‘দালাল’ ছাড়া কোন কাজ হয় না!
শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পর বিআরটিএতে বেড়েছে লাইসেন্স আগ্রহীদের ভিড়। প্রতিদিনই লাইসেন্স পেতে বিআরটিএতে ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার আগ্রহীরা। আর এ সুযোগ লুফে নিচ্ছে আগ থেকে ওঁত পেতে থাকা দালালদের একটি চক্র।
লাইসেন্স পেতে যারা ভিড় করছেন, তাদেরকে বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কৌশলে বাধ্য করে অতিরিক্ত অর্থ ভাগিয়ে নিচ্ছে দালালরা। অতিরিক্ত টাকার মাধ্যমে সহজে কাজ করিয়ে দেয়ার শর্তে আগ্রহীরা দালালদের জালে আটকা পড়ছেন সহজেই। অনেকেই আবার প্রতারিতও হচ্ছেন।
ভুক্তভোগিরা জনান, এখন যেভাবে লাইসেন্স পাবার আগ্রহীদের সংখ্যা বেড়েছে, তেমন বেড়েছে দালালদের উৎপাত। এখানে দালাল ছাড়া কোন কাজই করা যাচ্ছে না। আর দালালদের সাথে বিআরটিএ’র কর্মকর্তারাও জড়িত বলে দাবি তাদের।
জানা গেছে, বিআরটিএ অফিসে যারাই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে গেছে। তাদের সবাইকে বাধ্য হয়েই দালালদের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়েছে। আর যারা দালাল ছাড়া গিয়েছে তাদের লাইসেন্স পেতে বহু বেগ পেতে হচ্ছে।
দেখা গেছে, তাদের লাইসেন্স পেতে বছর খানিক সময় নিচ্ছে বিআরটিএ। বর্তমান অবস্থায় রাস্তায় লাইসেন্সহীন গাড়ি চালানো অসম্ভব। তাই এ সুযোগটা খুব ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে দালাল চক্রটি।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত বিআরটিএ কার্যালয়ে মাসুম বিল্লাহ নামে এক শিক্ষানবীশ লাইসেন্স আবেদনকারীর সঙ্গে কথা হয় বিডি২৪লাইভের প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘এখানে দালাল ছাড়া কোন লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ নেই। দালাল ছাড়া আবেদন করলে এক বা দেড় বছর পর পাওয়া যায়। তাও শিউর না, আরও সময় বেশি লাগতে পারে।’
‘আমি নিয়মানুসারে আবেদন করছিলাম, সেখানে লাইসেন্স পাওয়ার যে সময় দেওয়া হয়েছে। সে সময় পর্যন্ত আমার অপেক্ষা করা সম্ভব না।’
‘কতদিন সময় দিয়েছে’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেড় বছরেরও বেশি সময় নিয়েছে। কিন্তু, এখানে দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা খরচ করলেই ২০-২২ দিনের মাধ্যমে পাওয়া যায়।’
সরেজমিন দেখা গেছে, অফিসের আশে পাশে মাত্র ২৫০ টাকায় মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। যা আবেদন করার সময় জমা দিতে হয়। শুধু মেডিকেল সার্টিফিকেটই নয়, লাইসেন্স পেতে যত কাগজপত্র দরকার তার বেশিরভাগই এখন দালালরা সরবরাহ করে থাকে। প্রথমে শিক্ষানবীশ চালক হিসেবে গেলে একজন মেডিকেল সার্টিফিকেট দিতে রাজি হলেও সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শুধু নতুনদের নয়, যারা ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছেন তাদেরও শরাপন্ন হতে হচ্ছে দালালদের। অতিরিক্ত টাকা দিয়েই সকলকে লাইসেন্স নিতে হচ্ছে বিআরটিএ থেকে।
বিআরটিএ বা সরকারের নিয়মানুসারে নবায়নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফি অপেশাদার চালকদের (হালকা যানবাহন) জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ১৫ দিন পর্যন্ত ২ হাজার ৪২৭ টাকা এবং এর বেশি হলে বছরপ্রতি ২০০ টাকা করে জরিমানা।
পেশাদারদের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে হলে ১ হাজার ৫৬৫ টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ১৫ দিন পরে বছরপ্রতি ২০০ টাকা জরিমানা। অথচ দালালদের কাছে ৬-১০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হচ্ছে চালকদের।
সিরাজুল ইসলাম নামের এক নিয়মিত গাড়ি চালক বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘দালাল ছাড়া এখানে কোন কাজই করা সম্ভব না। প্রথমে দালাল ছাড়া গিয়েছিলাম, কিন্তু কোন কাজই হয়নি। বিআরটিএ’র অফিসাররা এই কাগজ নেই তো সেই কাগজ দরকার বলে আমাকে তিন-চারবার আসতে হয়েছে। পরে দালালদের দেড় হাজার টাকার কাজ ৬ হাজার টাকা দেওয়ায় অতি দ্রুত আমার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাকা দিলে পরীক্ষাও দিতে হয় না। নামমাত্র পরীক্ষা নিয়েই নতুন লাইসেন্স বা লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে।’
তিনিসহ আরও অনেকে জানান, দালালরা লাইসেন্স নবায়ন করার ক্ষেত্রে নেন ৬ হাজার টাকা এবং নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নেন ১০ হাজার টাকা। অথচ গাড়ির লাইসেন্স নবায়ন করানোর সরকার নির্ধারিত ফি ১ হাজার ৬৭৯ টাকা এবং নতুন লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ২ হাজার ৫৪২ টাকা।
এ বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কোন কথা বলতে চাননি।
বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: