‘ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’

প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০৭:৩১ পিএম

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন: গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭১ বছরে পদার্পণ করেছে ভালোবাসার সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭১ তম জন্মদিন। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ এবং ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে সবটুকু জুড়েই রয়েছে কর্মীদের ত্যাগ, সংগ্রাম এবং দেশের প্রতি বিশ্বস্ততার ইতিহাস। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের প্রত্যেকটি ইতিহাসে রয়েছে ছাত্রলীগের অবদান। আজকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্মদিনে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এবং সমগ্র বাঙালিকে জানাই শুভেচ্ছা।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা এবং বাঙালির মুক্তির প্রয়োজনেই জাতির পিতার হাতে জন্ম নেয় শিক্ষা,শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী এই সংগঠন। জাতির পিতার আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রতি অবিচল থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি এবং সংগ্রামে দেশমাতৃকার জন্য অনন্য ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন আন্দোলন,১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন,১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১১ দফা আন্দোলন,বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আন্দোলন জোরালো করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল প্রণিধানযোগ্য। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।১৯৬২ সালে তৎকালীন আইয়ুব খান সরকার কর্তৃক গঠিত শরিফ কমিশন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের অনুকূলে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। সেই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণআন্দোলন ও গণজাগরণ তৈরি করে। সেই বাষট্টির রক্তঝরা দিনগুলোতে রক্ত ঝরেছে অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর। ১৯৬৬ সালে বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সনদ ছয় দফা বাস্তবায়নে শেখ মুজিবুর রহমান আস্থা রেখেছিলেন তরুণ ছাত্রনেতাদের ওপর। তিনি সে সময়কার ছাত্রনেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, জেলায় জেলায় অবস্থান সুদৃঢ় করে ছয় দফার সপক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা সারা বাংলার মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ৬ দফা দাবির গুরুত্ব তুলে ধরেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল রাজপথের প্রমিথিউস। ছয় দফা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিভেদ ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সেদিন আওয়ামী লীগের বৈঠকের বাইরে কঠোর পাহারা বসাতে হয়েছিল ছাত্রলীগের কর্মীদেরই। ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুস জয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সক্রিয় অংশগ্রহনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গৌরব,ঐতিহ্য,সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ পথচলায় ছাত্রলীগ হারিয়েছে তার সহস্র্রাধিক নেতাকর্মীকে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন,‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। ২৩ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রাণের সংগঠনের ১৭ হাজার বীর যোদ্ধা তাদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা,এঁকেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক সার্বভৌম মানচিত্র। সেসব বীর যোদ্ধাই আমাদের অনুপ্রেরণা,আমাদের শক্তি,আমাদের সাহস।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর গভীর সংকটে উপনীত হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হায়েনাদের এই দেশীয় দোসরদের কারণে বারবার গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে গিয়েছে আমাদের প্রিয় দেশমাতৃকা। সেই সময়গুলোতে সমগ্র বাংলাদেশে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী জীবন বাজি রেখে রাজপথে থেকেছে। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন আমাদের অভিভাবক জননেত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রিয় নেত্রীর পাশে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের প্রধানরা আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশকে আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়েছে। জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন ‘আমি গর্ব করে বলতে পারি বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখেছি। এখন জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে আবার গর্ব করতে পারছি, আমি শেখ হাসিনার শাসনামল দেখে গেলাম।’ আর সদ্য প্রয়াত বরেণ্য বুদ্ধিজীবী মুস্তাফা নূরউল ইসলাম লিখেছেন,‘শেখ হাসিনা একাধারে শান্তির দূত,উন্নয়নের উজ্জ্বল প্রতীক,নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত, বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের একজন,দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক নির্মোহ রাজনীতিক।’ শুধু স্বদেশের বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণাবলি বিষয়ে লিখেছেন তা কিন্তু নয়। বিদেশের পন্ডিতদেরও দৃষ্টি এড়ায়নি তার নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. কৌশিক বসু বলেছেন, ‘মৌলবাদী শক্তিদের মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়ন অভিযাত্রাকে টেকসই করার সক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রয়েছে। যে কোনো দেশ যখন দ্রুত উন্নতির পথে হাঁটে তখন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বৈষম্য, সন্ত্রাস, ধর্মীয় উগ্রবাদিতার মতো ঝুঁকি দেখা দিতেই পারে। বাংলাদেশও এসব ঝুঁকির বাইরে নয়। সে কারণে এসব ঝুঁকির বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। আর এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার যে গভীর অঙ্গীকার রয়েছে তাও অস্বীকার করার উপায় নেই।’

বাংলাদেশের আজ এই যে উন্নয়ন সেই উন্নয়নের চাবিকাঠির নাম ‘শেখ হাসিনা’। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে টানা তৃতীয় এবং মোট চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। জননেত্রীর এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের এই যাত্রা আরও সুদূরপ্রসারী হবে। দেশরত্নের উন্নয়নের পথচলায় সারথী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।  

দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে সর্বোচ্চ অবদান রেখে যাচ্ছে। ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নে দক্ষ ছাত্রসমাজ তৈরিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করছে ও করবে। এছাড়া ছাত্রলীগ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ শিক্ষাসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তাকল্পে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলছেন, ‘শুধু ভালো কর্মী হলেই চলবে না, ভালো ছাত্রও হতে হবে।’ দেশরত্নের এই উপদেশকে মেনে পড়াশোনা এবং রাজনৈতিক চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্মদিনে সকল নেতাকর্মীদের বলতে চাই, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মী ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে ধাবিত হয়ে এই দেশ ও সমাজকে তৈরি করবে এবং দেশরত্নের হাতকে শক্তিশালী করবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে,সব অশুভ শক্তিকে পেছনে ফেলে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে,দেশগড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম এবং সোনালি অতীতের ধারক ও বাহক বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগের আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল ও স্বার্থক হোক। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক: 
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন
সভাপতি,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: