শীতে জবুথবু মানুষ

প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৫২ এএম

পঞ্চগড়ে সপ্তাহজুড়ে টানা শৈত্যপ্রবাহে জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন সকালের পর থেকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। কনকনে শীতে দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালক আর খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা জবুথবু। প্রায় দুই লাখ গরিব শীতার্তের বিপরীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

হিমালয় কন্যাখ্যাত সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের কোলঘেষে জেলার অবস্থানের কারণে অন্য এলাকার তুলনায় এখানে বরাবরই শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয়।

চলতি শীত মৌসুমের ৩১ ডিসেম্বর (সোমবার) থেকে জেলাজুড়ে শুরু হয় তীব্র শৈতপ্রবাহ। সপ্তাহ জুড়ে শৈতপ্রবাহে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করে। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। শনিবার সকালে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।

শুক্রবার এবং শনিবারও দিনের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। দিনে ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস।

তেতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল ৯টায় জেলায় ৮ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে শুক্রবার দিনে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

এদিকে, টানা শৈতপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমুজুর, রিকশা ও ভ্যানচালক আর খেটে খাওয়া মানুষ। কৃষি শ্রমিকরাও শীতের কারণে ক্ষেতে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। বিকেলের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় শীতকাতর মানুষদের খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায়। তীব্র শীতের কারণে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, নিউমনিয়া ও এজমা রোগীর সংখ্যা বেশি।

জেলা শহরের রামেরডাঙ্গা মহল্লার রিকশাচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডার কারণে কেউ রিকশায় উঠতে চায় না। আগে সারাদিন রিকশা চালিয়ে তিন থেকে ৪০০ টাকা আয় হতো। এখন সারাদিন ১০০ টাকাও ভাড়া মারতে পারি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছি।

পৌরসভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড় পৌরসভার ১৭টি বস্তির প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুস্থ। শীতার্ত এসব মানুষের জন্য দুই দফায় মাত্র সাড়ে ৬০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শীতবস্ত্রের জন্য দুস্থরা প্রতিদিন পৌরসভা অফিস এবং বাসায় ভিড় করছেন। এ শীতের কারণে নিম্নআয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এ সময়ে তাদের আর্থিকভাবেও সহযোগিতা প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এলাকার দুস্থদের শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষায় শনিবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও দুই হাজার ২০০ পিস কম্বল এবং পাঁচ হাজার পিস শীতের সোয়েটার বিতরণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ জন্য সহকারী কমিশনারসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১০টি বিতরণকারী দল গঠন করা হয়েছে। তারা শনিবার সন্ধ্যার পর জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন। এর আগে জেলার ৪৩ ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: