গৌরব ও ঐতিহ্যের ৩৯ বছর
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ। নানা চাড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে ৩৯ বছর পেরিয়ে ৪০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ শিক্ষা বিস্তারেরকান্ডারীর ভূমিকা পালন করে আসছে।
আগামীকাল (২২ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। প্রতি বছর এই দিনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দিবসটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, বাংলাদেশের ধর্মপ্রিয় মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এটিই ছিল স্বাধীন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম ঘোষণা।
এরপর ১৯৭৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এ বারীকে সভাপতি করে সাত সদস্য বিশিষ্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়। পরিকল্পনা কমিটি ৩টি অনুষদ, ১৮টি বিভাগ, ৩টি ইনিষ্টিটিউট ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন।
এটি মূলত আর্ন্তজাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে নানা প্রতিকুলতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে বর্তমান প্রশাসন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অনুষদ, ৩৩টি বিভাগ, একটি ইনস্টিটিউট এবং ১টি ল্যাবরেটারি স্কুল রয়েছে। এর অধীনে রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী, ৪১০ জন শিক্ষক, ৪২৫ জন কর্মকর্তা, ২০৯ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৯০ জন সাধারণ কর্মচারী। এমফিল কোর্সে ২৮৫ জন এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে গবেষণা কর্মে নিযুক্ত রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬২১ জনকে এমফিল ডিগ্রি এবং ৪২১ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।
১৭৫ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ২টি প্রশাসনিক ভবন, চিকিৎসা কেন্দ্র, দেশের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ।
এ ছাড়াও রয়েছে ১টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন, সমৃদ্ধ ও আধুনিক লাইব্রেরি, উপাচার্য বাংলো, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার, ছেলেদের জন্য ৫টি এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে ৩টি আবাসিক হল। এছাড়া এখানে রয়েছে ক্যাম্পাস ভিত্তিক বৃহত্তম শহীদ মিনার, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ মুর্যাল, একুশে কর্ণার, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, মুক্তবাংলা, স্মৃতিসৌধ এবং বঙ্গবন্ধু চেয়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এন এ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ এই ৩৯ বছরের পথ চলায় নানা চড়াই উৎরাই পার করে কালের অবিচল স্বাক্ষী হয়ে স্বগৌরবে উচ্চ শিক্ষার প্রদীপ্ত মশাল নিয়ে ছুটে চলেছে দেশের প্রতিটি প্রান্তরে। ৩৯ বছরের এই পথ চলার মাঝে রয়েছে অনেক প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি।
এসব প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুভূতি নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘২২ নভেম্বর আমার প্রেমিকার জন্মদিন। যখন একটু বড় হলাম, প্রথম যার প্রেমে পড়েছিলাম তার নাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। আমার সাথে তার প্রেমের বয়স প্রায় ৫ বছর, বন্ধন চিরদিনের। আমার এই প্রেমিকার প্রাণশক্তি নেই কিন্তু প্রাণসঞ্চার করার মতো ক্ষমতা রয়েছে, মায়ায় জড়িয়ে রাখার মতো সৌন্দর্য রয়েছে। তার বুকে আমি মুখ গুজলেই বিশ্বকে হাতের মুঠোতে রাখার জ্ঞান লাভ করি। আমি মানুষ হবার দীক্ষা পায়। ভালবাসি প্রাণের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে নিতে অক্লান্ত কাজ করে চলেছেন। চর্তুর্থ সমাবর্তন সফলভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই আন্তর্জাতিকীকরণের যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন ব্যাপক পরিবর্তনের ছোঁয়া দৃশ্যমান। প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার বর্তমান প্রশাসনের অঙ্গিকার প্রতিনিয়ত বাস্তব রূপ পাচ্ছে।’
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ পারভেজ বলেন বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। শেসনজট কমেছে, কর্মঘন্টায় পরিবর্তন এসেছে, অবকাঠামোগত উন্নয়নও লক্ষনীয়।’
অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু হুরাইরা মনে করেন, ‘গবেষনা ও উদ্ভাবনীধর্মী কাজ কম হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি র্যাংকিং এ পিছিয়ে পড়েছে। গবেষণা ও উদ্ভাবনী কাজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানে বৃত্তির ব্যবস্থা করা জরুরী।’
ইংরেজি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘ডিবেটিং সোসাইটি, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, থিয়েটার, ফিল্ম সোসাইটি, তারুণ্য, লন্ঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় প্রানবন্ত থাকে।’
আইন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান মাহবুব বলেন, ‘বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট চরমে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট, লাইব্রেরি প্রয়োজনী বই সংকট ফলে শিক্ষার্থীদের তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
দক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বর্তামনে তা অনেকটা লক্ষ্যচ্যুত। ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সেটি পুরোপুরি হচ্ছে না। ইসলামী শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় করা হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারি বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৯ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি অর্জন করেছে অনেক গৌরব আর খ্যাতি। আমি মনে করি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি আর্ন্তজাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করতে বর্তমান প্রশাসন বদ্ধপরিকর। আমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: