পথের রেষে চোখ হারাতে বসেছে মিশু!

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৫ এএম

ভোলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষা সফরে যাওয়া একটি বাসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস মিশুর চোখে ও আবদুল্লাহ গুরুতর আহত হয়।

আশংকা করা হচ্ছে ছাত্রী মিশুর চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাদের গুরুতর অবস্থায় বরিশাল প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বুধবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ভোলা কলেজের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে।

মৃত্তিকা বিজ্ঞানের চতুর্থ বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকসহসহ কয়েক জন শিক্ষার্থী জানান, ২২ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে বাস যোগে ভোলা সরকারি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা শিক্ষা সফরে চরফ্যাশনের দক্ষিন আইচা যাচ্ছিলো।

&dquote;&dquote;সকালে ভোলা সরকারি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে চরফ্যাশন উপজেলার জ্যাকব টাওয়ার, শিশুপার্ক, খামার বাড়ি ও কুকরি-মুকরি অভিমুখে যাত্রা করে।

বেলা ১২টার দিকে জ্যাকব টাওয়ার ও শিশুপার্ক পরিদর্শন করে। দুপুর ১টার খামার বাড়িতে দুপুরের খাবার। সেখান থেকে কুকরি-মুকরির দিকে দক্ষিণে রওনা হয়।

কিন্তু ওই বাসটি দক্ষিন আইচা যাওয়ার আগে বিকালে একটি প্রাইভেট কারের চাপায় স্থানীয় জামাল মেম্বারের ৪ বছরের ছেলে নিহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত হয়ে উঠে স্থানীয় এলাকাবাসী।

তখন ভোলা সরকারি কলেজের বাসটি ঘটনা স্থলে গেলে এলাকার একদল উশৃঙ্খল যুবক লাঠি সোটা নিয়ে বাসটি ভাংচুর করে এবং বাসের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মারধর করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।

এ সময় মৃত্তিকা বিভাগের প্রথম বর্ষের মিশু আক্তার, রুবিনা, জয়ন্ত সমাদ্দার, আব্দুল্লাহ, নাইমুর রহমান, আশিক, তানিম, শান্ত, সোহাস,আরিফ,আরিফুল ইসলাম,রাবিনা, ফয়সাল,শিক্ষ সাইদুর রহমান ও ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মোল্লাসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।

এদের মধ্যে কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস মিশুর চোখে গুরুতর আহত হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুধু হামলাই হয়নি। বাসটিকে আটকে রেখে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে টাকা মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুটপাট করে।

পুলিশকে খবর দেয়ার আধাঘন্টা পর ঘটনা স্থলে আসে। পুলিশের সামনেও ছাত্রদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে পুলিশ ওই বাসটি দক্ষিণ আইচা থানায় নিয়ে যায়। ৪ ঘন্টা পর তারা আহতদের নিয়ে ভোলা সদরের উদ্দেশ্যে ফিরে আসে। আহতদেরদের ভোলায় এনে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এছাড়া গুরুতর আহত ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস মিশুকে তাৎক্ষনিক বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, গুরুতর জখম হয়েছে মিশুর বাম চোখে। মিশুর চোখের প্রদীপ জ্বলবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নন তারা। বড় ধরনের অপারেশন করা লাগবে। প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন রয়েছে তাতে। বৃহস্পতিবার তার অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে। অপারেশনের পর বলা যাবে সে চোখে আলো দেখবে কিনা।

শিক্ষার্থী ও ভোলা কলেজের শিক্ষকরা আরও জানান, চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার প্রভাবশালীরা এ হামলা চালিয়েছে। তাঁরা বারবার নিজেদের পরিচয় দিয়েও হামলার শিকার হয়েছেন। তাঁরা এ ঘটনার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বুধবার কলেজের সামনে ভোলা-চরফ্যাশন আন্ত-মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন করে ও সড়ক অবরোধ করেছে।

এছাড়াও কলেজের শহীদ মিনার থেকে কলেজ ফটক পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট করেছে। সুষ্ঠু বিচার না পেলে আন্দোলন কর্মসূচি দিবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

পরে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। জেলা প্রশাসক আহত মিশুর পরিবারকে চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে আরো সহযোগীতার জন্য আশ্বাস দেন বলে জানা গেছে।

এদিকে দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মাসুম তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থলে একটি মাইক্রোবাস মো. জাবের (৪) নামের এক শিশুকে চাপা দিয়ে চলে যায়। উত্তেজিত জনতা ওই মুহুর্তে সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর করে। ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষা সফরের বাস ওই জনরোশে পড়েছে। শুনেছি এতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মুঠোফোন খোয়া গেছে। পুলিশ মুঠোফোন উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। উদ্ধার হলে শিক্ষার্থীদের নিক পৌঁছে দেওয়া হবে।

&dquote;&dquote;

ভোলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম জাকারিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ২জন শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, তিনি ঘটনাটি জানেন না। জানলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: