থামছেই না হত্যাকাণ্ড!

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:০৮ পিএম

ট্রেনে ছিনতাই শেষে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার মতো ঘটনা কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী কয়েকটি চক্র রয়েছে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে, যারা এ ঘটনার ঘটাচ্ছে। এরা যাত্রী বেশে উঠে সুযোগ বুঝে ছিনতাই শেষে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে চলে যায়। কেউ বেঁচে থাকে অথবা কারও প্রাণ চলে যায়। তাতে ছিনতাইকারীদের কি আসে যায়?

সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে এমনটি একটি ঘটনা ঘটে। এদিন ছিনতাই শেষে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেন থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আবারও প্রশ্ন উঠে ট্রেনে চলাচলরত যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি। শত চেষ্টা করেও থামানো যাচ্ছে না এ ঘটনা।

চলন্ত ট্রেনে এমন ঘটনা নতুন নয়, প্রায়ই ঘটে এ ঘটনা। প্রাথমিকভাবে এটি দুর্ঘটনা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো নির্মম হত্যাকাণ্ড। ঘাতকরা সংঘঠিত ছিনতাইকারী। সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কলেজ ছাত্র ইসমাইলকে চলন্ত ট্রেনে থেকে ফেলে দিলে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য আবারও আলোচনায় উঠে আসে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পশ্চিম কুট্টারপুর গ্রামের আসমত আলীর ছেলে সে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যাচ্ছিলেন নারায়ণগঞ্জ। বন্ধুর সাথে দেখা করবেন বলে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় আসছিলেন ট্রেনে ছাদে করে। ছাদে ছিনতাইকারীরা একা পেয়ে যা ছিল তা নিয়ে নেয়। ট্রেন যখন বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় তখন সুযোগ বুঝে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয় ছিনতাইকারীরা।

আহত ইসমাইলের বরাত দিয়ে তেজগাঁওয়ের স্টেশন অফিসার রতন রায় সাংবাদিকদের জানান, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার রেললাইনের পাশে অচেতন অবস্থায় পড়েছিল কলেজছাত্র ইসমাইল। আমরা দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলে তিনি জানান, তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ঢাকা আসছিলেন নারায়ণগঞ্জে এক বন্ধুর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেই ট্রেনের ছাদে করে ঢাকায় আসছিলেন তিনি। ট্রেনটি ক্যান্টনমেন্ট অতিক্রম করার সময় ২-৩ জন ছিনতাইকারী ছুরি আর ব্লেডের ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা দুটি স্মার্টফোন কেড়ে নেয়। ছিনতাই শেষে তারা চলন্ত ট্রেন থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে তার মাথায় আঘাত লাগে।

এ বছরের গত ২৪ মার্চ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ট্রেন থেকে ফেলে ব্যবসায়ী খোকন খানকে (৩৮) হত্যার অভিযোগ করেন তার পরিবার।

পরিবার জানায়, রাত তিনটার দিকে খোকনের মোবাইল থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে জানায়, খোকন অসুস্থ, সে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে আছে। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার জন্য খোকনের মোবাইলে ডাচ-বাংলা অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। রাতেই খোকনের পরিবার ৪ হাজার ২৫০ টাকা পাঠায় এবং দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। পরে রাত ৪টা থেকে খোকনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

পরিবারের লোকজনের ধারণা, ট্রেনের ছাদে ছিনতাই শেষে ছিনতাইকারীরা চলন্ত ট্রেন থেকে তাকে ফেলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

গত বছরে ১৭ জানুয়ারি গাজীপুরের হায়দারাবাদ এলাকায় সফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবক একই ধরনের ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারান। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল গতকালের মতো এটাও দুর্ঘটনা। কিন্তু পরে জানা গেল এটি দুর্ঘটনা নয়, এট নিমর্ম হত্যাকান্ড।

রেলওয়ে পুলিশের এক হিসাব অনুযায়ী, গত ২০১৬ সালে সারাদেশে দু’টি রেলওয়ে জেলায় হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়েছে মাত্র ২০টি। রেলওয়ে পশ্চিম জেলায় ৬টি ও রেলওয়ে পূর্ব জেলায় ১৪টি। গত বছর প্রথম নয় মাসেই সারাদেশের ২৪টি রেলওয়ে থানা এলাকায় উদ্ধার হয়েছে ৭৩০টি লাশ। এসব লাশ উদ্ধারের পর বেশিরভাগ অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সারাদেশের ট্রেন কয়েকটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। তারা সুযোগ পেলেই বিভিন্ন স্টাইলে ছিনতাই করে, শেষে তাদের চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। লোকাল ট্রেনে এবং ট্রেনের ছাদে এই ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জেলার কমলাপুর থেকে গাজীপুর, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, বি. বাড়িয়া, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার সান্তাহার, পার্বতীপুর এলাকায় চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে এসব ঘটনা বেশি ঘটে।

রেলপুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, পাঁচ-ছয় জনের একটি করে ছিনতাইকারী গ্রুপ ট্রেনের ছাদে ও কামরার দরজায় আসা যাত্রীদের গলায় গামছা পেঁচিয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।এ কাজে তারা সময় নেয় বড়জোর দুই থেকে তিন মিনিট।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ছিনতাই শেষে ব্যক্তিকে ফেলে না দিলে তাদের (ছিনতাইকারী) ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে বলেই ব্যক্তিকে ট্রেন থেকে ফেলে হয়। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তিকে ফেলে দেওয়াই নিরাপদ মনে করে সংঘবদ্ধ গ্রুপগুলো।

রেলওয়ে পুলিশের যুগ্ম-মহাপরিচালক বিডি২৪লাইভকে জানান, এ সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখন আর তেমন হচ্ছে না। আশা করছি সামনে আর এমন ঘটনা ঘটবে না।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: