স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত সিলেটের হুসনে আরা

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০১৯, ১০:১০ পিএম

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছের একটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা ওই মাঠে অনুশীলনে করছিলেন। অনুশীলন শেষে তারা মসজিদটিতে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। তবে তারা মসজিদে প্রবেশের আগেই এই হামলার ঘটনা ঘটায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মসজিদে হামলাকারী ওই ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। এ ঘটনার পর কাছাকাছি শহরতলি লিনউডের মসজিদে হামলা হয়। ওই হামলাতেও একই ব্যক্তি জড়িত কি না, তা এখনো জানা যায়নি।

ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলা নিহত হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি হুসনে আরা পারভীন (৪২)। মসজিদে গোলাগুলির খবর শুনে স্বামী ফরিদ উদ্দিনকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন তিনি।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় নিহত হুসনে আরার স্বজনরা জানান, হুসনে আরার বাবার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালহাটা গ্রামে। তিনি ক্রাইস্টচার্চে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। এক দুর্ঘটনার পর থেকে তার স্বামী ফরিদ হুইলচেয়ারে চলাচল করতেন। হামলার সময় তার স্বামী ও তিনি ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের ভেতরে পৃথক স্থানে ছিলেন।

পরিবার ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, হুসনে আরারা তিন বোন ও দুই ভাই। স্বামী ফরিদ উদ্দিনের বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলার চকগ্রামে। হুসনে আরা-ফরিদ দম্পতির শিফা আহমদ নামে ১৬ বছর বয়সী এক কন্যাসন্তান আছে। ১৯৯৪ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তারা নিউজিল্যান্ডে চলে যান। ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় বসবাস করতেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তারা দেশে এসেছিলেন। ফরিদ সেখানে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। সেই থেকে হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করতেন। বাইরে বের হলে সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকতেন স্ত্রী হুসনে আরা।

গোলাপগঞ্জ থেকে হুসনে আরার ভাগনে মাহফুজ চৌধুরী জানান, তারা জানতে পারেন প্রায় ১৫ মিনিট পর গুলির শব্দ শুনে হুসনে আরা তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য খুঁজতে বের হন। এ সময় অস্ত্রধারীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

হুসনে আরার বড় বোন রওশন আরা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, সন্ত্রাসী হামলার পরপরই তাদের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ফোন করে হুসনে আরার নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে হুসনে আরার স্বামী ফরিদ উদ্দিন বেঁচে গেছেন।

রওশন আরা বেগম আরও জানান, কোরআন শরিফ ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারতেন হুসনে আরা ও তার স্বামী। তারা দুজন মসজিদে গিয়ে ইংরেজিভাষীদের কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করে শোনাতেন। মসজিদের একটি অংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। অপর অংশে পুরুষরা নামাজ আদায় করতেন। ঘটনার সময় হুসনে আরা নারীদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষে ছিলেন। সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ফরিদ উদ্দিন বর্তমানে ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে থাকলেও পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: