ইসলামে নারীর পর্দা ও সাজসজ্জা

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩৭ এএম

মহান আল্লাহ্ সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। মানব সমাজে এ পরম আকর্ষণের প্রতি ইসলাম বিধি-নিষেধ আরোপ করে সৌন্দর্য চর্চার একটি মাপকাঠি রচনা করে দেয় যাতে ভারসাম্যপূর্ণভাবে তার চর্চা হয় ও অশ্লীলতার কারণ না হয়ে যায়। তাই প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য হলো, সৌন্দর্য চর্চাকে স্বীয় স্বামী ও মহিলা অঙ্গন পর্যন্ত সীমিত রাখা। মুহরিম ব্যক্তিদের পর্যন্ত তা সম্প্রসারিত করা দোষণীয় নয়। এছাড়া অন্যদের সামনে সাজ-গোজের কোন মূল্য নেই।

স্বামীর উদ্দেশ্য সাজ-সজ্জা গ্রহণ:

স্বামীর উদ্দেশ্য সাজসজ্জা গ্রহণ করা একটি সওয়াবের কাজ। স্বামীর উদ্দেশ্য সাজসজ্জায় থাকার জন্য স্ত্রীর প্রতি শরীয়তে নির্দেশ রয়েছে। বর্তমানে নারীদের অবস্থা হলো, স্বামীর সামনে তারা নোংরা অপরিছন্ন ও ময়লা কাপড়-চোপড় পরে থাকে। আর বাইরে বেড়াতে যাওয়ার সময় আপাদমস্তক সুসজ্জিত হয়ে যায়। কেউ স্বামীর উদ্দেশ্য সাজ-সজ্জা গ্রহণ করলে সমালোচনা শুরু হয়ে যায় যে, মেয়েটির লাজ-লজ্জা বলতে কিছুই নেই- স্বামীর সামনে সে কেমন রূপচর্চা করছে!

পরিতাপের বিষয়! যেখানে সাজসজ্জা গ্রহণ করা উচিত সেখানে তা নিন্দনীয়। আর যেখানে

সাজসজ্জা গ্রহণ করা উচিত নয় সেখানে তা প্রশংসনীয়। স্বামী যখন স্ত্রীর সাজ-সজ্জা কামনা করে তখন তা গ্রহণ না করার কি যুক্তি থাকতে পারে?

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মহিলারা স্বগৃহে তো বাদী-দাসী ও গৃহপরিচালিকার ন্যায় অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন থাকে। আর যখন কোন বিশেষ অতিথির আগমন ঘটে তখন বিভিন্ন সাজ-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে সম্পূর্ণ নববধূ বনে যায়।

প্রতিটি জিনিসের একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। আমার প্রশ্ন, ভাল কাপড়-চোপড় পরিধানের উদ্দেশ্য কি শুধু অন্যদেরকে দেখানো? অদ্ভুত কা-! যাকে দেখানের জন্য এই কাপড়-চোপড়ও সাজ পোশাক তৈরি হয়েছে, যার টাকায় তৈরি বা কেনা হয়েছে, তার সামনে তা পরিধান না করে অন্যদের সামনে পরিধান করা হয়। বিষয়টা কিছুটা লজ্জাজনক হলে ও সংশোধনের প্রয়োজনের বলতে হচ্ছে।

আজকালকার স্ত্রীরা স্বামীর সঙ্গে কখনও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলবে না । তার সামনে ভাল কাপড়-চোপড় পরিধান করবে না। অথচ অন্যের গৃহে গেলে সুমিষ্টভাষী বনে যাবে, সুন্দর থেকে সুন্দরতম এবং উন্নত থেকে উন্নততর সাজে সজ্জিত হবে। এ কেমন কথা? অর্থ খরচ করবে স্বামী আর উপভোগ করবে অন্যরা?

মাহরাম ব্যতীত অন্য লোকদের উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য চর্চা করা:

যাদের জন্য সৌন্দর্যচর্চা করা জায়েয তারা হলো, স্বামীসহ ঐ সকল পুরুষ যাদের সাথে মেয়ে লোকের বিয়ে চিরস্থায়ীভাবে হারাম। তাদের তালিকা হচ্ছে: নিজ বাপ, ভাই, ছেলে, ছেলের ছেলে, শ্বশুর, স্বামীর ছেলে ইত্যাদি।

তবে শর্ত হলো, ওই ব্যক্তিকে আমানতদার হতে হবে যিনি আল্লাহ্কে ভয় করেন। সে যদি ফাসিক ও গুনাহগার হয় তাদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করা জায়েয নেই, সেটা নিজ ভাই হলেও না। অনুরূপভাবে মহিলারা অমুসলিম মহিলাদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশের বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। পবিত্র কুরআনের নি¤েœাক্ত বাণীটি তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

মহান আল্লাহ্ বলেন. অর্থাৎ ‘তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর. পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভাগিনা, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে’। (সূরা আন-নূর: ৩১)

মহিলারা আয়াতে বর্ণিত সকল লোক ব্যতীত অন্যদের সামনে সুসজ্জিতাবস্থায় যতবারই আসুক ততবারই তাদের গুণাহ হবে।

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মূসা আল আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস থেকেও এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত আছে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন: ‘প্রত্যেক চোখ যেনা করে। মেয়েলোক যখন সুগন্ধি মেখে কোন মজলিশের পাশ অতিক্রম করে, সেও যেনাকারিণী”। (আবু দাউদ ও তিরমিযী)

এর অর্থ হলো, সে যেনার প্রতি আহ্বানকারিণী। এ প্রকার তৎপরতার জন্য সে গুনাহগার হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

হাদীসে উল্লিখিত ‘চোখ যেনা করে’ এর অর্থ হলো, স্ত্রীদের নিষিদ্ধ সতরের দিকে তাকানো গুনাহ। কেননা, হারাম দৃষ্টি যেনার কারণ এবং যৌন কামনা সৃষ্টির উপায়।

ইবনু খুযাইমা বর্ণিত আরো একটি হাদীস উপরোক্ত বিষয়টির ভয়াবহতার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: ‘আল্লাহ্ সে স্ত্রীলোকের নামায কবুল করেন না, যে সুগন্ধি মেখে তার ঘ্রাণ বাতাসে ছড়িয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়, যে পর্যন্ত না সে ঘরে ফিরে আসে ও গোসল করে।” (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

এটা হলো, সুগন্ধি নিয়ে মসজিদে যাওয়ার পরিণতি। কিন্তু যে মহিলারা সুঘ্রাণ ছড়িয়ে খোলামেলা পুরুষের মজলিশে কিংবা অনুষ্ঠান অথবা তাদের ক্লাব ও অন্য লোকের ঘরে যায়, তাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।

মহিলাদের উগ্র চালচলনের ভয়াবহ আখিরাতের পরিণতি কি হবে?

মহিলাদের উগ্র চালচলনের ভয়াবহ আখিরাতের পরিণতি সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহ আনহু) বর্ণিত হাদীসটিও এখানে উল্লেখের দাবী রাখে।

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন: ‘দোযখের দু’প্রকার লোককে আমি (দুনিয়ায়) দেখিনি।

এক: যাদের নিকট গরুর লেজের মতো লম্বা লাঠি থাকবে এবং এর দ্বারা তারা লোকদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করবে।

দুই: এক প্রকার স্ত্রীলোক যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ, গুণাহর প্রতি ঝোক প্রবণ এবং অন্যদেরকেও গুনাহর প্রতি আকৃষ্টকারিণী, তাদের মাথা খোঁপা হবে অহঙ্কারী উটের কুব্জের মতো উঁচু।

তারা না বেহেশতে যাবে আর না বেহেশতের ঘ্রাণ পাবে। অথচ বেহেশতের ঘ্রাণ এত এত দূরের পথ থেকেও পাওয়া যায়।’ (মুসলিম শরীফ)

আল্লাহ্র রাসূলের এ মহামূল্যবান ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে সত্যে পরিণত হয়েছে। কেননা, তাঁর উম্মতের মধ্যে এ দু’ধরনের লোকের আবির্ভাব ঘটেছে।

এক: লাঠি দিয়ে লোকদের নির্যাতন করার অর্থ সর্বপ্রকারের নির্যাতন বুঝায়। বনী আদমের মধ্যে একে-অপরের উপর ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের ফলে বা অন্যায়ভাবে স্বার্থ উদ্ধারের জন্য শাসক ও জালিমরা এ ধরনের কাজ অহরহ করে চলছে।

দুই: ‘কাপড় পরেও যে স্ত্রীলোক উলঙ্গ থাকে’ এর অর্থ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরবর্তী যুগে এক শ্রেণীর নারীদের শরীরের কিছু অংশ ঢাকে আর কিছূ অংশ খোলা রাখে অথবা এমন পাতলা কাপড় পরিধান করে যে, শরীরের ভেতর দেখা যায় কিংবা তা এত সংকীর্ণ যে, নারীর শরীরের উঁচু-নীচু অংশ পরিষ্কার দেখা যায়।

উপরোক্ত প্রকারের মহিলারা নিজেরা ইসলাম প্রদত্ত শালীন পোশাকাদি ত্যাগ করত নিজেরা গুনাহে লিপ্ত ও অন্যদেরও তার প্রতি আকৃষ্ট করে। তাই তাদের শাস্তি হলো, তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং তারা তা থেকে এত দূরে অবস্থান করবে যে, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।

তাদের এ বর্বর আচরণের জন্য তাদের প্রতি অভিশাপ বর্ণনা প্রদান করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন: ‘তাদেরকে অভিশম্পাত দাও কেননা তারা অভিশপ্ত (আল্লাহর রহমত পাওয়ার অধিকার বঞ্চিত)।’ (ইবনে হিব্বান, হাকিম)

মর্যাদার পোশাক পর্দা:

ইসলামে পোশাকের মডেল ‘তাক্ওয়ার পোশাক’। যে পোশাক সতর ঢাকার সাথে সাথে সৌন্দর্য চর্চার ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে গর্ব ও অহঙ্কারে পরিণত না হয়, শালীনতা বিকাশে কোনো বাধার সৃষ্টি না করে, তা-ই তাকওয়ার পোশাক।

পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে শালীন ও মার্জিত পোশাকই তাকওয়ার পোশাক। আল-কুরআনের সূরা আন নূর ও সূরা আহজাবে বলা হয়েছে, মহিলারা যেন জাহেলি যুগের মেয়েদের মতো বাইরে নিজেদের রূপ-সৌন্দর্যের প্রদর্শন করে না বেড়ায়। তারা ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় যেন চাদর দিয়ে নিজেদের দেহকে আবৃত করে নেয়। তারা যেন তাদের আচল দিয়ে বুক ঢেকে রাখে। ঝঙ্কারদায়ক অলঙ্কারাদি পরিধান করে ঘরের বাইরে না যায়। ঘরের ভেতরেও যেন তারা মাহরাম ও গায়ের মাহরাম পুরুষদের মধ্যে পার্থক্য করে চলে।

এ ক্ষেত্রে নারীদের ঘরে আটকিয়ে রাখার কথা বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে তাদের সৌন্দর্যটা আবৃত করে রাখার কথা।

যে নারী অনিয়ন্ত্রিত নগ্নজীবন যাপন করে, সে শুধু নিজের সর্বনাশই করে না, তার চাল-চলনের প্রভাব তার ভবিষ্যৎ বংশধরের ওপরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ভাবেই পড়ে।

তেমনি পুরুষের বেলায়ও তা প্রযোজ্য।

...‘যে ব্যক্তি কোনো অপরিচিত নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে কিয়ামতের দিন তার চোখে উত্তপ্ত গলিত লোহা ঢেলে দেয়া হবে।’ (ফাতহুল কাদির)।

হঠাৎ যদি কারো ওপরে নজর পড়ে যায় তাহলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ‘হঠাৎ দৃষ্টি পড়লে ক্ষমার যোগ্য। কিন্তু পুনরায় ভালোভাবে দেখার উদ্দেশ্যে দৃষ্টি দেয়া ক্ষমার যোগ্য নয়’ (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)

তাক্ওয়ার পোশাক যুক্তিসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত, তা কখনো প্রগতির অন্তরায় নয়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ শৃঙ্খলা, সভ্যতা ও আবরু রক্ষা করে চলবে, এটাই ধর্মীয় বিধান। পর্দা বা তাও্কয়ার পোশাক নৈতিক চরিত্রের হেফাজত ও ইভটিজিং প্রতিরোধ করে। সামাজিক অশান্তি রোধ করে। পারিবারিক ব্যবস্থা সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় করে। সুষ্ঠু, সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ সোনালী সমাজ বিনির্মাণে মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করে।

পুরুষের পোশাক পরিধানের বিধি-নিষেধ
ইসলামী পোশাকের বৈশিষ্ট্য

ইসলাম মানুষের জন্য যে পোশাক মনোনীত করেছে, তার বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামসম্মত পোশাক বলতে সেই পোশাককে বোঝায়, যা লজ্জাস্থান আবৃতকারী, মানানসই, সাদৃশ্যবর্জিত, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, বিলাসিতাবিবর্জিত, অহংকারমুক্ত, পরিচ্ছন্ন এবং (পুরুষের বেলায়) সেটি লাল, জাফরান, উসফুর (এক ধরনের গুল্ম, যা থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়) ও ওর্স (এক ধরনের রঙের গাছ) ইত্যাদি রঙের হতে পারবে না।

ইসলাম সম্মত পোশাকের জন্য কিছু রূপরেখা রয়েছে। এক. পোশাকটি সতর আবৃতকারী হতে হবে। সতর আবৃতকারী পোশাক বলতে বোঝায়, যে পোশাক সতরের অঙ্গগুলো পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। কাপড় এমন মসৃণ ও পাতলা হতে পারবে না, যাতে পোশাকের অভ্যন্তরের অঙ্গ দেখা যায়। কাপড় ঢিলাঢালা হওয়া উচিত। শর্টকাট, আঁটসাঁট পোশাক বিবস্ত্রতার নামান্তর।

দুই. পোশাক শালীন, সৌজন্যের পরিচায়ক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়া চাই। জুতসই, মানানসই পোশাক পরিধানই ইসলামের দাবি। হাদিস শরিফে এসেছে : ‘আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৯১)

এক সাহাবি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমার শখ হলো, আমার কাপড় উন্নতমানের হোক, আমার জুতা জোড়া অভিজাত হোক—এটা কি অহংকারপ্রসূত? রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন (সৌন্দর্যের প্রকাশ অহংকার নয়)। ওই ব্যক্তি অহংকারী, যে সত্যের সামনে ঔদ্ধত্য দেখায় আর মানুষদের তুচ্ছজ্ঞান করে, অবজ্ঞা করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৭)

তিন. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে অন্যের সাদৃশ্য বর্জন করা। তিনটি বিষয়ে সাদৃশ্য অবলম্বনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এক. কাফির-মুশরিকদের পোশাক গ্রহণ করা যাবে না। দুই. ফাসেক-পাপাচারীদের মতো পোশাক পরিধান করা যাবে না। তিন. বিপরীত লিঙ্গের মতো পোশাক ধারণ করা যাবে না। অর্থাৎ পুরুষের জন্য নারীদের মতো আর নারীদের জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা জায়েজ নয়।

চার. রেশমি কাপড় পরিধান করা যাবে না। এ বিধান পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। নারীদের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান করা বৈধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : ‘আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড় এবং স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম; কিন্তু নারীদের জন্য তা হালাল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭২০)

পাঁচ. পোশাকটি লাল রঙের হতে পারবে না। এটি মাকরুহ। তবে হালকা লাল রঙের পোশাক পরিধান করা বৈধ। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৫৮, কাশফুল বারি : কিতাবুল লেবাস : ২০৯)

ছয়. পোশাক জাফরান, উসফুর ও ওরস রঙের হতে পারবে না। উসফুর এক ধরনের হলুদ রঙের ফুল, যা পানিতে মিশ্রিত করে কাপড় রঙিন করা হয়। আরবে এর প্রচলন ছিল। ওরসও একটি ফুলের নাম, যা কাপড় রঙিন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এমন পোশাক পরিধানের নিষেধাজ্ঞাও শুধু পুরুষদের জন্য।

সাত. বিলাসিতা পরিহার করতে হবে। সীমাতিরিক্ত বিলাসিতার গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়া কাফিরদের অভ্যাস। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘বিলাসিতা পরিহার করো। আল্লাহর নেক বান্দারা বিলাসী জীবন যাপন করে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২১০৫)

আট. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে অপচয় ও অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এ বিষয়ে উদাসীনতা কাম্য নয়। কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘হে আদম সন্তান! যখন তোমরা মসজিদে আসবে, তখন নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশক বস্তু (পোশাক) নিয়ে এসো। আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

নয়. অপচয় যেমন নিন্দনীয়, কৃপণতাও অনুরূপ নিন্দনীয়, বর্জনীয়। তাই নিজের ব্যক্তিত্ব ও সামর্থ্য অনুসারে পোশাক পরিধান করা উচিত। এ বিষয়ে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহ বান্দাকে যে নিয়ামত দিয়ে সিক্ত করেছেন, তার প্রভাব-প্রতিরূপ তিনি বান্দার মধ্যে দেখতে ভালোবাসেন।’

এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে নিম্নমানের পোশাক পরিধান করে উপস্থিত হন। এটা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার কি অর্থকড়ি, সহায়-সম্পত্তি নেই?’ সাহাবি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে তো আল্লাহ অঢেল সম্পত্তি দান করেছেন।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ তোমার শরীরে দৃশ্যমান হওয়া উচিত।’ (তাবারানি কাবির : ১৯/৯৭৯)

দশ. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি ইসলাম সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন ইসলামের শিক্ষা। বিশেষত, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধানের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। এক ব্যক্তির মাথায় অগোছালো ও এলোকেশ দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই ব্যক্তি কি কোনো কিছু (তেল ইত্যাদি) খুঁজে পায় না, যা তার চুলগুলোকে জমিয়ে রাখে, গুছিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে?’

ময়লাযুক্ত কাপড় পরিহিত অন্য একজনকে দেখে তিনি বলেছেন : ‘তার কী কিছু নেই, যা দিয়ে সে নিজের কাপড়চোপড় ধুয়ে নিতে পারে?’

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: