ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৭:০০ পিএম

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পর দু’দেশের মধ্যেকার বিরজমান সমস্যা লেগে আছে। বিশেষ করে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যা আজও মেটেনি। এর অন্যতম প্রধান সমস্যা কাশ্মীর ইস্যুটি। কিছুদিন পরপর কাশ্মীর নিয়ে দেশ দু'টির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, এবং যুদ্ধাংদেহী অবস্থা বিরাজ করে সারাবিশ্বে। এই বুঝি ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লেগে গেল। এই দু’দেশের এমন যুদ্ধামনোভাবের শেষ কোথায়? এ প্রশ্ন সারাবিশ্বের।

সম্প্রতি ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর পুলওয়ামায় হামলায় দেশটির বিশেষায়িত বাহিনীর ৪৪ জন জওয়ান নিহতের ঘটনায় আরও নতুন উত্তেজনার সুচনা ঘটল। একদিকে ফুঁসে উঠেছে ভারত। তাদের ধারণা এই হামলায় হাত রয়েছে প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান। জওয়ান নিহতের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

অন্যদিকে দিকে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন তারা যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে এ প্রতিযোগীতা কী চলতে থাকবে নাকি পাল্টাপাল্টি একের পর এক অভিযোগের অবসান ঘটবে।

এদিকে পুলওয়ামার ওই ঘটনায় ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট ফেভার্ড ন্যাশন’ (এমএফএন) সুবিধা প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। সেইসঙ্গে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী পাঁচ শীর্ষ নেতার নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে নয়াদিল্লি। এ ছাড়া পাকিস্তানি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। সেইসঙ্গে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ একঘরে করে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে নয়াদিল্লি।

এসবের পাল্টা জবাব দিতে মোদিকে উদ্দেশ্য করে ইমরান খান বলেন, আপনি যদি পাকিস্তানে কোনো ধরনের আক্রমণের কথা ভেবে থাকেন। পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে একটুও ভাববে না, সোজা প্রতিশোধ নেবে। তিনি বলেন, শুধু আলোচনার মাধ্যমেই কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান সম্ভব।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ করে আসছে ভারত।

এমন কথার প্রেক্ষিতে ইমরান খান বলেন, তাঁর সরকার ঘটনার তদন্তে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। তিনি জানতে চান, যখন পাকিস্তান একটি স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- এমন সময়ে এই হামলা করে পাকিস্তানের কী লাভ?

তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সোম ও মঙ্গলবারের পাকিস্তান সফর চলায় তিনি এ ঘটনা নিয়ে কিছু বলেননি।

এদিকে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার ঘটনার বিশ্বজুড়ে ওই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা দেখিয়ে তাদের একঘরে করার জন্য জোড় দাবি জানায় ভারত।

উল্লেখ্য, ১৪ ফেব্রুয়ারি হামলায় দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। স্কুলছুট ১৯ বছরের এক যুবক, যে গত বছরে যে জঙ্গি সংগঠনটিতে যোগ দিয়েছিল সেই হামলা চালিয়েছে। মনে করা হয়, জইশ-ই-মহম্মদের বড় সমর্থক পাকিস্তানি সেনা এবং আইএসআই।

ওই হামলার পরেই মাশুদ আজাহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসাবে নিষিদ্ধ করার জন্য জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছে ভারত। পাকিস্তানের থেকে মোস্ট ফেবারড কান্ট্রির তকমা তুলে নেওয়া সহ কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য একইসঙ্গে দেশগুলি বা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁছ স্থায়ী সদস্য, আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স, চিনের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হানার পর ফুঁসছে গোটা দেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের দাবিতে মুখর সিটিজেন থেকে নেটিজেন সকলেই। কেউ চাইছেন যুদ্ধ। কারও মতে আবার হোক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। কিন্তু এর আগে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াতে ত্রিমুখী কৌশল নেওয়ার পরিকল্পনা করছে ভারতীয় সেনারা।

ওই ঘটনার পরই পাকিস্তানকে একেবারে মারার চেষ্টা শুরু করেছে ভারত। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ৭০টিরও বেশি সরকারি এবং বেসরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে ভারতের হ্যাকাররা।

অন্যদিকে এর পাল্টা জবাবে পাকিস্তানের হ্যাকাররা ১৪০টিরও বেশি সাইট হ্যাক করেছে ভারতের।

পাকিস্তান সফরে গিয়ে সৌদি বাদশা মোহাম্মাদ বিন সালমান বলেন, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে কাজ করবে তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, আরব দেশটির লক্ষ্য হলো দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমানো এবং শান্তিপূর্ণভাবে কোনো সমাধানের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে বের করা।

মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানি ডুজারিক বলেন, পুলওয়ামা হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার যে আবহ তৈরি হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তিনি আরও বলেন, মহাসচিব ভারত-পাকিস্তান দু’দেশকেই সংযত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এ নিয়ে যে কোনও সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত জাতিসংঘ।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের হামলাকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ভারত পাকিস্তানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিবৃতি দিবেন। তাদের নতুন করে এ উত্তেজনায় পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দিল্লি। আবার পাকিস্তানও চুপ করে বসে নেই। তাদের উভয়কে সমাধানের পরামর্শ রইল বলেও জানান তিনি।

এদিকে ভারতীয় উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদ দমনে মোদী সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন সৌদি বরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান। একই সঙ্গে তাঁর বার্তা সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। মঙ্গলবার রাতে সৌদি যুবরাজ ভারতে এসে এমন আশ্বাস দেন নরেন্দ্র মোদীকে।

পুলওয়ামায় ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘কোনো প্রমাণ ছাড়া বারবার পাকিস্তানের ওপর দোষারোপ করা বন্ধ করুন। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে, ভারতের এমন যেকোনো দুঃসাহসিকতার জবাব দেওয়া হবে।’ ভারতের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর সরকার হামলার ঘটনার তদন্তে দিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

ইতোমধ্যে পুলওয়ামায় ওই জঙ্গী হামলার ঘটনায় ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট ফেভার্ড ন্যাশন’ (এমএফএন) সুবিধা প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। সেইসঙ্গে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী পাঁচ শীর্ষ নেতার নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে নয়াদিল্লি।

এ ছাড়া পাকিস্তানি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। সেইসঙ্গে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ একঘরে করে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে নয়াদিল্লি।

বিডি২৪লাইভ/এসএ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: