ভারতীয়দের ভিড়ে বেকার বাংলাদেশি শিল্পীরা

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:৫৮ পিএম

আরেফিন সোহাগ: ১৮৯০ সালে ‘বায়োস্কোপ’ নামে বাংলা সিনেমার যাত্রা শুরু হয়েছিল কলকাতায়। বর্তমানে কলকাতা এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। একটা সময় বাংলাদেশের শিল্পীরা ওপার বাংলার সিনেমায় কাজ করার জন্য ডাক পেতেন। ধীরে ধীরে এপারের শিল্পীরা তাদের অভিনয় নৈপূণ্য দিয়ে ওপারে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ঢাকাই সিনেমার সোনালী দিনে ওপার বাংলার শিল্পীরা এপার বাংলার সিনেমায় কাজ করার জন্য অপেক্ষায় থাকতেন। তবে ঢাকাই সিনেমায় যখন মন্দা চলছিল ঠিক তখন দেখা মেলেনি ভারতীয় শিল্পীদের।

তবে গত  কয়েক বছর ধরে ওপারের শিল্পীরা আবার ঢাকাই সিনেমার দিকে ঝুঁকছেন। ওপার বাংলার জনপ্রিয় প্রায় সব শিল্পীরাই ঢাকাই সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যে হারে ওপার বাংলার শিল্পীরা আমাদের দেশে কাজ করেছেন সেই তুলনায় আমাদের শিল্পীরা ওপার বাংলায় কম কাজ করেছে। তবে ঢাকাই সিনেমায় ওপার বাংলার শিল্পীদের কদর বাড়ায় এদেশের নিয়মিত শিল্পীদের একটা বড় অংশ বেকার সময় পার করছেন। দু-একজন বাদে সবাই অবসর সময় কাটাচ্ছেন।

অধ্যাপক ও নাট্যব্যক্তিত্ব ডা. ইনামুল হক বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমাদের দেশে সিনেমা তুলনা মূলক ভাবে কম তৈরি হচ্ছে। সিনেমা তৈরি না হলে শিল্পীরা কাজ কোথায় পাবে? আমাদের শিল্পীরাও ওপার বাংলায় কাজ করছে বা করেছে। এটাকে আমি নীতিবাচক ভাবে দেখবো না। আমরা সিনেমা তৈরি করতে পারছি না তাই আমাদের শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়ছে। আমাদের দেশে আরো বেশি সিনেমা নির্মান করতে হবে তাহলে শিল্পীরা কাজ পাবে।’

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘বিদেশি শিল্পীদের কাজে আমরা ঘোর বিরোধী। যারা বিদেশি শিল্পী এনে আমাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নিতে হবে। আমাদের সিনেমা যদি না বাঁচে বাইরের সিনেমা বা শিল্পী দিয়ে আমাদের লাভ কি? দেশের সিনেমার জন্য চিন্তা করুন, দেশের সিনেমা বাঁচান।’

মাসুদ পারভেজ সোহেল (সোহেল রানা) বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘অনেক আগে আমি বলেছিলাম যে বাংলা সিনেমা মরে যাচ্ছে। মাঝখানে বলেছিলাম সিনেমাকে বাঁচাতে হবে। আর এখন বলছি যে বাংলাদেশি সিনেমা মরে গেছে। আমাদের দেশের কিছুলোক স্বার্থের লোভে বিদেশি শিল্পী এনে কাজ করাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না যে, বিদেশি শিল্পীরা ‘সুই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হবে’। আমাদের দেশের শিল্পীদের মূল্যায়ন না করে বিদেশিদের নিয়ে মেতে আছে কিছু শ্রেণীর লোক। যারা তাদের মন ভুলানো কথা আর চায়ের দাওয়াত পেয়ে খুশি হয়ে বিদেশি শিল্পীদের নিজের ঘরে যায়গা দিচ্ছে। এরা খাল কেটে কুমির আনছে। পরে ওই কুমিরে তার বাচ্চা খাবে বুঝতেও পারবে না।’

বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে কাজ করানোর বিষয়ে আমাদের দেশে অনেক আন্দোলন হলেও তার কোন ফলাফল পাওয়া যায় নি। যদি এমন চলতে থাকে তাহলে বাংলা সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে আমাদের বাংলা সিনেমা এমনটাই মনে করছেন অনেক বিজ্ঞব্যক্তিরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিনোদন সাংবাদিক জানান, পেশাদারিত্বের অভাবেই আমাদের দেশের শিল্পীরা কাজ হারাচ্ছে। ওপার বাংলা থেকে শিল্পী নিয়ে আসার কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশের শিল্পীদের অনেক চাওয়া পাওয়া থাকে। যেটা একজন পরিচালকের ক্ষেত্রে বহন করা বাজেটের বাইরে হয়ে যায়। আর ওপার বাংলার শিল্পীদের ক্ষেত্রে এমন হয় না। এদেরকে পারিশ্রমিক যেটাই দেওয়া হয় তারা কাজটা করতে আগ্রহী থাকে। তাদের মধ্যে চাওয়া পাওয়া থাকে না।

দেশি শিল্পীরা কাজের ক্ষেত্রে সিরিয়াস নয়, শুটিং টাইম ও বিভিন্ন জটিলতার কারণে তাদের নিয়ে কাজ করছেন না প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। আবার এটাও সত্য ওপার বাংলার শিল্পীর প্রতি অতিমাত্রায় ভক্তির কারণেই কলকাতার শিল্পী নেয়া হচ্ছে। দেশীয় শিল্পী নিয়েও ভালো সিনেমা উপহার দেয়া সম্ভব।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা চম্পা বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমাদের দেশের সিনেমার অবস্তা ভালো না। নিজের দেশের সিনেমার চিন্তা না করে বিদেশি শিল্পী দিয়ে কাজ করানো টা এক ধরণের স্বার্থপরতা ছাড়া কিছু না। আমি মনে করি আমদের চলচ্চিত্রকে আগে বাঁচানো উচিত। দুই একটা ভালো শিল্পী বিদেশি নিয়ে কাজ করানো যায়। কিন্তু ঢালাও ভাবে কাজ করানোর বিপক্ষে আমি বলছি। তাই নিজের দেশের সংস্কৃতিকে হারাতে দেয়া যাবে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিনেত্রী বলেন, ‘অতিভক্তির কারণে আজ বাইরের শিল্পীরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের দেশের শিল্পীদের মূল্যায়ন করা হয় না। কাজের জন্য ডাকাও হয় না। এর কারণ হচ্ছে পরিচালক মনে করেন যে বয়স হয়ে গেছে দর্শক হয়তো পর্দায় এই শিল্পীকে দেখবে না। কিন্তু এটা তাদের ভুল ধারণা। প্রবীণেরা পর্দায় থাকলে দর্শক আরো হল মুখি হবে। আমি মনে করি এই বিদেশি শিল্পী দিয়ে অতিরঞ্জিত বন্ধ করুন। আমাদের চলচ্চিত্রের পাশে থাকুন।

বিডি২৪লাইভ/এএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: