কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মতান্ত্রিক ৩ পদ
একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব ও রাষ্ট্রীয় আইনের দ্বারা পরিচালিত হয়। হয়তো উপাচার্য নিজে চাইলে তার ক্ষমতাবলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে অবশ্যই তা আইন মেনে হতে হয়। কিন্তু আইনে নেই, প্রতিষ্ঠিত কোন রেওয়াজ না থাকলেও নিছক ভাবের উদ্বেগের জন্যই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সৃষ্টি করা হয়েছে ৩টি পদ বা দায়িত্ব।
একাডেমিক বা প্রশাসনিক কার্যক্রমের চেয়ে উপাচার্যের তোষামদে ব্যস্ত এমন শিক্ষকদেরকে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে এ পদগুলোয় বসিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী এমনটিই অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তিনি সৃষ্টি করেছেন এমন কয়েকটি পদ যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাছানকে আইটি উপদেষ্টা এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে গণমাধ্যম উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন উপাচার্য। গেল বছরের ৮ নভেম্বর রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হলেও উপদেষ্টারা কি দায়িত্ব পালন করবেন তার সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা উল্লেখ নেই। কিন্তু কেন এই দায়িত্ব এবং কি কাজ তাদের? বিষয়টি যেন মরিচিকার মতই রয়ে গেল। তারা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন বলেও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা মনে করেন।
‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধন আইন ২০১৩’ এর মধ্যে এমন কোন পদ বা দায়িত্বের হদিস পাওয়া যায়নি। তাহলে কিভাবে এমন দায়িত্বের পদ সৃষ্টি করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটও তো এমনটি অনুমোদন করতে পারে না তারপরও নেই সিন্ডিকেটের অনুমোদন। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েও এমন কোন পদ বা দায়িত্বের খবর পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখার জন্য রয়েছেন প্রক্টর, আইটি সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য রয়েছে আইটি সেল, গণমাধ্যম সংক্রান্ত কাজের জন্য রয়েছে জনসংযোগ দপ্তর।
এদিকে এসব পদ তৈরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে তাদের ‘হুকুমাত’ বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তারা এ সব দায়িত্বে নিয়োজিতদের (উপাচার্যের কাছের হওয়ায়) খুশি করতে সদা ব্যস্ত থাকেন। নিয়োজিতরা একাডেমিক কাজের চেয়ে উপাচার্যকেই খুশি করার জন্য ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ উঠে। শিক্ষকরা যদি ক্লাসে পাঠদান ও গবেষণাকে দূরে রেখে এ কাজেই বেশি সময় অতিবাহিত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম গতিহারা হবে এমনটি মনে করেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপাচার্যকে সর্বদা তোষামোদ করেন এমন ব্যাক্তিদের উপহার সরূপ এসব পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পদ বা দায়িত্বের বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমীর হোসেনের সাথে কথা বললে তারা বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ‘উপাচার্যের অনেক নির্বাহী ক্ষমতা থাকলেও তবে তিনি এধরনের পদ সৃষ্টি করতে পারেন না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে গতি নিয়ে আসার জন্য উপাচার্য এ ধরনের পদ তৈরি করতে পারেন এবং যে কাউকেই এসব পদে দায়িত্ব দিতে পারেন। সব বিষয় যে আইনে থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। এ পদগুলো আমরা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করবো।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘আমার একার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সম্ভব না। তাই যে ব্যক্তি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে সে পদে দায়িত্ব দিয়ে তাদের থেকে সহযোগিতা নিচ্ছি।’
বিডি২৪লাইভ/এজে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: