২ কোটি যায় বসের পকেটে, আমি পাই ৪২ লাখ
ট্রেন থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও টাকাসহ গ্রেফতার চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে দুইদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার শুনানি শেষে তার দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় সোহেল রানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ। দুইদিন থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) জেলার সোহেল রানাকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে বিপুল পরিমাণ টাকা ও মাদকসহ গ্রেফতারের পর শনিবার কিশোরগঞ্জ আদালতে চালান দিয়ে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি আবদুল মজিদ গণমাধ্যমকে বলেন, রিমান্ডে সোহেল রানা জানিয়েছেন ওই দিনের জব্দকৃত ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকার মধ্যে ১২ লাখ টাকা ছিল চট্টগ্রাম কারাগারের ডিআইজি প্রিজন পার্থ কুমার বণিক ও সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের। জব্দকৃত আড়াই কোটি টাকা ও ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেকের উৎস সম্পর্কে সোহেল রানা বলেছেন টাকাগুলো কারাগারে মাদক ব্যবসাসহ অবৈধভাবে রোজগার করেছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আজনা যায়, সোহেল পুলিশকে আরও বলেছেন চট্টগ্রাম কারাগারে অবৈধভাবে প্রতি মাসে আড়াই কোটি টাকা রোজগার হয়। এই টাকার অংশ হিসেবে মাসে ৪২ লাখ টাকা ভাগ পান সোহেল। বাকি দুই কোটি টাকা তার ঊর্ধ্বতন দুই বসকে দেয়া হয়। তবে ওই দুইজন ঊর্ধ্বতন বসের নাম বলেননি সোহেল।
গ্রেফতার হওয়ার দিন ট্রেনে ময়মনসিংহ গিয়ে ২৮ অক্টোবর চেকের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের পর ১ নভেম্বর ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল সোহেলের। এদিন কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জেলারদের সঙ্গে সভা করে এসব টাকার ভাগের অংশ চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজন ও সিনিয়র জেল সুপারের লোকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল তার।
কারাগারে অবৈধভাবে টাকা কামানোর বিষয়ে সোহেল পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়ে বলেন, ঠিকাদার অজিত নন্দির মাধ্যমে কাঁচা বাজারের সঙ্গে মাদক ঢুকিয়ে কারাগারের মাদকাসক্ত বন্দিদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি, বন্দিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো, কারাগারে ভালো রুমে কম বন্দিদের সঙ্গে আরামে রাখা, রিমান্ডের আসামিকে কষ্ট না দিয়ে ভালোভাবে রাখা, দীর্ঘদিন সাজাপ্রাপ্ত ও কয়েদিদের স্ত্রীর সঙ্গে রাতযাপনের সুযোগ করে দেয়া, বেশি টাকা দিলে হাসপাতালে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া, সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের বিনাশ্রমে রাখা, বিনাশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের অপরিচ্ছন্ন কাজ করানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, কারাগারে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, স্থানীয় বন্দিদের দূরের কারাগারে স্থানান্তরের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, এমনকি খারাপ বন্দিদের দিয়ে ভালো বন্দিদের প্রতিদিন নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হতো।
কারারক্ষী আনোয়ারের নেতৃত্বে আটজন কারারক্ষী এবং কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী এসব কাজে আমাকে সহযোগিতা করতেন। অবৈধভাবে এসব টাকা রোজগারের বিষয়টি আমার দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানতেন। প্রতি মাসে অবৈধ আয়ের টাকা পরের মাসের ৫ তারিখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা হতো। যদিও আমি ধরা পড়ার পর বিষয়টি অস্বীকার করছেন তারা।
এদিকে, এ ঘটনার পর গত ২৮ অক্টোবর কারা মহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে সোহেল রানা বিশ্বাসকে বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান সহকারী কারা মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তবে সোহেল রানার জবানবন্দির অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেছেন, নানা অপকর্ম, অফিসিয়াল শৃঙ্খলা ভঙ্গ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতসহ বিভিন্ন অভিযোগে এর আগেও তিনবার বরখাস্ত হয়েছিলেন সোহেল রানা। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সোহেল মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক গল্প সৃষ্টি করে এসব কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। অবৈধ টাকার উৎস সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তে সব প্রমাণ হবে।
একইসঙ্গে জেলার সেহেল রানা বিশ্বাসের জবানবন্দির এসব বিষয় অস্বীকার করে চট্টগ্রাম কারাগারের ডিআইজি প্রিজন পার্থ কুমার বণিক বলেন, জেলার সোহেল একজন মাদকসেবী। তার অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক। পুলিশের হাতে বিপুল টাকা নিয়ে গ্রেফতারের পর অসত্য কথা বলেছেন সোহেল। ওই টাকা এবং আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সঠিক নয়।
বিডি২৪লাইভ/এসএস
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: