আদর যত্ন করত, একটু হাত-পা ডলাডলি করত; তাহলে...
গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার ছোট্ট একটি দু-কামরার ঘরের সামনে বসে নিবিড় মনে সুঁই-সুতা দিয়ে পুঁতি গেঁথে চলছেন বানু আকতার। প্রথম দেখায় যে কেউ চমকে উঠবেন তাকে দেখে। কারণ হাত দিয়ে নয়, পা দিয়ে পুঁতি গাঁথছেন তিনি।
এই পুঁতি দিয়ে তিনি নানান ধরনের শো-পিস, ব্যাগসহ নানান ধরনের জিনিস তৈরি করতে পারেন। এসবই করেন তিনি পা দিয়ে। নীলফামারীর এক গ্রামের দরিদ্র পরিবারে দুটি হাত ছাড়া জন্ম হয়েছে বানু আকতারের।
এমন সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ভয়ে বানু আকতারের মুখে দুধ তুলে দেননি তার মা। পাড়া-প্রতিবেশীরা দেখতে এসে তার বাবা মাকে বলতো, ‘এমন সন্তান সংসারে না রেখে মেরে ফেলো।’
নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে এসব কথা জানান বানু।
বাবা মায়ের প্রথম সন্তান তাও পঙ্গু এবং মেয়ে, এ নিয়ে বাবা মায়ের হতাশার কমতি ছিলো না। ফলে ছোট বেলায় হাঁটা শেখানো হয়নি তাকে। নিজে নিজে হাঁটতে শিখতে বানুর ১০ বছর লেগেছে। প্রতিবেদনে বানুর জীবনী নিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা।
ওই প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়- পড়ালেখার শখ ছিলো বানুর, স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে বাবাকে আবদার করলে বাবা জবাব দেন, ‘তুই লিখবি পড়বি কী করে, তোর তো হাত নেই!’
পরে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এসে বানুকে চক-স্লেট দিয়ে তাতে বানুর নাম লিখে দিয়ে বলেন, ‘সন্ধ্যার মধ্যে যদি তোর নাম লিখা শিখতে পারিস তাহলে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবো।’
দুপুরের মধ্যে পা দিয়ে তার নাম লেখা শিখে ফেলেন বানু। পরে ওই ইউপি সদস্য বানুকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন এবং পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত তার সাইকেলে করে বানুকে স্কুলে আনা নেওয়া করে। মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর বানুর আর পড়াশোনা এগোয়নি।
যেহেতু প্রতিবন্ধী তাই পরিবার ও সমাজে বানুর প্রতি অবহেলা বিন্দুমাত্র কমেনি। আত্মভিমানী বানু নীলফামারী ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু দুটি হাত নেই বলে কোথাও চাকরি পাননি বানু।
তিনি বলেন, ‘অনেক ঘুরেছি চাকরির জন্য, হাত নাই বলে চাকরি হয়নি। হাত পাততেও লজ্জা করে, মানুষের কাছে কী করে চাইবো?’
‘সবাই আয় করে খাচ্ছে, আর আমি আয় করে খেতে পারবো না?’
পরে একটি পাট মিলে চাকরি জুটে তার। সে আয় দিয়ে জীবন নির্বাহ করতে না পারায় পুঁতি দিয়ে মালা, পুতুল শো পিস্ তৈরি শুরু করেন তিনি। এসবই তিনি করেছেন নিজের মেধা দিয়ে।
বানু জানান, ‘মানুষকে যদি দেখি একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে যাচ্ছে, আমি ওটা দেখবো কীভাবে বানানো হয়েছে।’
‘বাসায় এসে ভাবি কীভাবে সেটা বানানো যায়, পরে আমি ওটা বানিয়ে ফেলি। এটা আপনা-আপনি আমার মাথায় গেঁথে যায়। এজন্য আমি কোথাও কোন প্রশিক্ষণ নেইনি।’
বানুর পা দিয়ে বানানো পুঁতির শো-পিস্, ব্যাগ বিক্রি হয় ১,৫০০-২,০০০ টাকায়। এক একটি ব্যাগ বানাতে সময় লাগে ২-৩ দিন।
সাধারণত আশেপাশের পরিচিত লোকজন তার কাছ থেকে এসব জিনিস কিনে নেয়। আগাম অর্ডার করে গেলে ব্যাগ, শো-পিস্ বানিয়ে দেন তিনি। প্রতিটি ব্যাগে তার ৫০-৬০টাকা লাভ হয়।
বর্তমানে জীবন চালিয়ে নিতে পারলেও ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন বানু।
তিনি বলেন, ‘এমন একদিন আসবে যখন আমি হাঁটতে চলতে পারবো না; কাজ করতে পারবো না - তখন আমাকে কে খাওয়াবে?’
পরিবার থেকে দূরে থাকেন একটি দুই কামরার বাসায় আরও অনেকের সাথে মিলে ভাড়ায় থাকেন। আফসোসও করেন অবহেলার শিকার হয়েছেন বলে।
‘আগে যদি তারা আমাকে একটু আদর যত্ন করত, একটু হাত-পা ডলাডলি করত, তাহলে হয়তো আমি আরেকটু লম্বা হতাম।’
‘আসলে আমি প্রথম সন্তান তো, তাই তারা হতাশ হয়ে গিয়েছিল,’ পরিবারের আদর সোহাগ নিয়ে এভাবেই আক্ষেপ করেন বানু।
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: