দারিদ্র্যমুক্ত লোকের প্রায় ৫০ শতাংশই বর্তমান সরকারের সময়কালে

প্রকাশিত: ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:৪০ এএম

‘শিক্ষক কৃষক মিডিয়া মজুর কুলী শ্রমিক আপামর জনতা সকল শ্রেণির মানুষের জন্য আমাদের দেশের অর্থনীতি অসাধরণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০১-০৬ সময়কালে আমাদের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ৫.৪০ শতাংশ। গত দশ বছর গড়ে ৬.৭১ শতাংশ হারে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এখন প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ শতাংশ। স্বাধীনতার পর অর্থনীতির আকার ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে ৩৮ বছর লেগেছে। আর মাত্র সাত বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ২০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এখন তা ২৭৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।’

‘সরকারি বিনিয়োগ জিডিপি’র ৫.৬ শতাংশ থেকে ৮.২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ২০০৫-০৬ এর ৯৯ হাজার ২৭১ কোটি টাকা হতে প্রায় চার গুণ বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৭৪৪ মিলিয়ন ডলার যা তিন গুণ বেড়ে ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৭৫১ মার্কিন ডলারে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল (৬ নভেম্বর) কুমিল্লার লালমাইয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ এর লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচনী আসন কুমিল্লা- ১০ এর কুমিল্লা সদর দক্ষিন, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সমাবেশে বর্তমান সরকারের গত দশ বছরের অর্থনৈতিক এলাকার উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘চার দলীয় জোট সরকারের শেষবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.১৭ শতাংশ এবং ১/১১-এর সরকারের সময় ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ১২.৩ শতাংশ। গত তিন বছর সাত শতাংশের ওপর জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি ৬.০ শতাংশের নিচে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০.০ শতাংশ থেকে ২২.০ শতাংশে এবং আর অতি-দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ১১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে।’

‘১৯৯২ সালের পর হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট যত লোক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে তার প্রায় ৫০ শতাংশই ঘটেছে বর্তমান সরকারের সময়কালে। ২০০১-০৬ সময়কালের তুলনায় ২০০৯-১৭ সময়কালে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বাজেট বরাদ্দ এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৬৬.৫ বছর থেকে বেড়ে হয়েছে ৭২.০ বছর। একই সময়ে শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ২০০৬ সালে ছিল ৪৫ জন, যা এখন ২৮ জনে নেমে এসেছে।’

‘২০০৫-০৬ অর্থ বছরের বাজেটের আকার ছিল ৬৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সাত গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ এবং ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় চার গুণ। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যাও এই সময়ে প্রায় ৪২% বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে এ সময় প্রতিবছর প্রায় ৯৩% এডিপি ব্যয়িত হয়েছে। রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাত ৯.১ শতাংশ থেকে ১০.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’

‘আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকে। অর্থাৎ, ২০০৮-০৯ অর্থ বছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর পর্যন্ত নয় বছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে রপ্তানী আয়ের পরিমাণ ছিল ১০.৫ বিলিয়ন ডলার। দশ বছরে রপ্তানী আয়ের পরিমাণ চার গুণ বৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সেবা খাতসহ মোট রপ্তানি আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।’

‘২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.৯৮ বিলিয়ন ডলার যা ২০০৫-০৬  অর্থবছরে ছিল ৪.৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার যা এখন দশ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৫ বিলিয়ন ডলারে, যা প্রায় সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে চার গুণ।’

মন্ত্রী আরও জানান, ‘২০০৮ সালের আমাদের নির্বাচনী ইশহারে ছিল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাবে ২০২১ সালে কিন্তু বর্তমানে ৯০ ভাগের বেশী ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় বাকী অংশ করতে ১ বছর সময়ই যথেষ্ট এবং ২০২১ এর আগেই আমারা আমাদের অধিকাংশ লক্ষ্যই পূরণ করতে সক্ষম হবো। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ আর কোন কল্পনা নয়, নিছক কোন স্বপ্ন নয়- এখন এটা বাস্তবতা। আমাদের প্রত্যেকটি সেক্টরে অগ্রগতি অসাধারন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’

‘আন্তর্জাতিকভাবে যারা অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন বা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর মতে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে আমরা এশিয়ার ৫ম টাইগার হিসাবে রূপান্তর হবো। যেখানে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে কোন অবস্থান ছিলনা- আর আজ সারা বিশ্ব বলছে আগামী ৫০ সাল পর্যন্ত যে পাঁচটি দেশ জিডিপিতে সবচেয়ে বেশী সক্ষমতা অর্জনে সফল হবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ তারমধ্যে অন্যতম একটি দেশ।’

‘আজ আমাদের সক্ষমতা অর্জন হয়েছে কয়েকটি বিশেষ কারণে এরমধ্যে অন্যতম হলো সরকারের ধারাবাহিকতা এবং আমাদের রয়েছে একজন দক্ষ পরিচালক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যিনি দক্ষতার সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা বিনির্মাণে সফলতার সাথে অসাধারণ গতিতে এগিয়ে চলেছেন। আরেকটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর দেশের অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে উজ্জীবিত করে, সকলকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছেন। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে পৌঁছে দিবে উন্নত বিশ্বের কাতারে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ২০৩০ সালের মধ্যে এদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত হবে এবং আমরা সকলেই সেটা বিশ্বাস করি এটা সম্ভব।’

‘আগামীতে যদি আমরা আল্লাহর রহমতে দায়িত্ব পাই জনগনকে সেবা করার তবে দুই কোটি মানুষের নতুন কর্মস্থান সৃষ্টি করতে পারব। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরী করছি যেখানেই কর্মস্থান হবে ১ কোটি এবং বাকি ১ কোটি অন্যান্য প্রকল্প ও বেসরকারী খাতে কর্মসংস্থান হবে। দেশে কোন শিক্ষিত কর্মক্ষম মানুষকে কাজের জন্য অপেক্ষ করতে হবেনা।’

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পরিকল্পনামন্ত্রী আহ্বান করে বলেন, ‘উন্নয়নকে ধরে রাখতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে সরকারের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। কেননা অতীত ইতিহাস এবং বর্তমানের তুলনামূলক চিত্রই আমাদেরকে বলে দেয় বাংলাদেশকে উন্নত দেশ করার জন্যে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই, আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। তাই সকল প্রকার ষড়যন্ত্র বা অপশক্তির কুটচাল নস্যাৎ করে আমাদের সকলকেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে শেখ হাসিনাকে আগামী নির্বাচনে জয়ী করে সরকার গঠনের সুযোগ প্রদানের জন্য।’

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: