শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচে ঢাকার জয়

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:০৯ পিএম

১৮৩ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। রাইলি রুশো ও মোহাম্মদ মিথুনের ব্যাটে সেই চ্যালেঞ্জ দারুণভাবে টপকে যাচ্ছিল রংপুর রাইডার্স। পথিমধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন আলিস আল ইসলাম। দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে রাইডার্সদের হার মানতে বাধ্য করলেন তিনি। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে সাকিব ব্রিগেডের বিপক্ষে ২ রানে হেরে গেল মাশরাফি বাহিনী।

শুরুতে টসে হেরে ব্যাটিং পেয়ে বেজায় খুশি হয়েছিলেন ঢাকা ডায়নামাইটস অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কারণ হোম অব ক্রিকেটে অনেক দল বড় রানের দেখা না পেলেও ঢাকার ক্রিকেটারদের ব্যাটে বড় রান আসছে নিয়মিতই। ইনিংসের শেষেও সাকিবের হাসি লেগে রইল তার মুখে।

আগের দুই ম্যাচে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ঢাকা ডায়নামাইটসের ক্যারিবীয় দানব কাইরন পোলার্ড। কিন্তু রংপুরের বিপক্ষে তার ব্যাটে যেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটলো। শুরুটা কিছুটা দেখেশুনে করলেও খোলস ছেড়ে বের হতে বেশি সময় নেননি এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান।

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে ঢাকা ডায়নামাইটসকে চেপে ধরে রংপুর রাইডার্স। দলীয় ৯ রানে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হজরতুল্লাহ জাজাইকে (১) বোল্ড করে দেন সোহাগ গাজী। ১০ রানের ব্যবধানে দুই বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলা অপর ওপেনার সুনিল নারাইনকে রবি বোপারার ক্যাচে পরিণত করেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ১৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ঢাকা। ৮ বলে ২ চচর ১ ছক্কায় ১৮ রানের ঝড় তুলেছিলেন রনি তালুকদার। তাকে হাওয়েলের তালুবন্দি করেন সোহাগ গাজী।

মিজানুর রহমানকে (১৫) হাওয়েল এলবিডাব্লিউ করে দেন। এরপরেই অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি গড়ে বিধ্বংসী ব্যাটিং শুরু করেন কায়রন পোলার্ড। ২০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূরণ করেন এই ক্যারিবীয়। ২৬ বলে ৫ বাউন্ডারি এবং ৪ ওভার বাউন্ডারিতে ৬২ রান করা পোলার্ডকে থামান হাওয়েল। ৩৭ বলে ৩৬ করা সাকিব শিকার হন ফরহাদ রেজার।

শফিউলের শিকার হওয়ার আগে ১৩ বলের ২৩ রানের ঝড় তোলেন আরেক ক্যারিবিয়ান আন্দ্রে রাসেল। পরের দুই ব্যাটসম্যান শুভাগত হোম (৩) এবং নুরুল হাসানও (৪) শিকার হন শফিউলের। এই পেসার তুলে নেন ৩ উইকেট। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ঢাকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮৩ রান।

জবাবে মন্থর শুরু করে রংপুর। দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করেন ক্রিস গেইল। এতেই বাধে যত বিপত্তি। শুভাগত হোমের দ্বিতীয় বলেই খেই হারান তিনি। বল পায়ে লাগলে আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ক্যারিবীয় দানব।

লাইফ পেয়েই চওড়া হন গেইল। পরের বলই তুলে মারেন। বল উড়ে চলে যাচ্ছিল লং অনের ওপর দিয়ে। একেবারে সীমানার ওপরে তা তালুবন্দির চেষ্টা করেন আন্দ্রে রাসেল। শেষ পর্যন্ত না পেরে অসামান্য দক্ষতায় বল থ্রো করেন বাউন্ডারির মধ্যে। ক্ষীপ্রগতিতে দৌড়ে এসে সেটি লুফে নেন কাইরন পোলার্ড। পরে বারবার রিপ্লে দেখা হয় ক্যাচটি। শেষ পর্যন্ত প্যাভিলিয়নে ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিটার। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই সাজঘরে ফেরেন মেহেদী মারুফ।

শুরুতেই গেইল আর মারুফকে হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর। মোহাম্মদ মিথুনকে নিয়ে ধীরে ধীরে সেই চাপ কাটিয়ে ওঠেন রাইলি রুশো। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। উভয়ই ছোটাতে থাকেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। তাদের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে মাশরাফি বাহিনী।

মিথুন ধীরে-লয়ে চললেও ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে সাকিব-পোলার্ডদের কচুকাটা করেন রুশো। রীতিমতো তাদের ওপর ছড়ি ঘোরান তিনি। তবে হঠাৎই ছন্দ হারান এ আফ্রিকান। আলিস আল ইসলামের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে মাত্র ৪৪ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন ইনফর্ম এ ব্যাটার। অল্পক্ষণ পর সাকিবের শিকার হয়ে ফেরেন রবি বোপারা।

টপঅর্ডাররা সবাই ফিরলেও একপ্রান্তে থাকেন মিথুন। তখন পর্যন্ত জয়ের পথে ছিল রংপুর। এ পরিস্থিতিতে আলিসের শিকার হয়ে তিনি ফিরলে জয়ের আশা ফিকে হয়ে যায়। ফেরার আগে ৩৫ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৪৯ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন এ মিডলঅর্ডার।

বাকি সময়ে চলেছে আলিস শো। পরের দুই বলে মাশরাফি আর ফরহাদকে তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ প্রতিপক্ষের লাগাম টেনে ধরেন আলিস। পরক্ষণেই গাজী ও হাওয়েলকে ফিরিয়ে মাশরাফিদের গলা চেপে ধরেন নারাইন। শেষ পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ২ রানের দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় ঢাকা।

গতবারের চ্যাম্পিয়ন রংপুর এর আগে তিন ম্যাচ খেলে দুটিতে জয় ও একটিতে হেরেছে।

অপরদিকে টানা তিন ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: