‘মিউজিকে আমরা অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যাচ্ছি’

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৫৬ পিএম

শুরুর গল্পটা অন্য অনেকের মতই ছিল তার। অনেকটা পথ স্ট্রাগল করে, তারপর দেখেছেন সাফল্যের মুখ। সেই ২০০৩-০৪ থেকে শুরু করে ২০১০ সাল পর্যন্ত একটানা পরিশ্রম করে গেছেন। এর মাঝে পরিচিত হয়েছেন হাবিব ওয়াহিদের সাথে। তাঁর দেয়া শিক্ষা আর প্রেরণাই অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে ব্রেক এনে দেয় ক্যারিয়ারে। ফলশ্রুতিতে ২০১০ সালে ‘শিহরণ’নামের মিক্সড অ্যালবাম দিয়ে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে প্রথমবারের মত আত্নপ্রকাশ করলেন তিনি।

এরপরের গল্পটা সাফল্যে মোড়া। নাটকের আবহ সঙ্গীত থেকে শুরু করে সলো ও মিক্সড অ্যালবাম যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলেছে সেখানেই। মিনার, তাহসান, তানজিব সারোয়ারসহ প্রথম সারির পরিচিত শিল্পীদের অনেক গান ও অ্যালবামের সুর এবং সঙ্গীতায়োজন করেছেন তিনি। কারো কারো মতে, ‘সাম্প্রতিক সময়ের স্যাড রোম্যান্টিক গানের সবচেয়ে আলোচিত ও নেপথ্য কারিগরই তিনি।’ বলছিলাম-এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা ও জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক সাজিদ সরকারের কথা। ১৯৮৯ সালে জন্ম নেয়া এই তরুণ, আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে এক নতুন আইকন। সম্প্রতি তার সঙ্গীত জীবন, অডিও ইন্ডাস্ট্রি ও ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে কথা হয় তার সাথে।

যেমন ছিল শুরুটা: পরিবারে কেউই মিউজিকের সাথে জড়িত ছিলেন না। অনেকটা নিজের ইচ্ছেতেই মিউজিকে আসা। ২০০৩-০৪ সালের কথা। স্কুলে পড়ার সেই সময়টাতেই মিউজিক প্রডাকশনের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি। বিশেষ করে হাবিব ওয়াহিদের কৃষ্ণ ও মায়া অ্যালবাম দুটি আমাকে খুবই প্রভাবিত করে। শুরুর দিকে কম্পিউটারে বিভিন্ন মিউজিক সফটওয়্যারে কাজ করতাম। পরে আস্তে আস্তে সেটা প্যাশনে পরিণত হয়। কয়েক বছর পর, ২০০৮ সালে হাবিব ভাই এর সাথে পরিচিত হই এবং তার সাথে কো প্রডিউসার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাই। বলতে গেলে এরপরই মিউজিক প্রডাকশন ও সাউন্ড নিয়ে আমার স্কিল ডেভেলপ করে। তাঁর হাত ধরেই ২০১০ সালে ‘শিহরণ’ অ্যালবামে এককভাবে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্নপ্রকাশ করি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরিবারও ততোদিনে আমার মিউজিক্যাল জার্নিকে সমর্থন দিতে শুরু করেছে।

যাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত: দেশে অবশ্যই হাবিব ভাই (হাবিব ওয়াহিদ)। বিদেশে হ্যান্স জিমার ও এ.আর. রহমানের কাজ আমার ভীষণ পছন্দের। এই তিনজনের প্রভাব আমার উপরে সবচেয়ে বেশি।

&dquote;&dquote;গানে যে জিনিসটি গুরুত্বপূর্ণ: আমি মনে করি লিরিকসই গানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো ও সহজ কথার লিরিকস যা সবাই বুঝতে পারে, আমি সেই ধরনটাকেই বেশি পছন্দ করি। তবে সহজ হলেও কথা ব্যতিক্রমী হওয়া চাই। আর সুর করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো জনরা মাথায় থাকেনা। আমার কথা হল, নিজেকে আগে পছন্দ হতে হবে তারপর মানুষের পছন্দের কথাটি মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে পুরো গানে সিম্পলিসিটি (সারল্য) থাকতে হবে।

আমাদের মিউজিকের সমস্যা যেখানে: আমার মনে হয়, আমরা অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যাচ্ছি। আমাদের ভালো স্ট্যান্ডার্ড সেট করতে হবে। সেইসাথে কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ করে যেতে হবে। সেই সাথে কপিরাইটের জায়গাতে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। রয়্যালিটির অর্থ যাতে সুষমভাবে গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক পায় সে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। বর্তমান অবস্থা থেকে আমি ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করি।

আইটেম সং প্রসঙ্গ: আপাতত আইটেম সং এর বিষয়ে আগ্রহ নেই। তবে ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লিরিকসটা কতোটুকু আমার ব্যক্তিত্বের সাথে যায়, সেটা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেব।

যাদের সঙ্গীত পরিচালনা ভালো লাগে: দেশে হাবিব ওয়াহিদ, প্রীতম, ইমরান প্রমুখ। আর বিদেশে এ.আর.রহমান ও হ্যান্স জিমারের পাশাপাশি অমিত ত্রিবেদী, বিশাল-শেখর, শচীন জিগার ও মিথুন শর্মা।

দেশে পছন্দের গায়ক-গায়িকা: একটু পুরনোদের মধ্যে মিনার, তাহসান, রেহান রসূল, ইমরান ও তানজিব সরোয়ারের কথাই বলতে চাই। ফিমেলদের মাঝে কণা, ন্যান্সি, পূজা ইনাদের নাম বলা যায়। আর একদম নতুন হিসেবে মাহতিম সাকিব বেশ সম্ভাবনাময়।

বিদেশে যাদের গান ভালো লাগে: এডেল ও এড শিরান অনেক প্রিয়। এছাড়া রিচার্ড মার্ক্স, লিংকিন পার্ক, ইউটু, কোল্ডপ্লে, প্যাসেঞ্জারের গান শোনা হত বেশি। আর ভারতে অরিজিৎ সিং, অ্যাশকিং, শ্রেয়া ঘোষাল, বেণী দয়াল, কেকে ও মোহিত চৌহানকেও ভালো লাগে।

অবসরে যা করা হয়: কম্পিউটারে গেমস খেলা ও ইউটিউব দেখা হয় বেশি।

প্রিয় মুভি ও টিভি সিরিজ: আমার সাসপেন্স ও থ্রিলার ঘরানার মুভি বেশি ভালো লাগে। ফেভারিট মুভি ‘পারসুইট অব হ্যাপিনেস।’ আর টিভি সিরিজগুলোর মাঝে ব্রেকিং ব্যাড, ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড, বেটার কল সল এবং গেম অব থ্রোনস বেশি প্রিয়।

সঙ্গীত পরিচালনায় নতুনদের জন্য পরামর্শ: আসলে এখানে ভালো করার জন্য কোনো শর্টকাট মেথড নেই। আর শেখারও কোনো শেষ নেই। প্রতিনিয়ত শিখতে হবে। আর অভিজ্ঞতাটা একটা বড় বিষয়। কন্টিনিউয়াসলি কাজ করতে করতে সেটা আসবে।

সাক্ষাৎকার গ্রহন: আরেফিন আল ইমরান

বিডি২৪লাইভ/এএআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: