মনোনয়ন বাতিল-গ্রহণ: প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনা হয় যেভাবে

প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৩২ পিএম

বাংলাদেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষ হচ্ছে আজ শনিবার (৮ ডিসেম্বর)। শুক্রবার ৭৮ জনের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশী, তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এর মধ্যে আছেন বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীও। বিরোধীদল বিএনপির মহাসচিব এ জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রশংসাও করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার প্রার্থিতা ফিরে পান আরও ৮০ জন।

আপিলের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে নেয় নির্বাচন কমিশন

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলছেন, আপিল শুনানির জন্য ৫ জন নির্বাচন কমিশনার একত্রে বসে আপিলগুলো শোনেন। তার ধারণায়, আপিল শুনানির সময় ছোটখাট বিষয়গুলোকে অতটা ধর্তব্যের মধ্যে সবসময় নেওয়া হয় না।

‘প্রার্থিতা বিবেচনায় প্রার্থিতার সংজ্ঞা রির্টানিং অফিসার যতটা শক্তভাবে দেখেছেন, আপিল কর্তৃপক্ষ সেগুলো এখন আরও নমনীয়ভাবে দেখছেন।’

আর সেকারণেই তিনি বলছেন এবারে অধিক সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পাচ্ছেন।

তিনি বলছেন, নির্বাচনী আইনে আছে যে কারও ছোটখাট দোষত্রুটি যদি থাকে সেগুলো বিবেচনার মধ্যে না এনে প্রার্থিতা যাচাই করতে হবে। তবে তার কথায় এসব ছোটখাট দোষত্রুটিগুলো আসলে নির্বাচনী আইনে নির্ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত করা নেই।

‘এর কোন ব্যাখ্যা নির্বাচনী আইনে দেয়া নেই। নিজের বিবেচনা-বুদ্ধি, নিজের প্রুডেন্স ব্যবহার করে এসব ছোটখাট বিষয় বিবেচনা করা হয়। তবে মূল বিষয়গুলো ঠিক থাকে।’

মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মনে করেন, এসব ছোটখাট বিষয় কীভাবে বিবেচনায় নেওয়া হবে সেটা আইনে সংজ্ঞায়িত করে দিলে অ্যাপেলেট অথরিটি অর্থাৎ কমিশনাররা যখন সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করবেন তাদের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যেতে পারে।

‘আমি মনে করি তাদের হাত একেবারে টাইট না করে দিয়ে এভাবে তাদের নিজস্ব বিচারবুদ্ধি প্রয়োগের বিধান রাখাটাই সঠিক।’

তিনি বলেন, এতে করে তারা আপিল শুনানির সময় নিজেদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী প্রার্থীর যোগ্যতা নতুন করে মূল্যায়ন করার সুযোগ পাবেন, যেটা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রটা আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।

প্রশ্ন উঠতে পারে যে আপিলের ক্ষেত্রে কমিশনারদের ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগের সুযোগ পক্ষপাতের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কীনা। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারিত থাকাটাই যুক্তিযুক্ত কীনা।

মি: শাহনেওয়াজ বলছেন, নির্বাচনী আইনে প্রার্থীর যোগ্যতা বিচারের মানদণ্ড পরিষ্কারভাবেই নির্দিষ্ট করা রয়েছে। শুধু আপিলের ক্ষেত্রে ছোটখাট বিষয়গুলো বিবেচনা করার ব্যাপারে কমিশনারদের নিজেদের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগের একটা সুযোগ দেওয়া আছে।

তিনি বলছেন আইনের নিয়মই হল মানুষ নিচের তলার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে তবেই আপিল প্রক্রিয়ার শরণাপন্ন হয়, সে সুযোগটা রাখা অবশ্যই প্রয়োজন।

‘এতে মানুষের আস্থাও বাড়ে যে আমি রির্টানিং অফিসারের কাছে যেটা পেলাম না, কমিশনের কাছে গিয়ে সেটা পেলাম। যারা নির্বাচনের ব্যাপারে সর্বেসর্বা তাদের কাছে গিয়ে আমি ন্যায় বিচার পেলাম।’

তিনি ব্যাখ্যা করছেন যে কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলোর ক্ষেত্রে আপিলেও কিছু বিবেচনায় নেওয়া সম্ভব নয়। যেমন যারা ঋণখেলাপী তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার কোন সুযোগ নেই। প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা।

ওই প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়- যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে আইন রয়েছে যে তাদের নির্বাচনী এলাকার ১% ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হবে।

‘সেখান থেকে দ্বৈব-চয়নের মাধ্যমে ১০জনকে নেওয়া হয় এবং যাচাই করে দেখা হয় তারা আদৌ সই করেছে কীনা। সেখানে যদি কেউ বলে আমি সই করিনি, তাহলে তো সেটা মিথ্যাচার বলে বিবেচিত হয়। এসব ক্ষেত্রে কিছু করার সুযোগ নেই।’

তবে কিছু কিছু ছোটখাট বিষয় আপিলের এখতিয়ারে গ্রাহ্য হয়, যেমন নামের বানানে অনিচ্ছাকৃত ভুলভ্রান্তি, বা ব্যাংক থেকে কাউকে সবকিছু ঠিক আছে বলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে - কিন্তু মনোনয়ন জমা দেবার সময় সে চিঠি হাতে এসে পৌছায় নি - তাই রির্টানিং অফিসার তাকে প্রার্থিতার অযোগ্য ঘোষণা করেছেন।

‘এ ধরনের ছোটখাট বিষয় ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। মূল ধর্তব্য যেটা, সেটা হল প্রার্থী সৎভাবে কাজ করছে কীনা,’ বলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ।


বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: