নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে সরকারে নতুন প্রকল্প

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৩৯ পিএম

নদী ভাঙন ঠেকাতে সরকার নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশের নদ-নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং নদী ভাঙন রোধে চলমান নদী খনন থেকে পাওয়া ড্রেজড আর্থ (ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর তলদেশ থেকে পাওয়া বালু, মাটি ও পলি) ব্যবস্থাপনায় একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে সরকার। এটি নীতিমালা-২০১৮ নামে অভিহিত হবে। সরকারের অনুমোদনের তারিখ থেকে এ নীতিমালা কার্যকর হবে।

নীতমালা প্রণয়নে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালাটির খসড়া প্রস্তুত করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডার তথা অংশীজনের মতামত নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষাকোষ থেকে ভাষাগত বিশুদ্ধতা নিরূপণ শেষে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন এবং অনুমোদন শেষে এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। নদী খনন থেকে পাওয়া ড্রেজড আর্থ ব্যবস্থাপনায় এটি দেশে প্রথম নীতিমালা হচ্ছে বলে নীতিমালা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান।

খসড়া নীতিমালায় দেশের নদ-নদীর সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ নদ-নদী বেষ্টিত পৃথিবীর বৃহত্তম শিল্পপার্ক ব-দ্বীপ গড়ে তোলা হবে। দেশে ৪০৫টি নদ-নদীর শাখা প্রশাখা বিস্তার করে বহমান রয়েছে। তার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা অন্যতম। এসব নদ-নদী প্রতি বছর উজান হতে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি বহন করে সমুদ্রে প্রথিত হয়। বয়ে আনা এ বিপুল পরিমাণ পলির প্রায় ৪০ শতাংশ নদীর তলদেশে জমা হয়। প্রাকৃতিক বিভিন্ন কারণে ক্রমাগত নদীর তলদেশে জমা হওয়ার ফলে নদীর বুকে প্রচুর চর জেগে ওঠে। ফলে নদীর প্রবহমান স্রোত নদীর তীরে বার বার আঘাত হানে এবং তীব্র নদী ভাঙন দেখা দেয়।

নদী ভাঙনের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং প্রতি বছর ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

এছাড়া নদীর তলদেশে পলি ভরনের কারণে দেশের নদ-নদীর গভীরতা ও নাব্য আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় নদীর পানি ধারণ ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ দেশের বিপুল পরিমাণ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। যা জাতীয় উন্নয়নের জন্য বিরাট অন্তরায় এবং কৃষি, সেচ, মৎস্য চাষ, বনায়ন, নৌ চলাচলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

নদীর তলদেশে জমা হওয়া পলি অপসারণ করে নদ-নদীর নাব্য পুনরুদ্ধার, নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নদীর তীর ভাঙন প্রতিরোধে নদী খনন করা হয়। খনন থেকে প্রাপ্ত ড্রেজড আর্থ বিভিন্ন কারণে নদীর নিকটবর্তী চর এলাকায় বা নদীর ভেতরেও ফেলা হয়। ড্রেজড আর্থ বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে পুনরায় তা নদীতেই ফেরত আসে। এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

তাছাড়া অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজড আর্থ যত্রতত্র ফেলার কারণে পরিবেশ দূষণ, কৃষিজমি হ্রাস, আবাসনসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। উল্লেখিত সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য দেশের নদীগুলোয় পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রাপ্ত ড্রেজড আর্থ নদী তীরবর্তী এলাকার অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে নিক্ষেপ বা স্তূপীকরণের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। ক্রমবর্ধমান বিপুল জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে বিশেষ করে খাদ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন চাহিদা মেটানোর জন্যও নতুন ভূমির প্রয়োজন রয়েছে।

নীতিমালায় ড্রেজারের সংজ্ঞা বলা হয়েছে, এক ধরনের নির্ধারিত বিশেষ যন্ত্র বা যান্ত্রিক জলযান যা নদীর তলদেশ বা পানিতে নিমজ্জিত যে কোনো স্থান থেকে মাটি, বালু খনন ও অপসারণপূর্বক নিক্ষেপে সক্ষম। 

ড্রেজিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ড্রেজার দিয়ে সুইংয়ের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে নদীর তলদেশের বালু, মাটি ও পলি অপসারণে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা। ড্রেজড আর্থের মালিকানার বিষয় নীতিমালায় বলা হয়েছে, যে সরকারি সংস্থা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়ন করবে উত্তোলিত ড্রেজড আর্থের মালিকানা যে স্থানে রক্ষিত হোক না কেন এর মালিকানা ওই সংস্থার তথা সরকারের হবে।

বিডি২৪লাইভ/আরএইচ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: