প্রকোপের পর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা দুই সিটির 

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২০ পিএম

গত বছর চিকনগুনিয়া আর এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে দিশেহারা নগরবাসী। মশাবাহিত এ রোগ নির্মূলে উদাসীন সংশ্লিষ্টরা। এ রোগ নির্মূলে দরকার মশার বংশ বিস্তাররোধ করা। এক সময় অভিন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এ কাজ করলেও এখন তা ইতিহাস।

এসব রোগের প্রকোপ দেখা দিলেই মশার বংশ বিস্তার রোধে হাক ডাক দিয়ে মাঠে নামে দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কিছু এলাকায় মশার ঔষধ দিলেও তা লোক দেখানো ।

বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়মিত এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করার কথা থাকলেও তা করছেন না দায়িত্বশীলরা। তাছাড়া কোনো বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পেলে তা সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা ধ্বংস করবেন।

মশকনিধনকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও নগরের বাসিন্দারা এ কাজ কাউকে করতে দেখেননি কখনো। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গুলশানের নিকটবর্তী এলাকা গুদারাঘাট। সেখানে দীর্ঘদিন বসবাস করেন সোহাগ মিয়া। তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমি এ বছর ঔষধ ছিটাতে দেখিনি। গত বছর ঔষধ দিয়েছিলো তবে সেটা চিকনগুনিয়া যখন বড় আকার ধারণ করার পর। এসব ঔষধ মূলত মশার জন্মের আগেই দিতে হয়। যাতে করে মশার বংশ বিস্তার না করতে পারে। কিন্তু সকলের যদি ডেঙ্গু হওয়ার পর মশার মারার চেষ্টা করে তাহলে লাভ কি ? রোগ তো হয়েই গেলো।

শুধু গুদারাঘাট এলাকায়ই নয়, রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার অবস্থা একই। মশার বংশ বিস্তার রোধে দুই সিটির উদাসীনতায় ভোগাচ্ছে নগরবাসীকে।

জানা গেছে, এ রোগের প্রকোপ কমিয়ে আনতে দুই সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) ইতোমধ্যে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম ছাড়াও বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়মিত এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করা। কোনো বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পেলে তা ডিএসসিসির কর্মীরা ধ্বংস করবেন। এজন্য স্থানীয়রা ওয়ার্ড কমিশনাদের অফিসে যোগাযোগ করবেন। মশকনিধনকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে ওষুধ ছিটাবেন।

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। কারণ ইতোমধ্যে বৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আর তাতেই এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ডেঙ্গু নিরাময়যোগ্য রোগ তবে নারী ও শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে তারাই এগিয়ে আছেন। এডিস মশা সাধারণত বাসাবাড়িতে ফুলের টব, টায়ার, ফ্রিজ, এসিতে জমে থাকা পানিতে জন্মায়। এ রোগ থেকে দূরে থাকতে বাড়ির আশপাশে কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না ও নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দীন বিডি২৪লাইভকে বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে সত্য। এটি কীভাবে ধ্বংস করা যায় প্রতি বছরের মতো এবারও চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এডিস মশা থেকে বাঁচতে ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

বিগত বছরগুলোর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জন আক্রান্ত ও ২০০০ সালে সর্বোচ্চ ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৬ সালে হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৬০ জনে বৃদ্ধি পায়। ওই বছর ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭৬৯ জন ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৮ জনে নেমে আসে। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৬৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১১ জনের মধ্যে ৬ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু। এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস ছড়ায়। চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস আছে। এগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। এবার সবচেয়ে ঝুঁকি হেমোরেজিক। সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা না হলে এতে মৃত্যুর শঙ্কা থাকে।

বিডি২৪লাইভ/এএফ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: