈকতের বালু পরীক্ষা করে এতে প্রাথমিকভাবে উচ্চমাত্রার সিলিকা বালি পাওয়া গেছে, যা কাচ তৈরির প্রধান কাঁচামাল। 

রিসার্চ কেমিস্ট মো: রিপাজ উদ্দিন বলেন, ‘সঠিকভাবে এসব খনিজ বালি আহরণ করতে পারলে কাচ শিল্পের কাঁচামালের জোগান দেওয়া যাবে। এতে দেশীয় শিল্প ও প্রযুক্তিতে দেশীয় কাঁচামালের ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং সরকারি কোষাগারে প্রচুর অর্থ জমা হবে।

রিপাজ উদ্দিন জানান, সিলিকা বালি ছাড়াও নিঝুম দ্বীপে প্রচুর তেজস্ক্রিয় বালি পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ইলমেনাইট, রুইটাইল, জিরকোনিয়াম ও গ্রানাইট অন্যতম। এসব বালির বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা, যা পরমাণু গবেষণা, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ দেশের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এর মধ্যে জিরকোনিয়াম উড়োজাহাজের পাখা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। যার প্রতি টনের মূল্য প্রায় ১৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ ডলার। এগুলো ছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল এবং ১২-১৫টি ধাতব অক্সাইড পাওয়া গেছে। আমরা এর চূড়ান্ত অর্থনৈতিক মান হিসাবের জন্য দ্রুত ফিল্ডভিত্তিক গবেষণা কাজ শুরু করবো।

পরিচালক ড. নাজিম জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এরই মধ্যে সরকার জয়পুরহাট ‘ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি’ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে আমরা আরও রিসার্চ করবো। এরপর পাইলট প্রকল্প হিসেবে খনিজ পদার্থগুলো আহরণ শুরু করবো। তখন উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে আসবে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি এক বর্গকিলোমিটারে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আয় করা যাবে।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: