আবারও আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩১ এএম

কামরুল হাসান: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আবারও আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি তার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হবে। তাকে কারাগারে নেওয়ার পর থেকে দলটি তার মুক্তির জন্য মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্শন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, স্মারকলিপি দেওয়ার মতো শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছিল।

তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের কর্মসূচি থেকে অনেকটা বিরত থাকে দলটি। এবার তার মুক্তির  বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছেন নেতারা। একদিকে আইনি লড়াই ও অন্যদিকে রাজপথের কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

বিএনপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ শুরু করেছে দলটি। গঠন করা হয়েছে দশ বিভাগীয় কমিটি। এসব কমিটির নেতারা একদিকে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য কাজ করবেন, অন্যদিকে নির্বাচন-পরবর্তী হতাশায় আবর্তিত নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে প্রত্যেক জেলা সফর করবেন। এ কর্মসূচি শেষে আগামী এক মাসের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ফের আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা।

তারা মনে করছেন, শুধু আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব হবে না। এর জন্য রাজপথের আন্দোলনও প্রয়োজন। এর বাইরে নির্বাচনের বিপর্যয়ের ফলাফলকে কেন্দ্র করে সারাদেশে হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার জন্যও নতুন কর্মসূচিতে যেতে চাইছেন নেতারা।

এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, সারাদেশে তাদের অনেক নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন, মা-বোনরা নির্যাতিত হয়েছেন। আর গণতন্ত্রের জন্য যিনি স্বাধীন, সার্বভৌম পতাকা নিয়ে যুদ্ধ করছেন তাকেও আজ প্রায় এক বছর অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্য আইনি লড়াই যেমন চলবে তেমনি রাজপথের আন্দোলনও তারা অব্যাহত রাখবেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজারো মামলায় কয়েক লাখ নেতাকর্মী আসামি। কয়েক হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াসহ তাদের অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়েছে। তাকে মুক্ত করার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। খুব তাড়াতাড়ি তা করা হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, নির্বাচনের ফল বিপর্যয় ও দলের নেতাকর্মীরা কারাগারে আটক থাকায় আপাতত রাজনৈতিকভাবে তারা নাজুক অবস্থায় রয়েছেন। তবে এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। আইনি প্রক্রিয়ায় নেতাকর্মীরা কারাগার থেকে বের হয়ে আসবেন। আর এটাকে ত্বরান্বিত করতে সারাদেশে ১০টি বিভাগীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

নেতারা বলেন, এসব কমিটি কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্তিলাভের প্রধান অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আসনভিত্তিক ধানের শীষের প্রার্থীরা এসব নেতাকর্মীর আইনি সহায়তায় এগিয়ে আসছেন কি-না, তাও তদারকি করবে বিভাগীয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটিতে একজনকে দলনেতা করে চারজন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তার বিষয়কে সামনে রেখে প্রত্যেক জেলা সফর করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এসব সফরে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে নানামুখী কর্মসূচিও গ্রহণ করবেন তারা। এর মধ্যে আলোচনা সভা, উঠান বৈঠকের মতো কর্মসূচি নিয়ে তারা সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলোকেও চিহ্নিত করবেন। নির্বাচনী সহিংসতায় আহত নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশেও দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে তাদের আরও উজ্জীবিত করতে কেন্দ্র থেকে কর্মসূচি নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফরে তৃণমূল বিএনপি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তারা।

এসব কমিটির মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানকে ঢাকা বিভাগ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ময়মনসিংহ, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ চট্টগ্রাম, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান খুলনা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার সিলেট, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির বরিশাল, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু রংপুর, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান ফরিদপুর ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির মুরাদকে কুমিল্লা বিভাগের দলনেতা করা হয়েছে।

টিমের কার্যক্রম নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সারাদেশে নির্যাতনের একই চিত্র। হাজারো নেতাকর্মী কারাগারে আটক রয়েছেন। এসব নেতাকর্মীর জামিনে মুক্তিলাভের জন্য আইনি সহায়তা কতটুকু দেওয়া হচ্ছে, তাদের মুক্তিলাভের প্রধান অন্তরায়গুলো কী ধরনের, তা চিহ্নিত করার জন্য কাজ করবেন তারা।

যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, তার বিভাগে পাঁচটি জেলা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা এসব জেলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কথা বলেছেন জেলার নেতাদের সঙ্গে। এর পরও আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে তারা এসব জেলায় সফর করবেন। সেখানে তারা নির্যাতনের প্রকৃত তথ্য তুলে আনবেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সাহায্যার্থে প্রার্থীরা কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি-না, কিংবা নিতে না পারলে সমস্যা কোথায়, তা চিহ্নিত করবেন তারা।

যেসব আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন সেসব আসনে দায়িত্বপূর্ণ নেতাদের সমন্বয় করে ওইসব প্রার্থীকে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি ও ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপি নেতারা। সূত্র: সমকাল। 

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: