আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে ভোটের তিন দিন মোবাইল ব্যাংকিং ও ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে ফোরজি থেকে টুজিতে নামানো প্রস্তাব এসেছে।
ইসি সূত্র জানায়, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটের মাঠে আগামী ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বৈঠকে করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ছাড়াও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ভোট কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা থাকবে। র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। তারা ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষে ঢুকতে পারবেন না। অবশ্য রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চাইলে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা প্রয়োজনে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। সেনাবাহিনী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। প্রতি জেলায় ছোট আকারে সেনাবাহিনীর একটি টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়।
নির্বাচনের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ও বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য অঞ্চল, দীপাঞ্চল ও হাওর) পৃথক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এছাড়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী সহিংসতা প্রবণ এলাকাগুলোর জন্য থাকবে আলাদা সতর্কমূলক ব্যবস্থা।
মেট্রোপলিটন এলাকার বাহিরে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৪ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ ১ জন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের ১/২ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্রে মোট ১৫ জন ও অস্ত্রসহ ৩/৪ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবেন ন্যুনতম ২ জন।
অন্যদিকে পার্বত্য এলাকা, হাওড়, দ্বীপঞ্চলকে বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৫ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ ২ জন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের ১/২ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্রে মোট ১৬ জন ও অস্ত্রসহ ৪/৫ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবেন ন্যুনতম ৩ জন।
এদিকে নির্বাচনকালীন সময়ে গুজব মোকাবিলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় নির্বাচনের আগে ও পরে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে আনা, মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ওপর বিশেষ নজর রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া সভায় নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়েও কড়াকড়ি আরোপের ওপর পুলিশের পক্ষ থেকে করণীয় নির্ধারণে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভোট চলাকালীন সময় কেন্দ্রের গোপন কক্ষে সাংবাদিকরা ছবি তোলা, ভিডিও করা ও সরাসরি সম্প্রচার করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এসব বিষয় চূড়ান্ত করতে শিগগিরই কমিশন থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হতে পারে।
নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে ভোটের তিন দিন আগে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়। এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয় নির্বাচনকালীন সময়ে বিদেশ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আসতে পারে। এসব টাকা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইসিকে অনুরোধ করেছেন।
বৈধ অস্ত্রধারী, শুধুমাত্র প্রার্থীরা নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের কাছে রাখতে পারবে তবে ব্যবহার করতে পারবে না। ভোটের এক সপ্তাহ আগে বৈধ সব অস্ত্র (প্রার্থী ব্যতীত) জমা দিতে হবে। সেনাবাহিনীর মোতায়েনের বিষয়ে সভায় দুই ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে। ইসির পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ছিল। সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি পক্ষের দাবি, নয় দিনের চেয়ে সেনা মোতায়েন বাড়ানো হোক। আরেক পক্ষের দাবি, সেনাবাহিনী মোতায়েনের সময় কমিয়ে বরং বিজিবিকে আরও আগে নামানো হোক।
রোহিঙ্গা বিষয়েও আলোচনা হয় সভায়। রোহিঙ্গারা নির্বাচনে প্রভাবিত হতে পারে। সেজন্য বিশেষ নজরদারি বাড়াতে হবে। কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে ২৪ ঘণ্টা ফোন আসছে। বেশিরভাগই বলেন, স্যার ভোট দিয়ে বাসায় ফিরতে পারবো কিনা? ভোটারদের এই আশঙ্কা রাখা যাবে না। এটা দূর করতে হবে আপনাদের।’
সভায় কমিশনার কবিতা খানম বলেন, বুধবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা-১ আসনের প্রার্থীকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি নাকি কিছু জানেন না। আপনার প্রার্থীকে তুলে নিয়ে গেলো আপনি কিছুই জানেন না। তাহলে এতো সমন্বয়হীনতা নিয়ে আপনারা কাজ করছেন কিভাবে?’
কবিতা খানম আরও বলেন, ‘আগামী ২০ ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সময়টাতে আপনাদের অধিক ধৈর্য ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফৌজদারি অপরাধ আর আচরণবিধি এক নয়। আপনাদের ছোট্ট একটা ভুলের কারণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।’
বিডি২৪লাইভ/আরএইচ/এআইআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: