৯০ এর পরে তোমরা ফিলটা বুঝবে না!

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৩৬ এএম

খুব কাছের এক ছোট ভাইকে বলছিলাম, ‘বাচ্চু ভাই মারা গেছে, মনটা খুব খারাপ। কোন কিছুতেই মন বসছে না’। ওর কাছে বিষয়টা খুব একটা গুরুত্ব পায়নি বুঝতে পারছিলাম।

আসলে আমার ফিলিংসটা হয়ত বুঝাতে ব্যার্থ হয়েছি। সত্যি বলতে কি, তোমরা যারা ৯০ এর পরে জন্মগ্রহন করেছ তারা এই ফিলটা বুঝবে না।

তোমরা কখনও টিফিনের টাকা জমিয়ে ক্যাসেট কিনেছ? কখনও প্রতিমাসে এলাকার দোকানে গিয়ে খোঁজ নিয়েছ নতুন ক্যাসেট আসছে কিনা ?

&dquote;&dquote;

আমাদের কাছে তখন এক একটি ক্যাসেট শুধু একটা ক্যাসেটই নয় এগুলোর মধ্যে ছিলে আবেগ মাখা অনেক স্মৃতি। হয়তো কেউ কষ্ট ভুলতে, কেউ নতুন ভালোবাসায়, কারও মনের অজান্তেই গান শুনতো। ছ্যাকা খেলেও বাচ্চু ভাইয়ের গান, প্রেমে পড়লেও বাচ্চু ভাইয়ের গান, উদ্যম তৈরিতেও বাচ্চু ভাইয়ের গান।

আমাদের সময়টা একটা ক্যাসেট বন্ধুদের বাসায় বাসায় ঘুরতো। হয়তো স্টোক শেষ হয়ে যেত বা সবার কেনার সামর্থ্য ছিল না।

তোমরা শুনলে অবাক হবে, এই ক্যাসটই গিফর্টের অন্যতম আকর্ষন ছিল। ক্যাসেট গিফট পেলেই ভালোবাসার মানুষটি বেশি খুশি হতো। কারও প্রেম পত্রের মূল উপকরণই থাকতো এই ক্যাসেটের লিরিকসগুলো।

বাচ্চু ভাইর প্রথম ব্যান্ড ফিলিংস (১৯৭৮)। এর পর যোগ দেন সোলসে। ১৯৮০ থেকে পরবর্তী এক দশক এই ব্যান্ডে যুক্ত ছিলেন। সোলস ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে নিজে গঠন করেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি (LRB)। প্রথমে এলআরবির পূর্ণ অর্থ ছিল লিটল রবিনস ব্যান্ড। পরে এই নাম বদলে করা হয় লাভ রানস ব্লাইন্ড।

বাংলাদেশে হয়ত অনেক শিল্পীই আছেন, থাকবেন কিন্তু এরকম বাচ্চু দ্বিতীয়টা আর কখনও আসবে না।

আমাদের সময় বেশি আকর্ষনীয় ছিল মিক্সড ব্যান্ড এ্যালবামগুলো। সবচেয়ে ভালো শিল্পীদের নিয়ে এই এ্যালবামগুলো বাজারে আসত। তখন একটা অপ্রচারিত বা অনির্ধারিত বিষয় ছিল যে বেশি জনপ্রিয় ক্যাসেটের মোড়কে তার ছবি প্রথমে থাকতো। আমার দেখা বেশিরভাগ এ্যালবামেই বাচ্চু ভাইয়ের ছবি থাকতো।

&dquote;&dquote;

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় ১৮ গান: ১. চলো বদলে যাই, ২. রুপালি গিটার, ৩. ফেরারি মন, ৪. হাসতে দেখো, ৫. ঘুমন্ত শহরে, ৬. এখন অনেক রাত, ৭. কষ্ট পেতে ভালোবাসি, ৮. আসলে কেউ সুখী নয়, ৯. একদিন ঘুম ভাঙা শহরে, ১০. উড়াল দেব আকাশে, ১১. রাত জাগা পাখি হয়ে, ১২. মাধবী, ১৩. বার মাস, ১৫. সেই তুমি কেন অচেনা হলে, ১৬. মেয়ে ও মেয়ে, ১৭. কবিতা সুখ ওড়াও, ১৮. এক আকাশ তারা।

আমার দেখা বাচ্চু ভাই এমন একজন শিল্পী যার সব গানই ভাল লাগতো। তার লেখা ও সুর করা গান গুলোও ছিল সমান জনপ্রিয়।

বাচ্চু ভাই একজন শিল্পীইতো তাই না ? তাহলে তার জন্য এমন আবেগ কেন আমাদের ? আবেগটা আসলে লেখনির ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটা আত্মা থেকে আসে। আমার মনে আছে ঈদের আগে প্রতিদিন এলাকার ক্যাসেটের দোকানে যেতাম নতুন কোন ক্যাসেট আসছে কিনা। কারণ নতুন ক্যাসেট কার আগে কে কিনবে তার প্রতিযোগিতা চলতো। প্রথম ক্যাসেটগুলোতে লিরিক্স লেখা থাকতো না। আমরা সেই লিরিক্স বার বার শুনে লিখতাম। ক্যাসেট বার বার পিছনে টেনে বার বার শোনাটা এতটা সহজ ছিল না। ডায়রিটা এখন আছে। যার বেশিরভাগ গানই বাচ্চু ভাইয়ের ছিল। ঈদের দিন পাড়া মহল্লায় সেই গানগুলোই বাজতো। বিরক্ত লাগতো না। ভিতরটায় অজানা আনন্দ কাজ করতো।

নিস্তব্ধ রাতের সঙ্গী ছিল এই বাচ্চু ভাইয়ের গান। বাচ্চু ভাইয়ের গানের সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক যা দেখা যায় না। আর তাই তার চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারি না। বুকের ভিতরটা ডুকরে কেদেঁ উঠে। বাচ্চু ভাই নাই ভাবলেই চোখ ছলছল করে উঠে। ভালো থাকেন ভাই ওপারে।

লেখক: আমিরুল ইসলাম আসাদ
এডিটর ইন চিফ, বিডি২৪লাইভ

[খোলা কলামে প্রকাশিত লেখা সম্পূর্ণ লেখকের একান্ত নিজস্ব মতামত। এর সঙ্গে বিডি২৪লাইভের কোন সম্পর্ক নেই।]

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: