সোনালি দিনের দুরন্ত এক নায়িকার নাম ‘দিতি’

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৯, ০১:৫৯ পিএম

সোনালি দিনের দুরন্ত এক অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি। নব্বইয়ের দশকে সাড়া জাগানো নায়িকাদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। সে সময় সফল চলচ্চিত্র উপহার দেওয়া অভিনেত্রীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তার মেধাদীপ্ত প্রাণবন্ত অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জয় করেছেন অগণিত দর্শক-ভক্তদের। ২০১৬ সালের এই দিনে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই নন্দিত অভিনেত্রী। সদা হাস্যোজ্জ্বল এ নায়িকার অসময়ে চলে যাওয়াটা কেউই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। সিনেপ্রেমীদের মনের মনি কোঠায় আজও তিনি রয়েছেন পছন্দের অভিনেত্রী হয়ে।

বুধবার (২০ মার্চ) নন্দিত এ চিত্রনায়িকার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দিতির গ্রামের বাড়িতে আজ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি অসহায়, এতিম, গরিব বাচ্চাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।

এদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বিশেষ আয়োজনে সোনালি দিনের অবদানকে স্মরণ রাখতেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার স্মরণসভা এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বাদ আসর সমিতির আর্টিস্ট স্টাডি রুমে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রয়াত এই অভিনেত্রী ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বিটিভিতে গান করার সুবাদে তিনি অভিনেতা আল মনসুরের নজরে আসলে তাকে ‘লাইলি মজনু’ নাটকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এতে দিতির বিপরীতে অভিনয় করেন মানস বন্দ্যোপাধ্যায়। নাটকটি জনপ্রিয়তা লাভ করলেও দিতির পরিবার থেকে তাকে অভিনয় করতে বাধা দেওয়া হয়। কিছুদিন বিরতির পর তিনি ‘ইমিটেশন’ নাটকে অভিনয় করেন। এটি প্রযোজনা করেন ফখরুল আরেফীন।

উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে পা রাখেন দিতি। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তির মুখ দেখতে পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘আমিই ওস্তাদ’। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজমল হুদা মিঠু। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে দিতি আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতেই অভিনয় করে দিতি প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দিতি আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে জুটি গড়ার মধ্য দিয়ে। পাশাপাশি প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্নার সাথে তার জুটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

হীরামতি, দুই জীবন, লেডি ইন্সপেক্টর, খুনের বদলা, আজকের হাঙ্গামা, চরম আঘাত, স্বামী-স্ত্রী, কালিয়া প্রভৃতি সিনেমায় অভিনয় করে একসময় দর্শক মাতিয়েছেন এ অভিনেত্রী। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির নাম ‘সুইটহার্ট’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন। তার অভিনীত অনেক জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে, যা এখনো এ প্রজন্মের দর্শকের কাছেও জনপ্রিয়। দিতি অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ডাক দিয়ে যাই, আমিই ওস্তাদ, স্বামী-স্ত্রী (১৯৮৭), হীরামতি (১৯৮৮), দুই জীবন (১৯৮৮), বীরঙ্গনা সখিনা (১৯৮৯), আপন ঘর (১৯৯০), স্ত্রীর পাওনা (১৯৯১), চাকর (১৯৯২), পাপী শত্রু (১৯৯৫), দূর্জয় (১৯৯৬), স্নেহের প্রতিদান (১৯৯৯), চরম আঘাত, অপরাধী, কালিয়া, চার সতীনের ঘর (২০০৫), নয় নম্বর বিপদ সংকেত (২০০৭), আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮), মেঘের পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী (২০১৩), জোনাকির আলো (২০১৪)। দিতি প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। বড়পর্দার পাশাপাশি বেশকিছু টিভি নাটকেও অভিনয় করেন দিতি।

ব্যক্তি জীবনে তিনি চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। সেই সংসারে সাফায়েত ও লামিয়া নামের দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে দিতির। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সোহেল চৌধুরী। সোহেল চৌধুরী মারা যাওয়ার পর চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করেন। সে সংসার টেকেনি। কাঞ্চনের সাথেও তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

মস্তিষ্কে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই থেকে ভারতের চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতালে নেয়া হয়। মাঝে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে সেই বছরের নভেম্বরে আবারও একই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৮ জানুয়ারি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার পরপরই তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে থাকাকালীন ২০১৬ সালে আজকের এই দিনে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন

বিডি২৪লাইভ/আইএন/এসএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: