প্রেমের অপরাধে আড়াই বছর বন্দি প্রেমিকা!

প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:০০ পিএম

ভালবাসা ছাড়াতে কবিরাজ ও স্বপ্নে দেখা এক ব্যক্তির পরামর্শে কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে আড়াই বছর আটকে রাখল এক মা।

আলো বাতাসহীন স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘর থেকে স্নাতক পড়ুয়া এক ছাত্রীকে (২২) অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ২ নং বিনোদনগর ইউনিয়নে।

গত বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মশিউর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি পুলিশ।

প্রতিবেশীরা জানান, মেয়েরা দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে সেও তার এক ভাই যমজ। মেয়েটি ওই পরিবারের সঙ্গে বিরোধ আছে এমন এক পরিবারের ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের সন্দেহে প্রায় আড়াই বছর ধরে ওই ছাত্রীকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আটকে রেখেছিল। বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকলেও যে ঘরে মেয়েটিকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই ঘরে কোনো বিদ্যুৎ–সংযোগ ছিল না। এমনকি ঘরের দরজা-জানালা সব সময় তালা মেরে বন্ধ করে রাখা হতো। তাকে গোসল করতে দেয়া হতনা। আধা পাকা ঘরটি স্যাঁতসেঁতে। ঘরের ভিতরে বর্ষায় পানি পড়ে। প্রতিবেশীদেরকে জানানো হয়েছিল মেয়েটি মানসিক রোগী তাই তাকে আটকে রাখা হয়েছে। এক পর্যায় চিকিৎসার অর্থ না থাকলে প্রতিবেশীরা সকলে মিলে সহযোগীকা করতে চাইলে মেয়েটির মা এটি তাদের পারিবারিক ব্যাপার বলে এড়িয়ে যান।

বৃহস্পতিবার ববাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রীটির মুখ ও পা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। হাতের আঙুলগুলো কুঁকড়ে গেছে। বসে থাকতে বা দাঁড়াতে পারছেন না। কথা বলতে গেলে শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে। দূর্গন্ধ বের হচ্ছে তাঁর শরীর থেকে। মেয়েটি কথা বলার মত অবস্থা নেই। চিকিৎসকরাও মেয়েটির দ্রুত সুস্থ্য হয়ে ওঠা ও মানবিক দিক বিবেচনা করে নিকট আত্মীয় ছাড়া কাউকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছেনা।

নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন অপচিকিৎসায় ও বদ্ধ ঘরে থাকায় ছাত্রীটির রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। আলো বাতাসে না আসা এবং হাঁটাচলা না করায় দেখা দিয়েছে হাড়ক্ষয় রোগ। সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে চর্মরোগ, আর মুখে ফাঙ্গাস। ছাত্রীটি শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে কিছুদিন থাকলে যেকোনো মুহুর্তে মৃত্যু হতে পারত তার। এখন তাঁকে সুস্থ করতে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সে সবাইকে চিনতে পারছে। তার মানষিক েেকান সমস্যা নেই। সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

বন্দিদশা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই তরুণী সঙ্গে থাকা ছাত্রীটির খালাতো বোন জানান, এক বছর ধরে চেষ্টা করেও তিনি তাঁর খালাতো বোনের (ছাত্রীটির) সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তিনি বলেন, রংপুরের একটি স্কুল মানবিক বিভাগ থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও নবাবগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করে স্নাতকে ভর্তি হয়। তার বোনের স্বপন ছিল লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হওয়ার।

ছাত্রীটির বাবা মায়ের কাছে এ বিষয়ে সাংবাদিকার জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে চাননি, তবে মেয়ের মা জানায় মেয়েটি অসুস্থ্য হওয়া সুস্থ্যতার জন্য কবিরাজ ও স্বপ্নে দেখা এক ব্যক্তির পরামর্শে মেয়েকে ওইভাবে ঘরে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মশিউর রহমান বলেন, আড়াই বছরের বেশি সময় আটকে রাখা হয়েছে খবর পেয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক বাবাকে ডেকে পাঠান। ছাত্রীর বাবা ইউএনওকে জানান, ছাত্রীর মা একক কর্তৃত্বে ছাত্রীটিকে আটক রেখেছেন। এরপর তিনি নিজে পুলিশ নিয়ে গিয়ে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

ইউএনও মশিউর রহমান বলেন, কোনো পরিবার তার সন্তানকে এভাবে বন্দী করে রেখে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যেতে পারে, তা ভেবে অবাকই হচ্ছি। ছাত্রীটিকে সুস্থ হয়ে আবারও লেখাপড়া শুরু করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মেয়েটিকে উদ্ধারে যাওয়া নবাবগঞ্জ থানার এস আই আতিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারে গেলে প্রতিবেশীরা জানান, দুই থেকে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ওই ছাত্রীকে আটকে রাখা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবাবগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মেয়েটি একটি ছেলেকে ভালবাসত। সেই ছেলেটির সঙ্গে বিয়ে না দেয়ায় মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে পরিবারের লোকজনেরা তাকে বাইরে যেত দিতনা এবং মেয়েটিও বাড়ী থেকে বের হতনা। এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: