প্রথম ধাপে ৫৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি পাচ্ছে এনআইডি কার্ড

প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০১৯, ০২:৩৭ পিএম

অবশেষে দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পর প্রথম বারের মত প্রবাসে বাংলাদেশিরা জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে সচিবের নেতৃত্বে ইসির প্রতিনিধি দল আজ রবিবার (৩ মার্চ) সিঙ্গপুর গেলেন। প্রথম ধাপে সিঙ্গাপুরে ৫৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিকে এনআইডি দিবে ইসি। পর্যায় ক্রমে অন্যান্য দেশেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান জানান, প্রবাসে ভোটার নিবন্ধন বিষয়ে সিঙ্গাপুরে এক সপ্তাহ ধরে ইসির ইন্সপেকশন টিম ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে। পুরো নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি করতে এ সম্ভাব্যতা যাচাই। সিঙ্গাপুরের পর দুবাইয়ে একটি টিম যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আজ সিঙ্গাপুর গেলেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) মো: আব্দুল বাতেন, আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং একসেস টু সার্ভিস (আইডিইএ) প্রকল্পের আইটি পরিচালক উইং কমান্ডার মো: মাশায়েখ হোসেন এবং ইসির সিস্টেম এনালিস্ট ফারজানা আখতার।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার কাজ শুরু করতে চান তারা। সব ঠিক থাকলে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাই প্রথম এ সুযোগ পাবেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুরে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট আলোচনা করতে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাস ও সবার সঙ্গে কথা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেজিস্ট্রেশন কীভাবে করা যায়, কোথায় নিবন্ধন সেন্টার হবে, লোকবল কেমন লাগবে, পদ্ধতিগত কী কী জটিলতা থাকতে পারে- সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে প্রতিনিধি দল প্রতিবেদন দেবে।

সিঙ্গাপুরের পাইলট প্রকল্প সফল হলে এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এক দশক আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার দাবিও আলোচনায় আসে। এর মধ্যে সরকার ভোটারদের হাতে বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু করলেও নানা জাটিলতায় প্রবাসীদের ভোটার করার প্রক্রিয়া আটকে থাকে।

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত বছর এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে।

প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা এখনই সম্ভব না হলেও তাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র যাতে দেওয়া যায়, সেই সুপারিশ আসে সেখানে।

জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রথমবারের মত ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর তখনকার দুই নির্বাচন কমিশনার প্রবাসীদের ভোটার করার ও ভোট নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ সফর করেন।

এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করে, যার লক্ষ্য ছিল বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় এনে তাদের ভোট দেওয়ার পথ তৈরি করা।

কিন্তু তা না হওয়ায় এবং দেশে না ফিরে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানা সমস্যা ও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে এখনও। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সপ্তদশ সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত। আর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের হিসাব পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ৭৫ লাখের মত।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: