লোহাগাড়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগীতা রবিবার

প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:৫৩ পিএম

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ী গ্রামে রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১২৩ তম ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগীতা ও গ্রামীণ মেলা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহৎ এ মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষে রবিবার সনাতন ধর্মের অনুসারীরা সূর্য পূজা করে। এ পূজাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সূর্য পূজার উৎসব থেকে বিমুখ করতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সুনামধন্য আলেম হযরত মাওলানা মোফাজ্জলুর রহমান (রহঃ) লোহাগাড়ায় এ ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলার প্রবর্তন করেছিলেন। এ মহান জ্ঞানসাধক ও কর্মবীর ১৮১৪ সালে এই উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত সৈয়দ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম সৈয়দ মুহিত উল্লাহ।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার লোক সমাগম হয় এই মেলায়। বিশাল এলাকাজুড়ে বসে মেলার স্টল। মেলায় চারুকারু, কাঠ-বাঁশ, প্রসাধনী, বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী, বেত আসবাবপত্র, তৈজষপত্র, মিষ্টি, মাছ সহ নানা রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে শত শত স্টলে ক্রেতারা ভিড় করেন। হাজার হাজার দর্শক এই প্রতিযোগিতা ও মেলা উপভোগ করে থাকেন। মূল মেলা একদিন হলেও মেলার আগে ও পরের দিনও চলে মেলার বেচা-কেনা। মেলার মূল আকর্ষণ ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা বিধায় এটি ঘৌড়দৌড় মেলা হিসেবে এই অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিত।

এ ব্যাপারে জানতে মেলা পরিচালনা কমিটি সদস্য সাইদুল আবরার বিডি২৪লাইভ প্রতিবেদককে জানান, প্রতিযোগীতার জন্য বেশ কয়েকটি ঘোড়া ইতোমধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে, ১ম ও ২য় এবং ৩য় স্থান অর্জনকারী ঘোড়ার মালিককে বিশেষ পুরস্কৃত করা হবে। মেলায় নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় সেচ্ছাসেবক মোতায়ন থাকবে। যাতে কেউ কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা মেলা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সতর্ক আছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা থানা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগীতার কথা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, সুখছড়ী সভার বিলে ঘোড়ার দৌড়, রকমারি পণ্যের বেচাকেনা, নামাজের বড় জামায়াত ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন বড় মাওলানা মোফাজ্জলুর রহমান (রহঃ)। মরহুম বড় মাওলানা একটি সাদা ঘোড়া নিয়ে চলাফেরা করতেন এবং সাথে থাকত একটি তলোয়ার। ওই সময় এলাকায় নুরুদ্দীন পলোয়ান নামে এক ব্যক্তি বাস করতেন। একদা হযরত বড় মাওলানা যাওয়ার পথে তার সাথে সাক্ষাৎ হয়। পলোয়ান নুরুদ্দীন বড় মাওলানার সাথে খুব আদবের সাথে আলাপ করেন। আলাপের পর পলোয়ান নুরুদ্দীন হুজুরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মুরীদ হন। মুরীদ হওয়ার পর হুজুর তাকে ফকির উপাধি দেন। এরপর থেকে তিনি নুরুদ্দীন ফকির নামে পরিচিতি লাভ করেন। পরে তিনিও ইসলাম ধর্মের প্রচার, প্রসার ও ইসলামী সংস্কৃতির মূল্যবোধ মুসলমানদের মনে সৃষ্টি করার জন্য বড় মাওলানার নির্দেশে ১৮৯৬ সালে মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহে শনি ও রবিবার সর্বপ্রথম নুরুদ্দীন ফকির ঘোড়দৌড় মেলার আয়োজন করেন।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: