একটি কফিনের পাশে কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:১২ পিএম

এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! ঈদে যে শোলাকিয়া ময়দান মুখরিত হয় লাখো মুসল্লির পদভারে, সেই শোলাকিয়া ময়দান এবার মহাসমুদ্রের রূপ নিলো শোকাহত মানুষের ভীড়ে। চোখে অশ্রু আর নিরব বেদনা নিয়ে লাখো মানুষ অংশ নিয়ে ছিলেন রাজনীতির মহাকবি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামাজে জানাজায়। 

রোববার (৬ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া একটায় নামাজে জানাজা শুরু হলেও এর অনেক আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিলো ঐতিহাসিক এই ঈদগাহ ময়দান।

সারা বাংলার মানুষকে হয়তো কিশোরগঞ্জবাসী দেখাতে চেয়েছিলেন, সৈয়দ আশরাফের প্রতি ভালোবাসার নমুনা। প্রিয় নেতার জানাজার নামাজ তাই হয়ে যায় মহাসমুদ্র। ভালোবাসার এমন মহাসমুদ্র এর আগে কখনো দেখেনি কিশোরগঞ্জ। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য লাখো জনতার এমন ভিড় হয়তো বা কখনো দেখবেও না কিশোরগঞ্জ।

রোববার (৬ জানুয়ারি) সকাল থেকেই দলমত নির্বিশেষে শোকাহত মানুষ আসতে শুরু করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। সৈয়দ আশরাফকে শেষবারের মতো একপলক দেখার জন্য মানুষ দাঁড়িয়েছিল রাস্তার দু’ধারে। হাতে ফুল আর চোখে অশ্রু নিয়ে সেকি ব্যাকুল প্রতীক্ষা প্রিয় নেতার জন্য!

আগেই ধারণা করা হয়েছিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল হবে। যে কারণে আগে নির্ধারিত পুরাতন স্টেডিয়ামের পরিবর্তে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজার আয়োজন করা হয়। ধারণা সত্যিতে প্রমাণ হয় লাখো মানুষের ঢলে। মহাসমুদ্রে পরিণত হওয়ায় মাঠের আশে-পাশের রাস্তায়, বাড়ির উঠানে পর্যন্ত জায়গা করে নিয়ে মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছিলো।

জানাজা শেষে মানুষ ছুটেন তাঁর কফিনের দিকে। নিথর দেহে কফিনবন্দী শুদ্ধ রাজনীতির মানুষটির স্পর্শ নিতে, কফিনটাকে একটু ছুঁয়ে দিতে, তাতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিতে কি প্রাণান্ত চেষ্টাই না তারা করেছেন। কেউ পেরেছেন, কেউবা পারেননি। শেষ বিদায়ে এমন ভালোবাসা ক’জন রাজনীতিকের ভাগ্যেই বা জুটেছে!

কিশোরগঞ্জবাসী কাঁদছে নিরবে, তাঁরা স্তব্ধ প্রিয় নেতার অকাল প্রয়াণে। কিশোরগঞ্জের মানুষের কাছে তিনি সততা ও স্বচ্ছতার প্রতীক। তাদের মতে একজন সৎ আর্দশবান নেতা নির্দিষ্ট কোনো দলের হয় না, তিনি সকলের শ্রদ্ধেয়।

কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষ প্রিয় এই নেতার অমর বাণী ‘দুর্নীতি করলে রাজনীতি ছাড়ো’ এই কথাটিকে হৃদয়ে ধারণ করে লালন করছেন। তাঁরা এ কথাতে বিশ্বাসী। তাঁরা বিশ্বাস করেন এমন ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সৈয়দ আশরাফের মতো মানুষ হওয়া লাগে। জেলার নানা প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ ছুটে আসেন এই সৎ মানুষটার জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সকাল থেকেই জড়ো হওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন। সাত একর আয়তনের বিশাল শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বেলা ১২টা বাজার আগেই। সৈয়দ আশরাফ এক অনুভূতির নাম, এই মহাসমুদ্রের মাধ্যমে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ তথা সারা বাংলার মানুষ।  সততার রাজনীতির স্থপতি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন কিশোরগঞ্জবাসীর হৃদয়ে।

বাবার প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা দেখে শোলাকিয়া মাঠের মিম্বরের দোতলায় দাঁড়িয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছিলেন একমাত্র সন্তান সৈয়দা রীমা ইসলাম। দেখলেন, বাবার প্রতি কিশোরগঞ্জের মানুষের ভালোবাসা। কিশোরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ যেন ভাগাভাগি করে নিতে চাইছেন তাঁর পাথরচাপা কষ্টাটা।

জানাজায় অংশ নেওয়া কিশোরগঞ্জ সদরের চৌদ্দশত ইউনিয়নের মীর শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এত বড় জানাজা আমি আর কখনও দেখিনি। দলমত নির্বিশেষে একজন মানুষ সকলের প্রিয় হতে পারেন, তাও কখনও দেখিনি।
অশীতিপর বৃদ্ধ খুর্শিদ মিয়া শহরতলীর হাজরাদি এলাকা থেকে লাঠিতে ভর করে এসেছিলেন জানাজায়। তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ একজন বালা মানুষ। বালা মানুষ বলেই জানাজায় আইছি। তার মতো বালা মানুষ আর কিশোরগঞ্জে অইতো না।’

শহরের নগুয়া এলাকার বাসিন্দা আহমাদ ফরিদ বলেন, ভালো মানুষরা বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ে। আমাদের প্রিয় আশরাফ ভাই এমনি করে বেঁচে থাকবেন হাজার বছর ধরে।

এমনকি রংপুর থেকে আসা ৫০ বছরের আমীর হোসেন বলেন, এই মানুষটি অনেক ভলো ছিলো। আমার প্রিয় এই মানুষটির জানাযা পড়ার জন্য একদিন আগেই রংপুর থেকে কিশোরগঞ্জে ছুটে এসেছি। এই মানুষটিকে যে কিশোরগঞ্জের মানুষ এত ভালোবাসে তা আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আজ তা এই জানাজায় প্রমাণ হলো। 
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের পহেলা জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী সৈয়দা শিলা ইসলাম ২০১৭ সালের ২৩শে অক্টোবর লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর থেকেই অন্তরালে চলে যান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত বছরের ৩রা জুলাই তাঁকে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ছয় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩রা জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
একটি কফিনের পাশে কিশোরগঞ্জ

মো: এস. হোসেন আকাশ, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! ঈদে যে শোলাকিয়া ময়দান মুখরিত হয় লাখো মুসল্লির পদভারে, সেই শোলাকিয়া ময়দান এবার মহাসমুদ্রের রূপ নিলো শোকাহত মানুষের ভীড়ে। চোখে অশ্রু আর নিরব বেদনা নিয়ে লাখো মানুষ অংশ নিয়েছিলন রাজনীতির মহাকবি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামাজে জানাজায়। রোববার (৬ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া একটায় নামাজে জানাজা শুরু হলেও এর অনেক আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিলো ঐতিহাসিক এই ঈদগাহ ময়দান।

সারা বাংলার মানুষকে হয়তো কিশোরগঞ্জবাসী দেখাতে চেয়েছিলেন, সৈয়দ আশরাফের প্রতি ভালোবাসার নমুনা। প্রিয় নেতার জানাজার নামাজ তাই হয়ে যায় মহাসমুদ্র। ভালোবাসার এমন মহাসমুদ্র এর আগে কখনো দেখেনি কিশোরগঞ্জ। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য লাখো জনতার এমন ভিড় হয়তো বা কখনো দেখবেও না কিশোরগঞ্জ।

রোববার (৬ জানুয়ারি) সকাল থেকেই দলমত নির্বিশেষে শোকাহত মানুষ আসতে শুরু করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। সৈয়দ আশরাফকে শেষবারের মতো একপলক দেখার জন্য মানুষ দাঁড়িয়েছিল রাস্তার দু’ধারে। হাতে ফুল আর চোখে অশ্রু নিয়ে সেকি ব্যাকুল প্রতীক্ষা প্রিয় নেতার জন্য!

আগেই ধারণা করা হয়েছিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল হবে। যে কারণে আগে নির্ধারিত পুরাতন স্টেডিয়ামের পরিবর্তে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজার আয়োজন করা হয়। ধারণা সত্যিতে প্রমাণ হয় লাখো মানুষের ঢলে। মহাসমুদ্রে পরিণত হওয়ায় মাঠের আশে-পাশের রাস্তায়, বাড়ির উঠানে পর্যন্ত জায়গা করে নিয়ে মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছিলো।

জানাজা শেষে মানুষ ছুটেন তাঁর কফিনের দিকে। নিথর দেহে কফিনবন্দী শুদ্ধ রাজনীতির মানুষটির স্পর্শ নিতে, কফিনটাকে একটু ছুঁয়ে দিতে, তাতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিতে কি প্রাণান্ত চেষ্টাই না তারা করেছেন। কেউ পেরেছেন, কেউবা পারেননি। শেষ বিদায়ে এমন ভালোবাসা ক’জন রাজনীতিকের ভাগ্যেই বা জুটেছে!

কিশোরগঞ্জবাসী কাঁদছে নিরবে, তাঁরা স্তব্ধ প্রিয় নেতার অকাল প্রয়াণে। কিশোরগঞ্জের মানুষের কাছে তিনি সততা ও স্বচ্ছতার প্রতীক। তাদের মতে একজন সৎ আর্দশবান নেতা নির্দিষ্ট কোনো দলের হয় না, তিনি সকলের শ্রদ্ধেয়।
কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষ প্রিয় এই নেতার অমর বাণী ‘দুর্নীতি করলে রাজনীতি ছাড়ো’ এই কথাটিকে হৃদয়ে ধারণ করে লালন করছেন। তাঁরা এ কথাতে বিশ্বাসী। তাঁরা বিশ্বাস করেন এমন ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সৈয়দ আশরাফের মতো মানুষ হওয়া লাগে। জেলার নানা প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ ছুটে আসেন এই সৎ মানুষটার জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সকাল থেকেই জড়ো হওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন। সাত একর আয়তনের বিশাল শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বেলা ১২টা বাজার আগেই। সৈয়দ আশরাফ এক অনুভূতির নাম, এই মহাসমুদ্রের মাধ্যমে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ তথা সারা বাংলার মানুষ।  সততার রাজনীতির স্থপতি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন কিশোরগঞ্জবাসীর হৃদয়ে।

বাবার প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা দেখে শোলাকিয়া মাঠের মিম্বরের দোতলায় দাঁড়িয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছিলেন একমাত্র সন্তান সৈয়দা রীমা ইসলাম। দেখলেন, বাবার প্রতি কিশোরগঞ্জের মানুষের ভালোবাসা। কিশোরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ যেন ভাগাভাগি করে নিতে চাইছেন তাঁর পাথরচাপা কষ্টাটা।

জানাজায় অংশ নেওয়া কিশোরগঞ্জ সদরের চৌদ্দশত ইউনিয়নের মীর শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এত বড় জানাজা আমি আর কখনও দেখিনি। দলমত নির্বিশেষে একজন মানুষ সকলের প্রিয় হতে পারেন, তাও কখনও দেখিনি।
অশীতিপর বৃদ্ধ খুর্শিদ মিয়া শহরতলীর হাজরাদি এলাকা থেকে লাঠিতে ভর করে এসেছিলেন জানাজায়। তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ একজন বালা মানুষ। বালা মানুষ বলেই জানাজায় আইছি। তার মতো বালা মানুষ আর কিশোরগঞ্জে অইতো না।’

শহরের নগুয়া এলাকার বাসিন্দা আহমাদ ফরিদ বলেন, ভালো মানুষরা বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ে। আমাদের প্রিয় আশরাফ ভাই এমনি করে বেঁচে থাকবেন হাজার বছর ধরে।

এমনকি রংপুর থেকে আসা ৫০ বছরের আমীর হোসেন বলেন, এই মানুষটি অনেক ভলো ছিলো। আমার প্রিয় এই মানুষটির জানাযা পড়ার জন্য একদিন আগেই রংপুর থেকে কিশোরগঞ্জে ছুটে এসেছি। এই মানুষটিকে যে কিশোরগঞ্জের মানুষ এত ভালোবাসে তা আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আজ তা এই জানাজায় প্রমাণ হলো। 
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের পহেলা জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী সৈয়দা শিলা ইসলাম ২০১৭ সালের ২৩শে অক্টোবর লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর থেকেই অন্তরালে চলে যান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত বছরের ৩রা জুলাই তাঁকে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ছয় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩রা জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: