হলুদ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে পাইকগাছার কৃষকরা 

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫২ পিএম

পাইকগাছা থেকে, তৃপ্তি সেন: উৎপাদন এবং বাজার মূল্য কম থাকায় হলুদ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে খুলনার পাইকগাছার চাষীরা। এ চাষ ছেড়ে কৃষকরা ঝুঁকছেন অন্যদিকে। তবে ছোট ছোট আকারে জমি চাষ করলে লাভ হচ্ছে। বেশী জমিতে শুধু মাত্র হলুদ চাষ করলে লাভ কম হওয়ায় হলুদের ক্ষেতে মরিচ, বেগুন, আলু, ওলকচু, কচুরমুখিসহ মিশ্র চাষ করলে কিছুটা লাভ হচ্ছে। তাই সেই দিকেই ঝুঁকছে কৃষকরা। সে ক্ষেত্রে হলুদের উৎপাদন কম হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ কম হয়েছে।      

নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের মধ্যে হলুদ একটি অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য। হলুদ রান্নার কাজে যেমন ব্যবহার হয়, তেমনি ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধক, রক্ত পরিস্কারক, হজমকারক, কৃমিনাশক এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় এ দ্রব্যটির উৎপাদন ভাল না হওয়াই এবং বাজার মূল্য কম থাকায চাষীরা দিন দিন হলুদ চাষ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। 

পাইকগাছা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা উপজেলায় এ বছর ৯০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। গতবছর ১১০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়। উপজেলার গদাইপুর ইউপির চরমলই গ্রামের কৃষক সবুর গোলদার জানিয়েছেন, এ বছর ২ বিঘা জমিতে হলুদের চাষ করেছেন তিনি। হলুদের উৎপাদন অনেক কম। এরপর আবার অনেক হলুদ পঁচে নষ্ঠ হয়ে গেছে। ২ বিঘা জমিতে আনুমানিক ৮০ মণ হলুদ হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা কিন্তু হলুদের বীজ, জমির খাজনা এবং সারসহ আনুসঙ্গিক বিভিন্ন কাজে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। 

লোকসান প্রসঙ্গে সবুর বলেন, হলুদ চাষের পাশাপাশি একই জমিতে বেগুন, মরিচ, ওলকচু, আলু, কচুরমুখিসহ মিশ্র চাষ করার ফলে কিছু লাভ হতে পারে। শুধুমাত্র হলুদ চাষ করলে এখন আর লাভ হয় না। হলুদ চাষের জন্য এখন ভাল মানের বীজ পাওয়া যায় না। এছাড়া শ্রমিক মূল্য, সার, কীটনাশকের মূল্য অনেক বেশী। তাছাড়া জমির পাশে এখন আর আগেরমত নালা কিংবা ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকে না। সব বন্ধ হয়ে গেছে। পানি সরবরাহ না থাকার ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং হলুদ পঁচে যায়। 
অপর দিকে একই এলাকার শহীদুল মোড়ল জানিয়েছেন, ছোট পরিসরে হলুদ চাষ করলে লাভ হয়। তার ৪ কাঠা জমিতে প্রায় ১২ মণ হলুদ হবে। 

এছাড়া হিতামপুর গ্রামের নির্মল চন্দ্র অধিকারী জানিয়েছেন, তিনি ৯ কাঠা জমিতে হলুদ চাষ করে প্রায় ৪০ মণ হলুদ পাবেন বলে আশা করছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ৯ কাঠা জমিতে হলুদ চাষ করতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। 

শেখ জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, এক সময় তাদের অনেক জমিতে হলুদের চাষ হতো কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় এবং লাভ বেশী না হওয়ায় এখন আর হলুদের চাষ করেন না। 

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় হলুদ এখন অনেক কম উৎপাদন হচ্ছে। হলুদ চাষে পরিশ্রম বেশী, বীজের দাম বেশী। উপজেলায় লবনাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। লাভ কম হওয়ায় হলুদ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। কৃষকরা ঝুঁকছেন অন্য ফসল উৎপাদনে।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: