সাজার মেয়াদ শেষেও কারাগারে ৩ ভারতীয় নাগরিক

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৩৭ পিএম

ভারতীয় তিন নাগরিক ক্লিনটন বিশ্বাস, জ্যেতিষ চৌধুরী ও আব্বাস মন্ডল। তাদের অপরাধ ছিল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশে। বিজিবি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে আটক করে পাঠায় আদালতে।

অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপরাধে আদালত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। আদালতের এই রায়ের পরপরই ওই তিন ভারতীয় নাগরিককে নেয়া হয় কারাগারে। কিন্তু অবাক হলেও সত্য অনেক আগেই তাদের সাঁজার মেয়াদ শেষ হলেও তারা কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে রয়েছে বন্দি। কারাগারে বন্দী থাকার ফলে তারা মানসিকভাবে অনেকটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন।

আটককৃতরা ভারতীয় তিন নাগরিক হল- ভারতের নদীয়া জেলার তেহট্রর কিশোরী বিশ্বাসের ছেলে ক্লিনটন বিশ্বাস (২০), হয়ালঘাট জয়জালের রাম বিকাশের ছেলে জ্যেতিষ চৌধুরী (৩৬) ও ভীমপুর রাঙ্গেরপোতার মান্দার মন্ডলের ছেলে আব্বাস মন্ডল (৩০)।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের সুপার নজরুল ইসলাম জানান, কারাগারে আটককৃত তিন ভারতীয় নাগরিক অবৈধ ভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার অপরাধে বিজিবি তাদেরকে আটক করে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করে। পরে থানা পুলিশ তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে এবং তাদের কারাগারে পাঠায়। আটককৃত ভারতীয় নাগরিক ক্লিনটন বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট থেকে বন্দি রয়েছেন। ক্লিনটনের সাজার হয় তিন মাস। তিন মাস পার হয় গত বছরের ১৪ নভেম্বর। ভারতীয় আরেক নাগরিক আব্বাস মন্ডল ২০১৮ সালের ৫ জুন কারাগারে আসেন। তারও সাজার মেয়াদ তিন মাস। সে হিসাবে গত বছরের ৪ সেপ্টম্বর সাজার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু তিনিও রয়েছে কারাগারে বন্দি।  কারাগারে সব থেকে বেশী সময় ধরে বন্দি রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক জ্যেতিষ চৌধুরী। জ্যেতিষ চৌধুরী ২০১৭ সালের ৯ জুন থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছে। আদালত জ্যেতিষকে ১ মাস সাজা দেয়ার পর মুক্তির আদেশ দেয় একই বছরের ৪ জুলাই। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সাজার মেয়াদ প্রায় ২ বছর পার হলেও জ্যেতিষ এখনও কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

ভারতীয় তিন নাগরিকের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবির পরিচালক ইমাম হাসান জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জানানোর পরই আমরা ভারতীয় বন্দি নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে ১০ দিনের সময় দিয়ে পত্র প্রেরণ করে থাকি। পরবর্তীতে বিএসএফ তাদের নাগরিককে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলেই আমরা তাদেরকে বিএসএফ এর মাধ্যমে ফেরত পাঠিয়ে থাকি।

ইতিমধ্যেই ভারতীয় তিন নাগরিকের মধ্যে ক্লিনটনকে ভারতে ফেরত পাঠানোর জন্য বিএসএফকে চিঠি দেয়া হয় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারী । চিঠিতে ক্লিনটনকে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে ফেরত পাঠানোর কথা বিজিবি পক্ষ থেকে বিএসএফকে জানানো হলেও সেইদিন ক্লিনটনকে ফেরত নেয়নি বিএসএফ।

পরবতির্তে ২৭ মার্চ ২য় দফায় বিজিবির পক্ষ থেকে ক্লিনটনকে ফেরত পাঠানোর জন্য বিএসএফকে চিঠি দেয়া হয়। আগামী সোমবার (১৫ই এপ্রিল) পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ক্লিলটনকে ভারতে ফেরত নেয়ার কথা জানিয়ে বিজিবিকে চিঠির উত্তর দেয় বিএসএফ। তবে ভারতীয় আরও দুই নাগরিককে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তেমন কোন তথ্য নেই বিজিবির কাছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জেলা লোকমর্চার সভাপতি আলমঙ্গীর হোসেন বলেন, সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরপরই আসামিকে কারাগারে রাখা মানবতা লঙ্ঘনের সমান। একজন মানবাধিকার কর্মি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি থাকবে অতি দ্রুত ভারতীয় এই তিন নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে তাদের পরিবারের কাছে যেন হস্তান্তর করা হয়।

সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে জেলা সুজনের সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন সাজার মেয়াদ শেষ হবার পর কারাগারে সাজা ভোগ করা সুশাসনের মধ্যে পড়ে না। অবিলম্বে ভারতীয় তিন নাগরিককে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেবার দাবি জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: