প্রেসক্রিপশনে ১ কেজি নাপা, যা বললেন মিটফোর্ড পরিচালক
আরেফিন সোহাগ: রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী আসেন চিকিৎসার জন্য তেমনি গত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) শাহাদাত নামের এক বছরের শিশুকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বর্হিবিভাগ আসেন পরিবারের লোকজন।
উক্ত রোগীকে দেয়া প্রেসক্রিপশন নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ রয়েছে, নাপা প্রতিদিন তিন বেলা এক কেজি করে খাওয়াতে হবে! এমন ঔষধের কথা শুনে রীতিমত হৈ-চৈ পড়ে যায় ডাক্তার মহলে। সত্যি যদি ডাক্তার এমনটি লিখে থাকেন তাহলে এটা রোগীর জন্য কাম্য নয়।
শুধু এক কেজি নাপাই নয়, একই প্রেসক্রিপশন ও একই রোগীর নামে যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ঔষধের পরিমাণ উল্লেখ করা প্রেশক্রিপশন। যেটা নিয়ে বেশ বিভ্রান্তের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। কেউ কেউ বলেছেন এটা বিকৃত মানসিকতার পরিচয়।
এমন খবরের সত্যতা জানতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে যোগাযোগ করা হয়। পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদারের সাথে একান্ত আলাপ হয় বিডি২৪লাইভ’র প্রতিবেদকের। আলাপচারিতায় তিনি বলেন নানান বিষয়ে।
ব্রায়ান বঙ্কিম বলেন, ‘প্রেসক্রিপশনটি আমি দেখেছি এবং বৃহস্পতিবার শাহাদাত নামে এক রোগীও এসেছিল সেটা সত্য। ওই দিন কোন ডাক্তার রোগী দেখেছিলেন সেটা এই মুহুর্তে বলতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘যে ডাক্তার দেখেছেন তিনি এক কেজি নাপা দিনে তিনবার লিখেছেন কিনা সেটা সঠিক বলা যাচ্ছে না। যদি সত্যি এমন লিখে থাকেন সেটা দুঃখ জনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা যদি আমাদের ডাক্তার না করে থাকে তাহলে আমি বলব যে, কোন একটি মহল আমাদের ইমেজ নষ্ট করার জন্য এমনটা ঘটাচ্ছে। একজন মেডিকেল পার্সন এমন ভাবে লিখতে পারেন না। ডাক্তারদের হেনস্তা করার জন্য এমনটা করা হচ্ছে বলে আমি মনে করছি। আগামীকাল (১৮ এপ্রিল) আমরা একটি প্রতিবাদ লিপি দিব গণমাধ্যমকে।’
প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকদের স্পষ্ট করে লিখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাইকোর্ট থেকে। আপনাদের ডাক্তাররা এই নির্দেশ মেনে প্রেসক্রিপশন লেখেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই তো লেখেনা আর লেখা সম্ভবও না। কারণ সারাদিন শত শত রোগী দেখতে হয়। তবে অনেক ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে বাংলাতে ঔষধের নাম লিখে দেন। যেনে রোগীদের ক্ষেত্রে বুঝতে সুবিধা হয়।’
প্রতিদিন শত শত রোগী দেখলে, একজন রোগী দেখার ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ মিনিট সময় পাওয়া যায়। এত অল্প সময়ে কি রোগীর রোগ নির্ণয় এবং রোগীকে প্রেসক্রিপশন দেয়া সম্ভব বলে আপনি মনে করেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্ভব, একজন রোগীকে দেখলে ডাক্তার প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারে সেই রোগী কতটা অসুস্থ। বেশি অসুস্থ মনে হলে তো ভর্তি করানো হয়। আর যদি বেশি অসুস্থ না হয় তাহলে তো ৩ মিনিট যথেষ্ট একজন রোগীর জন্য।’
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পেশাদার ডাক্তার বলেন, বর্হিবিভাগ আর জরুরী বিভাগ আলাদা। টিকেট হল বর্হিবিভাগ আর সিল মারল জরুরী বিভাগের? এত সুন্দর করে সজ্ঞানে কোন ডাক্তার চামচ এর জায়গায় কেজি লিখবে না। বর্হিবিভাগ রোগীর চাপ অনেক বেশি থাকে, তারপরেও যে ডাক্তার এত সুন্দর করে সময় নিয়ে লিখেছেন সে অন্তত এই ভুল করবে না। আর কেজি লেখাটা ডাক্তারদের কাছে স্বাভাবিক না যে রিফ্লেক্সে লিখে ফেলবে। ওইখানে কোন ডাক্তার কোন দিন কেজি লেখে নাই যে মন ভুলে লিখে ফেলছে।
মো: রুহুল নামে এক ব্যাক্তি বলেন, ‘আমাদের একটি শ্রেণি কখনই উন্নত হবে না, যাদের তৃপ্তি সবসময় ফটোশপের মাধ্যমে অন্যকে বিনা দোষে পঁচানো, বিশেষ করে চিকিৎসা পেশাজীবীর ক্ষেত্রে। একই প্রেসক্রিপশনের ৪ রকম ফটোশপ। বিকৃত মানসিকতার বাঙালি আমরা।’
এর আগে, প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকদের স্পষ্ট করে লিখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাইকোর্ট থেকে। অস্পষ্ট লেখার কারণে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দিনাজপুরে ২ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রুলও জারি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
বিডি২৪লাইভ/এএস
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: