কলেজ সরকারীকরণের বার্তার অপেক্ষায় এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০১৯, ০২:৪৫ এএম

জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরিষাবাড়ী কলেজকে কেন্দ্র করে নতুন আশার আলো ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসান এমপি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সভা সমাবেশে তার মনোভাবকে কেন্দ্র করেই এলাকাবাসী, দলীয় নেতাকর্মী, ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক, সূধীমহলের মধ্যে সরিষাবাড়ী কলেজ সরকারীকরণের আশা এবং সম্বাবনা বিচ্ছুরিত হয়েছে।

এলাকাবাসীর গণদাবী হতাশার গন্ডি পেরিয়ে স্বপ্নের বাস্তবায়নের ঝিলিক প্রস্ফুটিত হচ্ছে। আগামী ১৬ মার্চ সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজ ক্যাম্পাসে-শিক্ষক-অভিভাবক, সূধী সমাবেশে মাননীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসান এমপিকে সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত সরিষাবাড়ী কলেজ সরকারীকরণ বাস্তবায়ন এলাকাবাসীর আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রতীক সরিষাবাড়ীর অভিভাবক প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসানের পক্ষেই বাস্তবায়ন সম্ভব বলে সাধারণ মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসের বাস্তবায়নের ঘোষণা শুনতে এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ সূধী সমাবেশে দলে দলে যোগদান করবেন বলে জানা গেছে।

জামালপুর জেলার শিল্প শহর হিসেবে খ্যাত সরিষাবাড়ী উপজেলা হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রায় ৫লাখ জনসংখ্যা অধ্যুসিত উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। উপজেলা এবং পৌরসভার উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড থেকে এলাকাবাসী গত পাঁচ বছর যাবৎ বঞ্চিত। ২০০৮ ইং সনে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর থেকে দীর্ঘ দিন উন্নয়ন বঞ্চিত সরিষাবাড়ীতে ব্যাপক উন্নয়ন করে এলাকাবাসীকে নিজের যোগ্যতা প্রমান করেন জামালপুর- (সরিষাবাড়ী) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডাঃ মুরাদ হাসান।

পরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের ফাঁদে ফেলে জাতীয়পার্টি তাদের প্রার্থী দিয়ে সরিষাবাড়ী আসন দখলে নেন। ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ থাকলেও জাপার এমপি সরিষাবাড়ীর উন্নয়নের অর্থ করেছে হরিলুট। উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে এলাকাবাসী। সরিষাবাড়ী উপজেলার হতাশাগ্রস্থ্য মানুষকে আশ্বস্থ্য করে উন্নয়নের স্লোগানে আবারো সামনে এগিয়ে আসেন উন্নয়নের রুপকার আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসান। এলাকাবাসীর স্বার্থে তিনি জাপার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন এই সংসদীয় আসন। মাঠে নামেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকার মাঝি হয়ে।

গত ২৫/১২/২০১৮ ইং তারিখে সরিষাবাড়ী আরডিএম পাইলট মডেল হাই স্কুল মাঠে অধ্যক্ষ ছরোয়ার জাহানের সভাপতিত্বে উপজেলা সম্মিলিত শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসান। সমাবেশে সরিষাবাড়ী কলেজ উন্নয়ন বঞ্চিত উল্লেখ করে প্রধান অতিথি ডাঃ মুরাদ হাসান নির্বাচনে জয়ী হলে কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর এবং সরকারীকরণ করার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ডাঃ মুরাদ হাসান পাশে বসা সরিষাবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ ছরোয়ার জাহানকে ‘সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ’ করার দৃঢ় আস্থা ব্যাক্ত করেন বলে উপস্থিত শিক্ষকরা জানান। ৩০-১২-২০১৮ ইং তারিখের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হয়ে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারুন্য নির্ভর মন্ত্রী পরিষদে গরিবের ডাক্তার খ্যাত আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।

গত ২রা জানুয়ারী সরিষাবাড়ী রেলওয়ে ময়দানে উপজেলা আওয়ামীলীগের গনসংবর্ধনায় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসান এলাকায় উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সরিষাবাড়ীকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের শেষে সরিষাবাড়ী কলেজের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ ছরোয়ার জাহান ফুলের তোড়া দেয়ার সময় প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান পাশে দাড়ানো আলহাজ মির্জা আজম এমপির নিকট দীর্ঘদিন বঞ্চিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরিষাবাড়ী কলেজকে সরকারীকরনের সার্বিক সহযোগীতা চান বলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান। এ সময় মীর্জা আজম এমপি বিষয়টি স্মিতহেসে সম্মতি দেন বলে তারা জানান।

আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সরিষাবাড়ী উপজেলায় ডিগ্রী পর্যায়ের কোন সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। সম্প্রতি একটি মাধ্যমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ হলেও সরিষাবাড়ী কলেজ বারবার বঞ্ছিত থেকেছে। ০১/০৭/১৯৬৭ সালে ১১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সরিষাবাড়ী কলেজ কোন সরকারই সরকারীকরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বান্তবায়ন করেনি।

গত ২০০৮ ইং সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রাক্কালে গত ২৬/১২/২০০৮ ইং তারিখে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কলেজ ক্যাম্পাসে এক টেলিকনফারেন্সে সরিষাবাড়ী কলেজকে সরকারীকরনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেন। টেলিকনফারেন্সে তিনি এলাকাবাসী এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমি (আওয়ামী লীগ) সরকার গঠন করলে সরিষাবাড়ী কলেজটি জাতীয়করণের ব্যবস্থা নেব ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেছেন, গোপালগঞ্জ যেমন আমার নির্বাচনী এলাকা ঠিক তেমনই সরিষাবাড়ীও আমার নির্বাচনী এলাকা। আজ (২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ইং) থেকে সরিষাবাড়ীর দায়িত্ব আমার।’ 

এ ছাড়াও গত ৩০/০৬/২০১২ইং তারিখে সরিষাবাড়ী গণময়দানে উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাকার সকল দাবী বান্তবায়নের প্রতিশ্রুতির পূণঃব্যক্ত করেন। এলাকাবাসীর বিভিন্ন দাবীর মধ্যে সরিষাবাড়ী কলেজ সরকারীকরণের দাবী ছিল অন্যতম। সমাবেশে যোগ দেয়ার আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরিষাবাড়ী কলেজ মাঠে হেলিকপ্টার থেকে অবতরন করেন। এ সময় কলেজের বাহ্যিক অবকাঠামো নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করে গণময়দানের জনসভায় যোগ দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে গত ১৮/১১/২০১৪ ইং তারিখে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ০৩.০০১.০০০.০০.০০.০৬.২০১৪-৯৮ স্মারকের মাধ্যমে) ৩২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমীপে উপআনুষ্ঠানিক পত্র দাখিল করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির তথ্য সংগ্রহপূর্বক কোন কোনটি জাতীয়করন যৌক্তিক তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন একান্ত সচিব-১ স্বাক্ষরিত তালিকায় সরিষাবাড়ী কলেজের নাম ২২ নম্বর সিরিয়ালে লিপিবদ্ধ রয়েছে। গত ৩০/১২/২০১৪ ইং তারিখে সিনিয়র সহকারী সচিবের স্বাক্ষরিত পত্রে ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের সরেজমিন প্রতিবেদন প্রেরনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।  ২২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরিষাবাড়ী কলেজের অবস্থান ২০ ক্রমিক নম্বরে। এরই প্রেক্ষিতে সরিষাবাড়ী কলেজ সরেজমিন পরিদর্শন বা ইন্সপেকশন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রনালয় উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরিষাবাড়ী কলেজকে নির্বাচিত এবং পুরস্কৃত করা হয়েছিল।

উপজেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরিয়াবাড়ী কলেজে পরিপূর্ণ অবকাঠামো রয়েছে। পর্যায় ক্রমে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিএম, স্নাতক, স্নাতকোত্তর (সন্মান) পর্যায়ের প্রায় তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। সরিষাবাড়ী কলেজে ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডিগ্রী পর্যায়ের কোর্স চালু রয়েছে। বর্তমানে অনার্স কোর্সে বাংলা, সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনুমোদন লাভ করেছে। এ ছাড়াও কলেজের বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৫টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়ে থাকে। কলেজ শাখায় ৪৬জন শিক্ষক, অনার্সের শিক্ষক ১২ জন এবং কারিগরি শাখায় শিক্ষক রয়েছেন ৫জন। এ ছাড়াও শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ২০জন।

সরিষাবাড়ী কলেজের পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক। এ ছাড়াও কলেজের অবকাঠামোর মধ্যে তিনটি দ্বিতল ভবন, দুইটি হাফ বিল্ডিং ও মসজিদ রয়েছে। রয়েছে বিশাল গ্রন্থাগার। কলেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার। ঘাট বাধানো বিরাট পুকুর এবং পাশেই শহীদ মিনার কলেজ ক্যাম্পাসকে আরও মনোরম করে তুলেছে। ছাত্রাবাসের পাশেই রয়েছে বিরাট খেলার মাঠ এবং আরও একটি পুকুর। এ ছাড়াও কলেজের রোভার স্কাউট, বিএনসিসি ও ক্রীড়ায় জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের স্বাক্ষর রয়েছে। কলেজ সরকারী করণের সকল শর্ত পূরণ করলেও এলাকাবাসীর অন্যতম দাবী আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

সরিষাবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ ছরোয়ার জাহান জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলাকাবাসীকে কথা দিয়েছেন সরিষাবাড়ী কলেজ সরকারীকরণ করা হবে। কলেজ সরকারীকরণের সকল শর্তই  পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব বলেই আমরা আশাবাদী। আমাদের অহংকার এবং গর্বের মানুষ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসান নিজেই কলেজ সরকারীকরনের চিন্তা ভাবনা নিয়ে কাজ করছেন। আমরা আশাবাদী। আগামী ১৬ মার্চ উপজেলার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা মাননীয় প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে যাচ্ছি। এ অনুষ্ঠান সফল করতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

সরিষাবাড়ী কলেজের উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, কলেজে শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক ও সুধী সমাবেশে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ডাঃ মুরাদ হাসানকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। তিনি আমাদের প্রত্যাশার বিষয় গুলো জানেন। সরিষাবাড়ী উপজেলাকে দেশের মডেল উপজেলা করার মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর অভিব্যাক্তি আমাদের প্রত্যাশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান প্রতিমন্ত্রী হয়ত আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ঘোষণা দিতে পারেন বলে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রত্যাশা করি।  

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: