কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর গোপন দানের কাহিনী

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৫৯ পিএম

কিংবদন্তি ব্যান্ড সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু সেদিন ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আর বলেছিলেন, ‘আয়ান বাবুটা, সোনামনিটা, আল্লাহ্ তোমাকে ভালো করে দিবেন, সুস্থ করে দিবেন।’

ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৪ সালে নেত্রকোনার কৃষ্ণপুর বড়বাড়ি এলাকায়। ওই এলাকার আবু বকর সিদ্দিকী নামে জনৈক ব্যক্তি সদ্য প্রয়াত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর এক অজানা মহানুভবতার গল্প তুলে ধরেছেন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে।

তিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দাবি করেছেন যে, ২০১৪ সালে তার বোনের আড়াই বছরের ছেলেকে বাঁচাতে চিকিৎসার্থে প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চু আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন। সেই সময় আয়ানের জন্য সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন আবু বকর। সেই পোস্ট পড়েই আইয়ুব বাচ্চু সাহায্যের জন্য হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন আবু বকর।

শনিবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে দেয়া তার স্ট্যাটাসটি ইতিমধ্যে তুমুল আলোচিত ও শেয়ার হয়েছে।

আবু বকর সিদ্দিকীর সেই স্ট্যাটাসটি বিডি২৪লাইভের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:

আবু বকর সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার আড়াই বছর বয়সী ভাগিনা আয়ানকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জরুরি ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন করানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। অপারেশনটা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। আয়ানকে বাঁচাতে হলে এই অপারেশনের কোন বিকল্প ছিল না। বিভিন্ন সোর্স থেকে অপারেশনের জন্য টাকা সংগ্রহ করার পরও প্রায় দেড় লাখ টাকার ঘাটতি ছিল, যা কোনোভাবেই এই অল্প সময়ের মধ্যে জোগাড় করতে পারছিলাম না।

তখন আর উপায়ন্তর না দেখে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ফেসবুকে আয়ানের অপারেশনের জন্য সাহায্য চেয়ে একটি পোস্ট দিই। সময় হাতে ছিল আরও সাত ঘণ্টা। কিন্তু সকাল ৯টা পর্যন্ত কারও কোনো সাহায্য না পেয়ে হতাশ হয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেবকে অনুরোধ করলাম অপারেশন শুরু করার প্রস্তুতি নিতে এবং সংগৃহীত টাকা পেমেন্ট করে বকেয়া টাকার জন্য তিন ঘণ্টা সময় নিলাম।

অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঠিক তখনই এক মহান ব্যক্তির আগমন ঘটল সেখানে। এসেই তিনি আয়ানের অভিভাবককে খুঁজতে লাগলেন। আমরা তখন তার সঙ্গে কথা বললাম এবং খুবই অবাক হলাম ওনাকে দেখে। জানতে পারলাম উনি ফেসবুকের পোস্টটা দেখে আয়ানকে দেখতে এসেছেন।

জরুরি বিভাগ থেকে আয়ানকে অচেতন এবং অক্সিজেন মাস্ক পরানো অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারের সামনে আনা হয়। ওই ভদ্রলোক আয়ানকে দেখে কাছে গেলেন এবং আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দুই-তিনবার বললেন, আয়ান বাবুটা, সোনামনিটা, আল্লাহ্ তোমাকে ভালো করে দিবেন, সুস্থ করে দিবেন। এ কথাগুলো বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলেন। তার কান্না দেখে আমরাও কেঁদে ফেললাম।

যাই হোক, কিছুক্ষণ পরই আয়ানকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হল। প্রায় চার ঘণ্টা লাগল অপারেশন শেষ হতে। আল্লাহর অশেষ রহমতে অপারেশন সফল হল। ওই বিশেষ ব্যক্তিটি তখন জানালেন সম্পূর্ণ বকেয়া টাকা তিনি পরিশোধ করে দিয়েছেন এবং অনুরোধ করলেন যে উনি জীবিত থাকাবস্থায় আমরা যাতে ওনার এই আর্থিক সহযোগিতার কথা কাউকে না বলি।

আজ উনি জীবিত নেই। তাই নিজেকে কোনোভাবেই আর আটকাতে পারলাম না, বলে ফেললাম। উনি আর কেউ নন-প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু। মহান আল্লাহ্তায়ালা এই মহামানবকে বেহেশত নসিব করুক... আমিন, আমিন, আমিন।’

উল্লেখ্য, গত (১৮ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে যান আইয়ুব বাচ্চু। শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরদেহ নেয়া হয় তার গানের স্টুডিও মগবাজারে ‘এবি কিচেনে’। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর মরদেহ নেয়া হয় চ্যানেল আই কার্যালয়ে। সেখানে তৃতীয় জানাজা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখা হয় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

এরপর তার মরদেহ নেয়া হয় নিজ জন্মস্থান চট্টগ্রামে। সেখানে বায়তুল ফালাহ মসজিদের ময়দানে আইয়ুব বাচ্চুর চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার (২০ অক্টোবর) মাগরিবের নামাজের আগে চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজারের চৈতন্যগলি বাইশমহল্লা কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

আইয়ুব বাচ্চু শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা ছিলেন, তিনি একাধারে গায়ক, গিটারবাদক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: