ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:২৪ পিএম

একটি তিন কক্ষের পাকা ভবন। এর দেয়ালে দেয়ালে ফাটল। ছাদের কয়েক স্থানে ফাটল ধরেছে। ঝরে ঝরে পড়ছে কংকর ও সিমেন্টের পলেস্তারা। কখনও শ্রেণীকক্ষ চলাকালীন সময়ে ছাদের অংশ বিশেষ ঝরে পড়ছে। পাকা এই ভবন ১৯৯১ সালে নির্মিত। উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর ভবনটি ৯ বছর আগে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে।

কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকেরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই পাঠদান করছেন। বান্দরবান জেলার লামা পৌরসভার রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

&dquote;&dquote; শুধু এই বিদ্যালয়ই নয়, উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর এই উপজেলায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ১৭টি চিহ্নিত করেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। যেকোনো সময় প্রাণহানির মতো বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির অনেকে জানান, অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ এ সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে অসংখ্য আবেদন জানানো হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের লামা উপজেলা অফিস জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা গত ২/৩ বছর ধরে কয়েকবার প্রেরণ করার পরও অজ্ঞাত কারণে পুনঃনির্মাণের বা নতুন ভবন নির্মাণের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো মেরামত করে ব্যবহার করার উপযোগিতাও হারিয়েছে বলে সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়।

&dquote;&dquote;লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, লামা উপজেলায় বর্তমানে ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসকল বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছাড়া পাঠদান ও শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিকল্প কোনো ভবন নেই।

বিদ্যালয়গুলো হল-রোয়াজা পাড়া, রাজবাড়ি, ত্রিডেবা, ইয়াংছামুখ, দরদরী, দরদরী পাড়া, ফাইতং নয়াপাড়া, বটতলী পাড়া, ২নং চাম্বি, ফাঁসিয়াখালী হেডম্যান পাড়া, ঠান্ডাঝিরি, ডাম ও বাম হাতি ছড়া, লেমুপালং, কলিঙ্গাবিল, লামা আদর্শ, কম্পনিয়া, আন্ধারী জামালপুর ও শিলেরতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া বেগম, আনোয়ার হোসেন ও সুখী বড়ুয়া জানান, তাদের বিদ্যালয় ভবনের শ্রেণিকক্ষের বিমে ফাটল ধরে ধসে পড়ছে। কিছুদিন পূর্বে দুপুরের বিরতির সময় ছাদ ও বিম ভেঙে সুরকিসহ পলেস্তারা খসে পড়েছে। অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ অন্য বিদ্যালয় ভবনগুলোর একই অবস্থা। রোয়াজা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান জানান, গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয় ভবনের ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়টি শিক্ষা অফিসে বার বার জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

&dquote;&dquote;দরদরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শীতা রঞ্জন বড়ুয়া জানান, বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণের করুণ চিত্র শিক্ষা অফিসে অসংখ্যবার জানানো হয়েছে। রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহেদুল ইসলাম খোকা বলেন, লামা পৌরসভার সবচেয়ে জরাজীর্ণ স্কুল এটি।

লামা উপজেলা প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে লামা এলজিইডিতে সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কাজ চলমান ও ৯টি টেন্ডারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার চৌধুরী জানান, রোয়াজা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। তারপরও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে পাঠদান চলছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা চেয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা জরুরী ভিত্তিতে অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, লামা উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ভবনের চাহিদা ও ঝুঁকিপূর্ণের অবস্থা নিরূপণ করে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এলজিইডি নির্ধারিত নিয়মে ভবন নির্মাণ করে থাকেন। প্রশাসনের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: