ফাইল চালাচালি না করে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৩৯ পিএম

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তবে কেবল সুপারিশে আস্থা নেই জানিয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছে তারা।

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে তৈরি করা সুপারিশের বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার পর বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ফাইল চালাচালি না করে দ্রুত কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করুন।

তারা বলেন, জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর অনেক নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে কোটা বাতিল প্রজ্ঞাপনের জন্য অনেক ফাইল চালাচালি হয়েছে। হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত এই ফাইল চালাচালি হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ জন্য সুপারিশ বা ফাইল চালাচালির ওপর ছাত্রসমাজের কোনো আস্থা নেই। এসব না করে তিন দফা দাবির আলোকে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।

পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের কথা বলেছেন। তাই, তিনি যদি চান তার নির্বাহী ক্ষমতাবলে কোটা বাতিল করে দিবেন, আমরা সাধুবাদ জানাব। আর যদি পাঁচ দফার আলোকে সংস্কার করেন তাহলেও আমরা সাধুবাদ জানাব। যেটাই করুক আমরা সাধুবাদ জানাব।’

সরকারি চাকরিতে বাংলাদেশে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ আছে প্রতিবন্ধী কোটা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই কোটার সুবিধা সন্তানদেরকেও দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা নাতি-নাতনিদেরকেও দেয়া হয়। আর সে সময় থেকেই প্রধানত জামায়াতপন্থীরা এই কোটা বাতিলের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়।

তবে এবার কোনো বিশেষ কোটার কথা না বলে সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় আন্দোলন। তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশ করার দাবি জানায়।

গত ৮ থেকে ১১ এপ্রিল নানা ঘটনার পর ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন কোনো কোটা থাকবে না। তবে গত ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। এখন এটি বাতিল হলে তিনি আদালত অবমাননায় পড়বেন।

কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সুপারিশ দিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পারার পর তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।

দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সচিবালয়ে জানান, তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত হয়ে গেছে এবং সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।

সচিব বলেন, ‘আগের যে দ্বিতীয় বা প্রথম শ্রেণি বলা হতো, সেগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা থাকবে না। মানে ৯ থেকে ১৩ গ্রেড পর্যন্ত যে প্রাথমিক নিয়োগ হয়, সে নিয়োগে কোনো কোটা থাকবে না। এই প্রস্তাব আজকে আমরা সাবমিট করেছি।’

এর প্রতিক্রিয়ায় বিকালে সংবাদ সম্মেলন ডাকে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ জুলাই জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং হয়েছে অনেক নাটকীয়তার। ফাইল চালাচালি হয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে হাইকোট এবং সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ছাত্রসমাজ তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায়নি। তাই এই মুহূর্তে কোন আস্থা বা সুপারিশে ছাত্রসমাজের ভরসা নেই।’

কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ নামানোসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা সংগঠনটি এখন তিন দফা দাবি জানাচ্ছে। কোটার বিষয় ছাড়া বাকি দুই দাবির মধ্যে আছে তাদের ওপর হামলাকারীদের বিচার এবং কোটা আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার।

এই দিন সফার দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়ে ফারুক বলেন, ‘আমরা এর আগেও স্পষ্ট করে বলেছি যে সরকার যখনই আমাদের তিন দফা বাস্তবায়ন করবে তখনি আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব।’

সংবাদ সম্মেলনে এই তিন দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিষদটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: