দোতলায় রোগী, নিচতলায় গান

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৩২ এএম

লালন উদ্দীন, বাঘা (রাজশাহী): শনিবার রাত ১০টা। রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নিচতলায় তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। রয়েছে রঙিন বাতির ঝলকানি। মঞ্চে জমকালো আয়োজনে চলছে গান-বাজনা। অথচ ঠিক সেই সময় দ্বিতীয় তলার মহিলা ওয়ার্ডে ছটফট করছে এক রোগী।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬-এর ২(ঞ) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতাল নীরব এলাকাভুক্ত। এর চারদিকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় উচ্চমাত্রায় কোনো যন্ত্র বাজানো যাবে না। এই নির্দেশ ভঙ্গ হলে সর্বোচ্চ এক মাসের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।

হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, চলতি সপ্তাহে হিসাবরক্ষক মজিবুর রহমান অবসরে যাচ্ছেন। এ জন্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) সিরাজুল ইসলাম শনিবার রাতে এক জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ ভূরিভোজের আয়োজন করেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে একটানা রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। আটটি বড় সাউন্ড বক্সে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান গাওয়া হয়।

হাসপাতালের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, এ অনুষ্ঠানের জন্য প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থকে যথাক্রমে এক হাজার, ৭০০, ৫০০ ও ৩০০ টাকা হারে চাঁদা তুলেছেন টিএইচও।

মহিলা ওয়ার্ডে যন্ত্রণায় কাতরানো রোগী চম্পা খাতুনের স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অসুস্থ রোগীরা যখন দ্বিতীয় তলায় ছটফট করছে, তখন ডাক্তারসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রঙিন বাতি জ্বেলে আনন্দ উৎসব করেন। এর ফলে রোগীরা সেবা তো দূরের কথা, ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেনি।’ তিনি জানান, আশপাশে জেএসসি পরীক্ষার্থীরা রাতে পড়তে পারেনি। তিনি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি কামনা করেন।

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে, হিসাবরক্ষক মজিবুর রহমানের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি নেই। বিগত সময়ে রাজশাহীর কাটাখালীতে তাঁর দ্বিতীয় তলা ভবন নির্মাণ, বাঘায় জমি কেনা এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে সন্তানকে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি অস্ত্রোপচার কক্ষের এসি খুলে নিয়ে তাঁর নিজের বাসায় লাগিয়েছেন। ভুয়া নামে রোগী ভর্তি করে ঠিকাদারকে খাবার সরবরাহে সহায়তা, স্টেশনারি ক্রয় ও অস্ত্রোপচার যন্ত্রাংশ বিক্রির টাকা লোপাট করেছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দে কারচুপি এবং বহিরাগত লোকদের সরকারি কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে সেই টাকা কোষাগারে জমা দেননি।

তবে মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। যা কিছু করেছি, তা সৎপথে রোজগার করে।’

এ বিষয়ে টিএইচও ডা. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে চাঁদা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা একই পরিবারের সদস্য হিসেবে সব স্টাফ মিলে এ বিদায় অনুষ্ঠান করেছি। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। কনসার্ট হয়নি।’

রাজশাহীর সিভিল সার্জন সঞ্জীব সরকার বলেন, ‘একজন কর্মকর্তাকে বিদায় দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের হলরুম রয়েছে। আলাদা মঞ্চ করে কনসার্ট করার প্রয়োজন ছিল না। বিষয়টি দেখব।’ সূত্র: কালের কন্ঠ

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: