বিয়ের মাত্র ৫ দিনের মাথায় বিদায় নিলো তাসনিম!

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:০৪ পিএম

হাতের রং এখনো মুছেনি। স্বামীর ঘরে কেটেছে মাত্র ৫ দিন। এর মধ্যে ঘাতক বাস কেড়ে নিলো সব স্বপ্ন। আচমকা ঝড়ে সব উড়ে গেল। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলো নববধূ তাসনিম আক্তার। এমন মৃত্যু কেউ মানছেন না। কান্নার রোল চলছে সিলেটে। সঙ্গে মারা গেল দুই কলেজ পড়ুয়া ননদও।

গতকাল বিকেলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছিলো। নির্বাক নতুন বর জুবের আহমদ। বিয়ে হতে না হতেই বিদায় নিলো স্ত্রী। দুই বোনও নেই। আহাজারি থামছে না তার। শনিবার বিকেলে সিলেট নগরীর প্রবেশমুখ চন্ডিপুলে নির্মম এ ঘটনা। 

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মুহাম্মদপুর (মামনপুর) গ্রামে বাড়ি ফ্রান্স প্রবাসী জুবের আহমদের। সম্প্রতি তিনি দেশে এসে বিয়ে করেন। কনে ওসমানীনগরের হাজি মীনা বেগম মহিলা মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল কাইয়ূমের মেয়ে তাসনিম আক্তার। গত রোববার তাদের বিয়ে হয়। কনে তাসনিমদের মূল বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার হাতিঢর গ্রাম। বিয়ের পর স্বামী জুবেরের সঙ্গে তাদের মুহাম্মদপুরস্থ বাড়িতে চলে আসেন তাসনিম। এর মধ্যে ফিরাযাত্রায় পিত্রালয়ে একবার ঘুরে এসেছেন। স্বামী ফ্রান্সে যাবে। এ কারণে পিতার বাড়ি থাকা হয়নি। 

গতকাল বিকেলে সিলেট নগরীতে এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত খেতে নিজ বাড়ি মুহাম্মদপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বের হন জুবের ও তাসনিম। সঙ্গে ছিলো বোন লিয়া বেগম ও আয়শা সিদ্দীকা চাদনী। সিএনজি অটোরিকশাটি সিলেট নগরীর চন্ডিপুল এলাকায় আসা মাত্র বিপরীত থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস তাদের অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাদের বহনকারী অটোরিকশা।

দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল জানিয়েছেন- দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দক্ষিণ সুরমা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী লিয়া বেগম মারা যায়। চালকসহ অপর চারজনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

এদিকে- হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আয়শা সিদ্দিকা চাদনী। সে দক্ষিণ সুরমার নুরজাহান কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এদিকে- সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন কনে তাসনিম আক্তার। তার মাথা গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়। তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সঙ্গে সঙ্গে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় নগরীর ওয়েসিস হাসপাতালে। সেখানে নেয়ার পরপরই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে তাসনিম আক্তারও। স্বামী জুবেরও আহত হয়। তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। 

রাতে নিহত তাসনিমের চাচা রাসেল আহমদ জানিয়েছেন- তাসনিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওয়েসিস হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিলো। কিন্তু তাকে বাঁচানো গেলো না। এ ঘটনায় তাদের পরিবারের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি বলেন- তাসনিমের স্বামী জুবেরের আঘাত তেমন নয়। সে চিকিৎসা নিলেও কথা বলছে। এদিকে- বিকেলে ওসমানী হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহতদের স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। স্বজনরা জানিয়েছেন- মাত্র ৫ দিন আগে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরপরই তাসনিমের বিদায় মেনে নিতে পারছেন না কেউ। কাদছে নিহত লিয়া ও চাদনীর স্বজনরা। মেয়েদের হারিয়ে পাগলপ্রায় তাদের পিতা-মাতা। এমন ঘটনায় শোক বিরাজ করছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। সূত্র: মানবজমিন

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: