ভুলে ভরা বিপিএল (ছবিসহ)
আপনি বিয়ে বাড়িতে খুব সুন্দর গেট বানিয়েছেন, আলোকসজ্জায় কমতি রাখেননি একটুও। কিন্তু ভেতরে অতিথিদের বসার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। এমনটা হলে কেমন হবে? কেবল জাঁকজমকে নজর দিয়েছেন কিন্তু খুব প্রয়োজনীয় ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। এবং তা নিয়ে বিন্দুমাত্র অস্বস্তিও নেই আপনার মনে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ও তার কর্তৃপক্ষের অবস্থা যেন এমনই।
‘বিপিএলে সম্প্রচারের মান বিশ্বকাপ আর আইপিএলের সেমিফাইনাল-ফাইনালের মতো।’ হাস্যকর ভুলে ভরা বিপিএলের দুর্বল প্রোডাকশন নিয়ে বিস্তর প্রশ্নের মুখে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক যখন এই কথা বলেন তার খানিক পরের ঘটনা এমন-
এবারের বিপিএলে ছিল না উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বেলুন-কবুতর উড়িয়ে গত ৫ জানুয়ারি চার-ছক্কার এই টুর্নামেন্টের পর্দা উন্মোচন করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেখান থেকেই সমালোচনা শুরু।
হবেই বা না কেন? বরাবরই দাবি করা হয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিপিএল। আইপিএল, বিগ ব্যাশের পরই যার স্থান। যদি তাই হয়, তাহলে জমকালো, জাঁকালো, নান্দনিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকল না কেন?
নাজমুল হাসান পাপন যেভাবে পর্দা উন্মোচন করেছেন, তা দেখে মনে হয়েছে পাড়া-মহল্লার কোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করলেন তিনি।
গেলবার বিপিএলে উপস্থাপনা করেছিলেন লাক্সতারকা আমব্রিন। তার উপস্থাপনা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়েছিল, এবার তা থাকবে না। যোগ্য কাউকেই উপস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হবে। সেই ভার দেয়া হলো জান্নাতুল পিয়াকে।
সাঁরে সর্বনাশ! দর্শকরা দেখলেন অ্যামব্রিনের বদলে যাকে নেয়া হযেছে তার তো ক্রিকেটজ্ঞানই নেই। দেশীয় ক্রিকেটারকে বানিয়ে ফেলেন বিদেশি। তার পোশাক-আশাক, ক্রিকেটার, ফ্যানদের সঙ্গে কথা বলাতেও নেই খেলার ছোঁয়া।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিসিবি জানিয়েছিল, এবার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আলোয় সাজবে বিপিএল। আধুনিক প্রযুক্তর ব্যবস্থা আছে ঠিকই। তবে তার কার্যকারিতা? ঢাকা পেরিয়ে সিলেট পর্বে পা রাখলেও সমাধান আসেনি।
ডিআরএস আছে কিন্তু তাতে নেই হটস্পট, স্নিকোমিটার কিংবা আলট্রাএজ! অর্থাৎ ব্যাটের কানা বা প্রান্ত পরখ করে দেখার মাধ্যম শব্দনির্ভর কোনো প্রযুক্তি নেই। সদ্য সেই সমস্যা কিছুটা মিটেছে। ততদিনে নানা সর্বনাশ ঘটে গেছে। অযাচিতভাবে আউট হয়ে গেছেন অসংখ্য ব্যাটসম্যান। তৃতীয় আম্পায়ারও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি।
ভুল আছে সম্প্রচারকদেরও। সেসব বড্ড হাস্যকর বটে! দেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, খালেদ আহমেদদেরও সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারছেন না তারা। বারবার তাদের ক্যামেরা ললনাদের ঘিরে।
আচ্ছা মাঠে কী? অদ্ভূত সাজে পাঁড় ক্রিকেটভক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু, কিশোর, তারুণ্যের প্রতীক যুবকরা থাকে না? শুধু তাই নয়, খেলা মাঠে গড়াতেই দেখা যাচ্ছে সেই আগের মতো অদ্ভুত সব মাটি ফুঁড়ে পাইপ-টায়ার বের হওয়ার দৃশ্য।
একদম শুরুর দিন চিটাগাং ভাইকিংস পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদের বয়স ১১৯ বছর দেখানো নিয়ে কম হাস্যরস হয়নি। ওটা সরিয়ে রেখে ৬ জানুয়ারি কুমিল্লা-সিলেট ম্যাচে যান। খেলার সপ্তম ওভার, আগে ব্যাট করা সিলেটের স্কোর ৩৭/২। তখন টপ ভিউ থেকে দেখানো হলো ব্যাট করছে ঢাকা ডায়নামাইটস!
প্রথম দিন। ঢাকার বিপক্ষে লড়ছিল রাজশাহী। দলের স্কোর যখন ৫৩/৩, তখন ব্যাট করছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ ও জাকির হাসান। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে দেখা গেলো দুই ব্যাটসম্যানেরই নাম জাকির হাসান!
ওই ম্যাচেরই প্রথম ইনিংসে যাওয়া যাক। ঢাকার দুই ওপেনার পাওয়ার প্লের ছয় ওভারেই তুলেছেন ঝড়। ৬ ওভার শেষে স্কোরকার্ডে দেখালো ঢাকা- ৬৮/০ (৬ ওভার)। হজরুতুল্লাহ জাজাই ব্যাট করছেন ২১ বলে ৪৯ করে, সুনীল নারিনের রান ১৪ বলে ৯। আর অতিরিক্ত থেকে এসেছে ৬ রান। সব যোগ করলে দাঁড়ায় ৬৪ রান। তাহলে বাকি চার রানের হিসাব কই? আসলে টিভি প্রোডাকশনে নারিনের রান ভুল দেখানো হয়েছিল। নারিন তখন অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ১৩ রানে। গোলমাল বাধে সেখানেই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ব্যাট করতে নামলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার টি-টোয়েন্টি রেকর্ডে দেখানো হলো টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ আছে ৪১ রান। অথচ ঠিক আগের ম্যাচেই তিনি করেছেন ৫১ রান। সেটা বেমালুম গায়েব!
ফিক্সের ভুলে ভরা ওই ম্যাচের পরের ইনিংসে আবার ফেরা যাক। ১৯০ রান তাড়ায় ১২.৪ ওভারের সময়ের দৃশ্য। টিভি স্ক্রিনে দেখালো জিততে রাজশাহীর দরকার ৩৮ বলে ১১৫ রান। আপনি হিসেব করে দেখুন ৭.২ ওভারে হয় আসলে ৪৪ বল। বিপিএলের প্রোডাকশন পুরো ছয় বল গায়েব করল কোথায়?
ইনিংসের আরও একটু পেছনে গেলেও এক ওভারের গড়মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ৯ ওভার শেষে রাজশাহীর রান ৫ উইকেটে ৫৬। স্ক্রিনে দেখাচ্ছে জিততে তাদের দরকার ৬০ বলে ১৩৪! খেলা তো ২০ ওভারের তাহলে আরেক ওভার কোথায়?
খেলোয়াড়দের নাম ভুল দেখানো। ধারাভাষ্যকারদের হাস্যকর সব ভুল। বল এক দিকে ক্যামেরা তাক করা আরেক দিকে। এমন ভুলের ছড়াছড়ি তো আছেই। আম্পায়ারের মান নিয়েও আছে বরাবরই মতই প্রশ্ন।
প্রথম আট ম্যাচে ডিআরএসে ছিল না আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিই। এ যেন নুন ছাড়া তরকারির মতো। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো আল্ট্রা এজ প্রযুক্তি ছাড়াই কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্ত টিভি আম্পায়াররা রিভার্স করেছেন। নিয়ম হলো মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলাতে হলো স্পষ্ট প্রমাণ হাতে পাওয়া চাই টিভি আম্পায়ারের। আল্ট্রা এজ প্রযুক্তি ছাড়া তা সেটা কীভাবে পেয়েছিলেন কেবল তারাই জানেন।
প্রতিদিন এতসব ভুলের পরও আল্ট্রা এজ প্রযুক্তি যোগ করেই ইসমাইল হায়দার মল্লিক তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললেন, ‘প্রোডাকশনের ভুল নেই। আমাদের ধারাভাষ্যকার কয়েকটা হয়তো ভুল বলেছেন। আর একদিন গ্রাফিক্সে একজন ক্রিকেটারের বয়স ভুল দেখানো হয়েছে। সেটা টাইপিংয়ের ভুল। খুব বড় কিছু নয়। আর ধারাভাষ্যকাররাও মানুষ। তাদের ভুলকে মানুষের ভুল হিসেবে নিতে হবে। প্রোডাকশনের কোনো কিছু না।’
গ্রাফিক্সের ভুলগুলো এরপর আরও নির্দিষ্ট করে প্রশ্ন রাখলে জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রাফিকসে যে ভুলগুলি আছে, আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। চেষ্টা করব ঠিক করার। ধারাভাষ্যকার প্যানেলে আমরা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। সামনে ড্যারিল কালিনান, ড্যানি মরিসন আসবে। যারা বারবার ভুল করবে, তারা থাকবে না প্যানেলে।’ সূত্র: ডেইলি স্টার।
বিডি২৪লাইভ/এআইআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: